পাথর লুটে জড়িতদের তালিকা প্রকাশ দুদকের, প্রতিবাদ জামায়াত-এনসিপির

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের পর্যটন এলাকা সাদা পাথরে পাথর লুটের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা প্রকাশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ তালিকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের নামের সঙ্গে রয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের নামও। দুদকের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের চার নেতা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করে করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চলছে বলে উল্টো অভিযোগ করেন তারা।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, “পাথর লুটের ঘটনার সঙ্গে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জামায়াত নেতাদের নাম জড়ানো হয়েছে। তা এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে লেখা হচ্ছে। পাথর লুটের সঙ্গে কোনো নেতাকর্মী দূরে থাক, জামায়াতের কোনো সমর্থকেরও ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।”
সম্প্রতি দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনটি কাল্পনিক দাবি করে তিনি বলেন, “ওই তালিকায় তিনিসহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা একেবারেই কাল্পনিক।”
তিনি বলেন, “তবে বৈধভাবে পাথর কোয়ারি খোলার দাবিতে সিলেটের পরিবহন মালিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের একটি কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জামায়াত নেতারাও সম্প্রতি বক্তব্য রেখেছিলেন। ওই বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে পাথর লুটের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে সিলেট জামায়াতের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তখন লুটপাটকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়।”
মহানগর জামায়াতের আমীর দাবি করেন, দুদকের প্রতিবেদনে জামায়াত নেতাদের নাম থাকার কোনো সত্যতা অন্যকোনো গণমাধ্যম পায়নি। এর আগে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, কিন্তু জামায়াত নেতা বা কর্মীদের নাম ওসব প্রতিবেদনা পাওয়া যায়নি।
তিনি দুদকের ওই প্রতিবেদনটিকে একটি ফরমায়েশি প্রতিবেদন বলে দাবি করেন। তাছাড়া প্রকৃত লুটকারীদের আড়াল করতেই এই ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ফখরুল আরও জানান, দুদক এ ধরনের কোনো রিপোর্ট দিয়েছে কি-না, তারা তা নিশ্চিত নন। দুদক যদি তাদের কোনো রিপোর্টে জামায়াত নেতাদের নাম উল্লেখ করে, তাহলে অবশ্যই তাদের তা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় দুদককে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ ব্যাপারে জামায়াত বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
জামায়াতের সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট অঞ্চলের টিম সদস্য হাফিজ আবদুল হাই হারুন, মহানগরের নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম বাবুল, জেলা সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, জেলা সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দুদকের তালিকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর নামও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সাড়ে ৪টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এনসিপি এক সংবাদ সম্মেলন করে পাথর লুটে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এনসিপির এই দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাদা পাথরে লুটের মূল অপরাধীদের আড়াল করতেই তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা সাদা পাথর ছাড়াও সিলেটের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের ক্ষতি ও লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাদা পাথরে লুটপাটের ঘটনায় এনসিপির কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নন। অথচ কিছু গণমাধ্যমে জেলা ও মহানগরের দুজন শীর্ষ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক ও দুঃখজনক।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতাদের মধ্যে জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক আবু সাঈদ, সালমান খুর্শেদ, সদস্য মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, মুফতি মাওলানা ছালিম আহমদ, মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল হক, তারেক আহমদ, মোহাম্মদ আবদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ১৩ আগস্ট সাদা পাথর এলাকায় পাথর লুটের ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাঁচ সদস্যের একটি দল। তারা কমিশনে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদাপাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আছেন। জামায়াত ও এনসিপির দুজন করে চারজন নেতার নাম রয়েছে।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: