• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

জাতির প্রত্যাশা পূরণে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিকল্প নেই: আলী আহসান জুনায়েদ

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২১ জুন ২০২৫

আপডেট: ২১:৫৫, ২১ জুন ২০২৫

ফন্ট সাইজ
জাতির প্রত্যাশা পূরণে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিকল্প নেই: আলী আহসান জুনায়েদ

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) এর আহবায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার ডাকে জুলাইয়ে নামিনি। যে অস্ত্র-গুলি জনগণের টাকায় কেনা তা জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হওয়ার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছি। আজ রক্তের উপর দাঁড়িয়ে সরকার শহীদ ও আহতদের তালিকা করতে না পেরে ও শহীদ পরিবার এবং আহতদের ডেকে তাদের কথা না শুনে নৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া এ রাষ্ট্রে জনগণের অধিকার আদায় সম্ভব না। এ জাতির প্রত্যাশা পূরণে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিকল্প নেই। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি এই সরকারকে দিতে হবে। 

জুলাই ঘোষণাপত্র: শহীদ পরিবার ও আহতদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় (পর্ব -১১) তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিউটে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। 

আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জুলাই ঐক্যের অন্যতম নেতা আব্দুল্লাহ আল মিনহাজের সঞ্চালনায় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা করেন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) এর আহবায়ক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, আপ বাংলাদেশ এর সদস্য সচিব ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা আরেফিন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, আপ বাংলাদেশ এর মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা এবং শহীদ পরিবার সদস্যবৃন্দ ও আহতগণ।

আলোচনা সভায় কক্সবাজারের উখিয়া থেকে উপস্থিত ছিলেন একমাত্র বিদেশী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী থেকে হওয়া শহীদ নূর মোস্তফার পিতা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আপ বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও জুলাই স্মৃতি বিষয়ক কমিটির প্রধান আব্দুল আজিজ ভূঁইয়া। 

‎সভায় আলী আহসান জুনায়েদ আরও বলেন, বিচার নিয়ে ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কোনো তালবাহানা মেনে নেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ স্পষ্ট বাংলাদেশে একটি সন্ত্রাসী দল।

তিনি আরো বলেন, ১০ মাস পার হলেও শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন করা হয়নি। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুনর্বাসন করা না হয় তবে আমরা সবাইকে নিয়ে আবারো রাজপথে নেমে আসবো। শহীদ পরিবারের জন্য পাশ হওয়া সঞ্চয়পত্র যখন হাতে পাবে তখন থেকে লভ্যাংশ নয় বরং লভ্যাংশ ২০২৪ এর আগষ্টের ৫ তারিখ থেকে দিতে হবে। 

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, জুলাই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নই বাংলাদেশের পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সাংস্কৃতির পরিবর্তন শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের হাত ধরে হবে। ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) সবসময় শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের পাশে আছে। তিনি আরো যোগ করেন অতিসত্বর ডিএনএ প্রোফাইল করে গণকবর দেয়া ও অজ্ঞাত শহীদদের পরিচয় শনাক্ত করতে হবে। তিনি অতিসত্বর সবার আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জোর দাবী জানান।

‎জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কথা বলতে যেয়ে আপ বাংলাদেশ এর সদস্য সচিব আরেফিন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ বলেন, এই সরকারের প্রথম কাজ ছিলো শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম যেখানে ১৪০০ এর বেশী শহীদের কথা বলেছে সেখানে সরকার এখনো ৮৩৪ জন সংখ্যা পার হতে পারে নাই। দুটো ঈদ গেলো এই সরকারের আমলে, সেখানে সরকার প্রধান বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক দলের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করলেও শহীদ পরিবারের সাথে ঈদ পালন করতে তারা আজ ব্যর্থ। 

তিনি আরো যোগ করেন, সরকারের উপদেষ্টা পর্যায় থেকে ডিসেম্বর মাসে জানুয়ারীতে জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়ার কথা বললেও তালবাহানা করতে করতে এখন জুলাইয়ে এনেছে। জুলাইয়ে ঘোষণাপত্র দেয়ার কথা বললেও এখনো পর্যন্ত শহীদ ও আহতদের ভাবনা ও আকাঙ্খা শোনার কোনো তৎপরতা নেই। তিনি আরো বলেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল নয় জুলাই সকল শহীদ পরিবার, সকল আহত ও গত ১৭ বছরের গুম খুন ও হত্যার স্বীকার সবার আকাঙ্ক্ষার কথা শুনতে হবে তবেই জুলাই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের মানুষের আস্থালাভ করবে।

‎আলোচনায় রোহিঙ্গা শহীদ নূর মোস্তফার পিতা বলেন, শরণার্থী হলেও ভালোবাসা থেকে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করার জন্য পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছিলো। কিন্তু রোহিঙ্গা শরনার্থী হওয়ায় তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়নি। প্রতিটি সরকারি দপ্তরে গেলে বাংলাদেশের নাগরিক নয় বলে তাদের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, অথচ এই গণআন্দোলন কোনো নাগরিকত্ব দেখে হয়নি, কোনো কাগজপত্র দেখে হয়নি। 

‎সভায় শহীদ রমিজ উদ্দিন আহমেদের পিতা বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি কিন্তু বৈষম্য আজও দূর হয়নি। সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা বুক ফুলিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। আমরা চাই বিচার, আমরা চাই জুলাই ঘোষণাপত্র, আমরা চাই ইনসাফ, আমরা চাই মানুষের জন্য বাংলাদেশ। দৃশ্যমান বিচার ও সকলের প্রত্যাশার ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া আমরা অন্য কিছু আগে হতে দিবো না। 

‎আলোচনায় শহীদ নাফিসা হোসেন মারওয়ার পিতা প্রশ্ন রাখেন, আমাদের কেন সরকারের কাছে জুলাই সনদ চাইতে হবে? কেন এই হত্যাকান্ডের বিচার চাইতে হবে? এই সরকার তো ক্ষমতায় বসে আছে শহীদদের রক্তের উপর। সরকারের উচিত ছিলো নিজ দায়িত্বে জুলাই সনদ ও বিচারের ব্যবস্থা করা। তিনি দাবি করেন অতিসত্বর খুনীদের বিচার কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে ও জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। 

‎আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে আপ বাংলাদেশ এর মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন হারানোর পর সেই ত্যাগের স্বীকৃতির জন্য আবারো শহীদ পরিবারকে রাস্তায় নামতে  হচ্ছে, এটা লজ্জাজনক। সেই সাথে শহিদ পরিবার, আহতদের কোন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখনো সম্ভব হয়নি। এই সকল বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে সমাধান করতে হবে এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে অবশ্যই শহীদ পরিবার  ও আহতদের আকাঙ্ক্ষার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন থাকতে হবে।

‎সমাপনী আলোচনায় আপ বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও  জুলাই স্মৃতি বিষয়ক কমিটির প্রধান আব্দুল আজিজ ভূঁইয়া বলেন, সকল শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করে অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। জুলাইকে পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দেয়া হচ্ছে, এটা রক্তের সাথে স্পষ্ট বেঈমানী। বাংলাদেশের মানুষ তা কোনভাবে মেনে নেবে না। হত্যাকারীদের বিচার ও শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দেয়া না হলে আরেকটা জুলাই হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে সকলের প্রত্যাশার আলোকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের আহবান জানান তিনি।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: