খালেদা জিয়ার সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে উদ্বেগ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা কেবল বাংলাদেশেই নয়, সাড়া ফেলেছে বিশ্বজুড়ে। তার অসুস্থতাকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার করছে আল জাজিরা, রয়টার্স,এএফপি, গালফ নিউজ, ডন,বিবিসিসহ বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। এসব প্রতিবেদনে উঠে আসছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার লড়াকু ভূমিকার কথা। 

‘অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তিবাংলাদেশের খালেদা জিয়া’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম ‘আলজাজিরা’। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে তারা লিখেছে, ফুসফুসজনিত জটিলতায় বর্তমানে ইনটেনসিভ কেয়ারে আছেন ৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী। 

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় খালেদা জিয়ার লড়াকু ভূমিকা, কারাবরণ ও সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে আল জাজিরা জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে দেশের সকল মানুষের জন্যই এক পরম অনুপ্রেরণার উৎস তিনি। তার আরোগ্য কামনায় দোয়া করছে দেশবাসী।

রয়টার্স শিরোনাম করেছে- ‘বাংলাদেশের বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক, নির্বাসিত ছেলে বলছেন, দেশে প্রত্যাবর্তন তার হাতে নয়’। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন এক মুহূর্তে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হলো, যখন তার রাজনৈতিক দল-বিএনপি এক সংবেদনশীল সময় পার করছে। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারও প্রভাবশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দলটি।

এএফপির বরাত দিয়ে গালফ নিউজ জানিয়েছে, খালেদা জিয়ায় অবস্থা ‘খুবই সংকটজনক’। তিনি হৃদরোগ, লিভার, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের রোগ, আর্থ্রাইটিস এবং চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তার একটি স্থায়ী পেসমেকার রয়েছে বলেও জানায় তারা। বেগম জিয়ার অসুস্থতার বিস্তারিত তুলে ধরে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস। মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ, জেরুজালেম পোস্টসহ অন্যান্য গণমাধ্যমেও এসেছে এ সংবাদ। 

পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘ডন’ ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’’ শিরোনামের সংবাদে জানিয়েছে, তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে দুর্নীতির অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পরপরই গত বছর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সংকটাপন্ন অবস্থা ধারাবাহিকভাবে বড় আকারে সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও। দেশটির প্রভাবশালী সংমাধ্যম এনডিটিভি এ নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছে। ২৯ নভেম্বর তাদের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।’ 

আরেক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে’। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ২৩ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণজনিত জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার অবস্থা ‘খুবই সংকটজনক’।  

বিএনপি নেতা আহমেদ আজম খানের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, খালেদা জিয়া বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন। চিকিৎসকদের সাথে আলোচনা চলছে, নেত্রীর অবস্থা স্থিতিশীল হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে। এ জন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।