• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘ছেলে তুষারের ট্র্যাপেই ভুল পথে হাঁটছেন উকিল আবদুস সাত্তার’

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ৩ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
‘ছেলে তুষারের ট্র্যাপেই ভুল পথে হাঁটছেন উকিল আবদুস সাত্তার’

গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের সদস্যপদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ উকিল আব্দুস সাত্তারসহ দলের সাত সদস্য। পদত্যাগের ২১ দিন পর বিএনপি ছেড়ে আবারো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে উপ-নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ সব পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ ও সরাইল) থেকেও অবাঞ্ছিত করেছে স্থানীয় বিএনপি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ ঘটনার জন্য উকিল আবদুস সাত্তারের পরিবারকেই দুষছেন। তাদের অভিযোগ, ছেলে মাইনুল হাসান তুষারের ট্র্যাপে পড়েই ভুল পথে হাঁটছেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছে। দল থেকে তিনি সবকিছুই পেয়েছেন। পদ-পদবি পেয়েছেন, এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। এখন শেষ বয়সে তিনি দলের সঙ্গে বেইমানি করছেন।

বাবা আব্দুস সাত্তারের প্রচারণা পোস্টারে ছেলে তুষারের ছবি

উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়ার ছেলে মাইনুল হাসান তুষার জানান, দল থেকে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়টি বিএনপির একান্ত দলীয় বিষয়। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, উকিল আবদুস সাত্তারকে সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। নিজের এলাকার কমিটি গঠনে তাঁর মতামত নেওয়া হয়নি। মান-অভিমানে আবদুস সাত্তার দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। স্থানীয় জনগণের চাপে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

বিএনপির পদত্যাগ করা সাত এমপির একজন জানান, সাতজনের কোনো বৈঠকে আব্দুস সাত্তার উপস্থিত থাকতেন না। কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও তাকে পাওয়া যায়নি। যখনই তাকে ফোন দেওয়া হতো তার ছেলে তুষার ফোন ধরতেন। তার বাবাকে চাইলে বলতেন, সে নামাজ পড়ে, সে অজু করে, সে ঘুমায়। এরপর যখন আমরা এমপিরা তার উত্তরার বাসায় আসতে চাইতাম তখন তুষার জানাতেন, তার বাবা নির্বাচনী এলাকায় গেছেন। অথবা ঢাকার বাইরে আছেন। এভাবে দল এবং বিএনপির এমপিদের সাথে আব্দুস সাত্তারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, উকিল আবদুস সাত্তার এ ধরনের কাজ করতে পারেন তা তাঁরা আগেই অনুমান করতে পেরেছিলেন। এ জন্য তাঁর সঙ্গে একাধিকবার বসার চেষ্টা করলেও তিনি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। ঠিকমতো ফোনও ধরতেন না। তাঁর ছেলে ফোন ধরতেন। এখনও তাই হচ্ছে। বিগত চার বছর তিনি দলের কোনো কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না। কমিটি গঠনে কোনো সমস্যা হলে, রাগ-অভিমান থাকলে দলের মহাসচিব রয়েছেন, নীতিনির্ধারক নেতারা রয়েছেন। তাঁদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারতেন। দপ্তর শাখাকেও অবহিত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কখনও এর কোনোটাই করেননি। এমনকি তিনি দল থেকে যে পদত্যাগ করেছেন বলে প্রচার হচ্ছে তাও মিথ্যা। তাঁর পদত্যাগের কোনো কাগজ দল পায়নি। তিনি কোথায়, কার কাছে দিয়েছেন তাও দল জানে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, গত ডিসেম্বরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁকে উকিল আবদুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন। তিনি যেন কোনো ভুল না করেন, সে বিষয়ে তাঁকে অবহিত করার নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী উকিল আবদুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রতিবারই তাঁর ছেলে ফোন ধরে বিভিন্ন অজুহাতে বাবাকে দিতেন না। এমনকি তাঁর বাসায় যেতে চাইলেও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাচ্ছেন বলে যেতে নিষেধ করেন।

ওই নেতা জানান, তাঁদের কাছে বার্তা ছিল- উকিল আবদুস সাত্তারের বড় ছেলে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁর বাবাকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেন। আজ সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।

স্থানীয় নেতারা বলছেন, সামনের নির্বাচনে এই আসনে সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী। তৃণমূল এবং কেন্দ্রে তিনি সমানভাবে কাজ করছেন। এলাকায়ও রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। আগামীতে উকিল আবদুস সাত্তার কিংবা তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই আসনে মনোনয়ন না পাওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। তাই ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে সরকারের তুরুপের তাস হিসেবে কাজ করেছেন।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, আবদুস সাত্তারকে নিয়ে সরকারের কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের প্রশ্নই আসে না। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সবল বলে তারা আবদুস সাত্তারকে ফ্যাক্টর মনে করে না। 

উকিল আবদুস সাত্তারের নিজ ইউনিয়ন সরাইলের পাকশিমুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সামাদ মিয়া বলেন, আবদুস সাত্তার প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে এ কাজটি সঠিক করেননি। পাশের অরুয়াইল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক উকিল আবদুস সাত্তারকে বহিস্কারে তাঁরা খুশি দাবি করে জানান, সাত্তার মীরজাফর। আমরা ধানে শীষকে ভোট দেই। ব্যক্তিকে নয়। তিনি আর এ এলাকা থেকে কোনোদিনই এমপি হতে পারবেন না।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান বলেন, লোভে পড়ে সরকারের ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছেন উকিল আবদুস সাত্তার। এতদিন যে সম্মান অর্জন করেছিলেন তা ছেলের জন্য বৃদ্ধ বয়সে হারাবেন। তাঁর ছেলেই তাঁকে শেষ পর্যন্ত ডোবাবে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার বলেন, আবদুস সাত্তার ভালো মানুষ, সজ্জন ব্যক্তি। তবে দল ত্যাগ করে যদি তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন তাহলে অতীতের পুনরাবৃত্তি নাও হতে পারে।

অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কুশপুত্তলিকা দাহ:

দলের নির্দেশনা অমান্য করে স্বতন্ত্রভাবে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার তৎপরতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ নির্বাচনী আসনের দুটি উপজেলা সরাইল ও আশুগঞ্জে পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া এবং তাঁর ছেলে মাইনুল হাসান তুষারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে স্থানীয় বিএনপি। এ ছাড়া তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সাত্তার ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন নেতাকর্মীরা।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: