• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ভাঙনে বিপর্যস্ত বাম ছাত্র সংগঠনগুলো, ছাত্রঐক্যের গুরুত্ব হারানোর শঙ্কা

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ০৮:৫৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ভাঙনে বিপর্যস্ত বাম ছাত্র সংগঠনগুলো, ছাত্রঐক্যের গুরুত্ব হারানোর শঙ্কা

দেখতে দেখতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার একদফা আন্দোলনে মাঠ শানাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আন্দোলনকে আরো জোরালো করতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ নামে একটি আলাদা মোর্চা গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গত রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলসহ ডান, বাম এবং মধ্যপন্থার ১৯টি ছাত্রসংগঠনের মতবিনিময় হয়েছে।

ছাত্রঐক্যের বৈঠক হওয়ার পর দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। প্রথমটি হচ্ছে, ২০০০ সালে তৎকালীন ছাত্রদলের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহম্মদ পিন্টু ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যে থাকা ছাত্রশিবিরকে এবারে বাদ দেয়া হয়েছে। যদিও এবার ঐক্যে জায়গা পেতে যাওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে তৎকালীন ছাত্রঐক্যে থাকা কোনো বাম ছাত্র সংগঠন নেই, একই সঙ্গে আগে না থাকলেও এবার থাকছে চরমোনাই পীরের ছাত্র সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, এবারে নয়াপল্টনে ১৯ টি দলের প্রথম বৈঠকে ছাত্র ফেডারেশন থাকলেও অন্য বাম সংগঠনগুলো ছিলো না। ধর্মভিত্তিক একাধিক ছাত্র সংগঠন থাকায় ঐক্যের বিষয়ে তারা দূরে থাকছেন। যদিও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে তারা কিছু বলছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনা সমালোচনায় ঐক্যের এই দুর্বলতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। ঐক্যে স্থান পেতে যাওয়া একাধিক সংগঠনের শক্তিমত্তা নিয়েও আছে প্রবল বিতর্ক।

প্রথম বৈঠকে না থাকলেও বেশকিছু বাম ছাত্রসংগঠনকে ঐক্যে যুক্ত করতে এক ধরণের তদবির চলছে জোড় তদবির। আবার তাদেরকে যুক্ত করতে গিয়ে শক্তি নিয়ে থাকা ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলো বাদ দেওয়ার অদৃশ্য শর্তও রয়েছে। অথচ এই বাম সংগঠনগুলোর অবস্থাই ত্রাহি। 

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক ছাত্রসংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, ঐক্যবদ্ধ এবং যুগপৎ-দুই পন্থায় আন্দোলন কর্মসূচির চিন্তা করছেন তারা। কারণ, সবমতের ছাত্রসংগঠন সবার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ক্ষেত্রে আপত্তি আছে অনেক সংগঠনের। এজন্য কেউ ঐক্যবদ্ধভাবে, আবার কেউ যুগপৎভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাচ্ছে। এই আপত্তির বড় কারন হলো ডান-বাম বিভেদ। যদিও ডান-বামদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম চায় ছাত্রদলসহ মধ্যপন্থীরা। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাম সংগঠনের অনেকে বলছেন, এই ঐক্যে অংশ নিলে ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সাথে রাজনীতি করতে হবে। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ক্যাম্পাসগুলোতে মুক্তমনা চিন্তার যে প্রতিফলন তা থেকে পিছু হটতে হবে। তাই ডান সংগঠনগুলো থাকলে ভেবে চিন্তে আগাতে হবে তাদের।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ১৯টি সংগঠন মতবিনিময়ে অংশ নিয়েছে। আরও কিছু সংগঠনের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই ছাত্রদের একটি বৃহত্তর মঞ্চ হবে।

বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর অবস্থা 

একসময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্দোলন, সংগ্রামে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রবল দাপট ছিলো। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে তাদের সেই দাপট কমতে থাকে। ডাকসু নির্বাচনে ভরাডুবি, ছাত্র ইউনিয়নে ভাঙন, কর্মী সংকটসহ নানা সমস্যায় তারা। রাজনৈতিক মহলে অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দলটি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রগতিশীল ছাত্রজোট নামে বামপন্থী সংগঠনগুলোর একটি জোট ছিল। রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেই জোট ভেঙে বিলীন হয়েছে। বিশেষ করে প্রগতিশীল জোট থেকে ছাত্র ফেডারেশন (সাকী) বের হয়ে গিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ভুক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে জোট করেন। ফলে প্রগতিশীল ছাত্রজোট আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। গত দুই কমিটিতে তদের বিদ্রোহ, পাল্টাপাল্টি, পৃথক কাউন্সিল করে দুই ভাগ হয়েছে। তেমনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টেরও দুটি সংগঠন। একটি মার্কসবাদী আরেকটি খালেকুজ্জামান হিসেবে পরিচিত। 

ছাত্র ফেডারেশনেরও দুটি সংগঠন। একটি জোনায়েদ সাকি অপরটি বদরুদ্দীন উমর। এরকম দ্বিধা বিভক্তির ফলে শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিলীন হয় যায়। একই নাম, একই আদর্শ থাকা সত্ত্বেও তারা ৩টি সংগঠন ভেঙে ৬টি হয়েছে। তারা নানা জোটে এখন বিভক্ত। 

এরকম সংকটে বামপন্থী সংগঠনগুলো তাদের প্রগতিশীল ঘরানা থেকে একটু বেরিয়ে এসে গত বছর গঠন করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট’। সেখানেও নানা মতানৈক্য, আদর্শ থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগ এবং ইগো সমস্যার কারণে তারা এক জোটে আসতে পারেনি। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, ছাত্র ফ্রন্ট মার্কসবাদী, ছাত্র ফেডারেশন বদরুদ্দীন উমর এই জোটে থাকলেও জোটের বাহিরে আছে ছাত্র ইউনিয়ন (দীপক শীল), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (খালেকুজ্জামান)। আর ছাত্র ফেডারেশন (সাকী) আগেই গণতন্ত্র মঞ্চ ভুক্ত হয়েছে। 

বর্তমানে সারাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলো বৃহত্তর জোট করছে। কিন্তু বামপন্থী-প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো তেমন আবেদন তৈরি করতে পারছে না। গণতন্ত্র ছাত্র জোট নামে কর্মসূচি করলেও তেমন কোন জমায়েত হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো অপ্রাসঙ্গিক ও অস্তিত্বহীন হওয়ার আশঙ্কায়।

বিভি/এ.জেড

মন্তব্য করুন: