‘জুলাই বিপ্লবীরা মূল্যায়ন পেলে আগামী প্রজন্মও ত্যাগ স্বীকারে প্রেরণা পাবে’

জুলাই শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে কথা বলছেন মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন
জুলাই বিপ্লবীদের জাতীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যথাযথ মূল্যায়ন পেলে আগামী প্রজন্মও দেশ ও জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রেরণা পাবে’
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় একটি মিলনাতনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জুলাই শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ দাবি বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব আমাদের দেশ ও জাতিকে নতুন করে জীবনী শক্তি দিয়েছে। এ বিপ্লবের প্রেক্ষাপট এক দিনে তৈরি হয়নি, বরং দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের অপশাসন-দুঃশাসনে আওয়ামী ফ্যাসীবাদীদের প্রতি জনগণ বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছিল। ফলে স্বৈরাচারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠার কারণে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। এ আন্দোলনে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ, ছাত্র-জনতাসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ ও জসীমেরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিলেন। ফলে আমরা এক চুড়ান্ত বিজয় লাভ করে দেশ ও জাতিকে অপশাসন-দুঃশাসন মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
তিনি জুলাই বিপ্লবে শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের পরিবার ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, ‘বিগত প্রায় ১৬ বছরের শাসন ছিল আওয়ামী জাহেলিয়াত। তাদের শাসনামলে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। কবর রচনা করা হয়েছিল গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের। জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে এক মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যাকে রাষ্ট্রাচারের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করা হয়েছিল। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে জাতীয় নেতাদের হত্যা করে দেশের পবিত্র জমীনকে রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করা হয়েছিল। জুলাই আন্দোলন দমাতে অগণিত মানুষকে শহীদ করা হয়েছিল। স্বৈরাচারে প্রতিহিংসায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছিলেন। অনেকে হাত, পা, চোখ হারিয়ে আজ বিকলাঙ্গ। আর তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি নতুন এক বাংলাদেশ। তাই জাতির এসব বীর সন্তানদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।’
মহানগরী উত্তর আমির বলেন, ‘যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আহতরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার জুলাই বিপ্লবে আহতদের জন্য দেশে কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা হয়নি, যেখানে শুধু বিপ্লবে আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সে হাসপাতাল হওয়া উচিত দেশের সবচেয়ে সর্বাধুনিক ও সর্ববৃহৎ। যেখানে আধুনিক চিকিৎসার সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত থাকবে।’
তিনি এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে কলেন, ‘এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সক্ষমতার ঘাটতি থাকলে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। মূলত জুলাই বিপ্লবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই তাদের যথাযথ মূল্যয়ন করতে হবে। যাতে আগামী প্রজন্ম দেশ ও জাতির জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রেরণা পান।’
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরা পশ্চিম জোন জামায়াতের সহকারী মাহবুবুল আলম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা মহিবুল্লাহ, ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, উত্তরা জোনের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল হক, উত্তরা মডেল থানা আমির অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, উত্তরা পশ্চিম থানা আমির মাজহারুল ইসলাম, উত্তরা পূর্ব থানা আমির মাহফুজুর রহমান, তুরাগ মধ্য থানা আমির গাজী মনির হোসাইন প্রমুখ।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: