আওয়ামী লীগের মৃত্যু ঢাকায় ও দাফন হয়েছে দিল্লিতে: সালাহউদ্দিন আহমদ
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস, ফ্যাসিবাদ কায়েমের ইতিহাস এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা ও একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের ইতিহাস। ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী বাকশালী ফ্যাসিস্ট শক্তিকে বিতাড়ন করা হয়েছে। তবে আওয়ামী বাকশালীদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঢাকায় হলেও তাদের দাফন হয়েছে দিল্লিতে। তা না হলে তারা দেশ ছেড়ে দিল্লিতে গিয়ে আশ্রয় নিতো না।’
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে সালাহউদ্দিন জানান, অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন মেজর জিয়া ঘোষণা করেছিলেন- ‘উই রিভোল্ট’। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে যেহেতু সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেজন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া যখন ভারত সফরে যান, তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ‘রিসিভ পারসন ফাস্ট ডিক্লেয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ’। তা সারা পৃথিবী জানে, সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে। কিন্তু মিথ্যা একটি টেলিগ্রাফিক মেসেজের বরাত দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সংবিধানে তফসিল ধারণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তাদের মিথ্যার রাজনীতির ভিত্তি স্থাপন করতে চেয়েছিলো। বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির চর্চাই ছিলো মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্রহীনতার রাজনীতি।’
ভালো রাজনৈতিক চর্চা করার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ভালো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা এবং চর্চার মধ্য দিয়ে আওয়ামী বাকশালীদের অপরাজনীতির সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করতে হবে। আওয়ামী রাজনীতির চিরতরে কবর রচনা করতে হবে। আমরা যদি জাতীয় রাজনীতিতে ভুল করি, গণতান্ত্রিক চর্চায় অভ্যস্ত না হই, এদেশে যদি ভালো আদর্শিক রাজনীতি স্থাপন না করি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা না করি তাহলে একদিন এই পতিত ফ্যাসিবাদীরা প্রত্যাবর্তন করতে পারে।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত ১৭ তারিখ বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালতে এদেশের মানুষের প্রত্যাশা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে একটি অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আরেকটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায় বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যার অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ সালের রক্তঝরা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে যে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছে, সেটি শুধু ৩৬ দিনের লড়াই নয়, এটি দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফল।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ‘একক কন্ট্রাক্টর’ সেজে চেতনার ব্যবসা করতে করতে বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গেছে। এখন জুলাই-আগস্টের চেতনার কথা বলে যারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের চেতনা কোনো ব্যক্তি বা দলের একক মালিকানা নয়, এটি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। চেতনার রাজনৈতিক ব্যবসা যারাই করেন, তাদের পরিণতি কখনোই শুভ হয় না।
বিভি/এআই




মন্তব্য করুন: