‘ফেরারি জীবনে’ বিএনপি নেতা-কর্মীরা, দেড় হাজারের বেশি নেতার সাজা (ভিডিও)
তিন শতাধিক মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন মামলায় পাঁচ বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকতে হয়েছে ৭০ বছর বয়সী এই নেতাকে। ১০ বছর আগে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় তাকে তিন বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত।তার পরিবারের অভিযোগ, যেসব মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে সবগুলোই মিথ্যা। কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে অসুস্থ থাকলেও জেলখানায় প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা সাবেক এই সাংসদকে দেওয়া হচ্ছে না। অনেক লবিং করে শেষ পর্যন্ত সেই ডিভিশন নিশ্চিত করেন বলে জানান তার সহধর্মীনী সৈয়দা নাসিমা ফেরদৌসী।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে গেল বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বড় সমাবেশ ডাকে বিএনপি। কিন্তু সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেটি পন্ড হয়ে যায়। এরপরই একের পর এক গ্রেফতার হন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে শুরু হয় তাদের বিচার। বিএনপি বলছে, গত চার মাসে বিভিন্ন মামলায় প্রায় ১৭শ’ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এসব মামলার বাদী-সাক্ষী সবাই ছিল পুলিশ সদস্য। তাই মামলাগুলোতে সাজার আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলটি। রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশে মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের একেকটা জীবন যেন একেকটি ‘কষ্টগাথা’। বাবা-মা, ভাইবোন কিংবা সন্তানের ভালোবাসায় কবে সিক্ত হবেন, তাও অনিশ্চিত।
৪৫১ মামলা নিয়ে ফেরারি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। চার মামলায় সাড়ে ছয় বছরের সাজা নিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে তিনি। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর দুই মামলায় সাজা হয়েছে ৬ বছরের। গত ১৫ বছরে চার বছরের মতো তাঁকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। কবে বাসায় গেছেন, সন্তানদের আদর করেছেন, তা তিনি নিজেও বলতে পারেন না। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছ্বাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের ১৪৬ মামলার মধ্যে চার মামলায় সাড়ে আট বছরের সাজা হয়েছে। পরিবারের একমাত্র সন্তানের বয়স ৪০ পেরোলেও বিয়ে করতে পারেননি একের পর এক মামলার জটিলতায়। যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান। মামলার সংখ্যা তিন সেঞ্চুরি পার হওয়ার পর আর হিসাব রাখেননি তিনি। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় সম্প্রতি সাড়ে ১৩ বছরের সাজা হয়েছে তাঁর। মূলত ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকেই পরিবার বিচ্ছিন্ন এই নেতা।
সাড়ে তিনশ’র বেশি মামলার খড়গ নিয়ে কারাগারে আটক যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব। ৭ মামলায় তার সাজা হয়েছে ১৭ বছর। এরমধ্যে ২০১৮ সালের মামলাও রয়েছে। গত মার্চ থেকে নিরব কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। শুরুর এক মাস সাধারণ সেলে থাকলেও এর পর ফাঁসির আসামি না হয়েও তাঁকে ঢুকতে হয় কনডেম সেলে। ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরের এক মামলায় সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে ৭ বছর। ২ মামলায় প্রায় তার শাস্তি হয়েছে ১০ বছরের। এই নেতারও মামলার সংখ্যাও তিন সেঞ্চুরী। তাঁর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা লাভলী জানান, ‘প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে তিন-চার ঘণ্টা ধরে প্রিজনভ্যানে করে যেতে-আসতে হয়। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় খুব বেশি কষ্ট সইতে হচ্ছে তাঁকে এসএম জাহাঙ্গীরকে।
পুরান ঢাকার বংশালে বেড়ে ওঠা ইসহাক সরকার ছাত্রদল নেতা থাকা অবস্থায়ই কারাগার তার সঙ্গী হয়েছে। হয়েছিলেন গুমের শিকার। ৩শ’ ৩৫ টি মামলা নিয়ে গ্রেফতার এড়াতে অনেকটা পালিয়েই দিন পার করছেন তিনি। সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ৫ মামলায় সর্বোচ্চ সাড়ে ১৭ বছর সাজা হয়েছে ইসহাক সরকারের। যুবদলের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলছেন, আত্মসমর্পন নয়, দলের হাইকামান্ডের সিদ্ধান্তেই রাজপথে সক্রিয় থাকবেন।
অন্যদিকে প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের সাজা হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের। একাধিকবার কারাভোগ করা এই নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে দেড়শ’র বেশি মামলা।
বিএনপি নেতাদের একের পর এক সাজা দেয়াকে ‘পলিটিক্যাল ট্রায়াল’ দাবি করে দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলছেন, গুম হওয়া বা মারা যাওয়া ব্যক্তিদেরও সাজা দিচ্ছে আদালত।
এক যুগ আগে রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে ২১ মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত। বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় তাদের এই শাস্তি দেয়া হয়েছে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: