• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

কোনো নারী শিক্ষার্থী যদি নিকাব না খোলেন তাতে কার কি এসে যায়? 

সুমাইয়া তাসনীম

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
কোনো নারী শিক্ষার্থী যদি নিকাব না খোলেন তাতে কার কি এসে যায়? 

প্রতীকী ছবি

একজন নারী শিক্ষার্থী যিনি নিকাব করেন তার শোনার মতো কান আছে। কথা বলার মতো জিহবা ও ভোকাল কর্ড আছে। দেখার মতো চোখ আছে। পরিচিত হওয়ার জন্য পূর্ণ একটি নাম বাবা-মা রেখেছেন এবং ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর একটি রোল নম্বরও তিনি পেয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি নিকাব করে চলেন তাহলে অন্য ব্যক্তির কি এমন এসে যায়? 

শিক্ষক মহোদয়ের নিজের চোখ, কান, কন্ঠ, জিহ্বা ও মস্তিষ্ক ঠিকঠাক থাকলে শিক্ষার্থীর নিকাব পরিধানে তাঁর সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি ক্লাসে এসে তাঁর নির্দিষ্ট বিষয় পড়াবেন, শিক্ষার্থীদের থেকে ফিডব্যাক নিবেন এটাই তাঁর কাজ। এখানে মতবিনিময়ের জন্য এক চিলতে কাপড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর কোন প্রশ্নই উঠে না। 

সমস্যাটা তখনই হয়, যখন একজন শিক্ষক শুধু ক্লাসের বিষয়ই নয় বরং জীবন পদ্ধতির সব বিষয়ে নিজের মতামত ও রীতিকে স্ট্যান্ডার্ড মনে করেন এবং এটা শিক্ষার্থীর উপর চাপিয়ে দিতে চান। আমরা সবসময়ই শুনি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা। কিন্তু আপনি যখন শিক্ষক হিসেবে আপনার জীবন-পদ্ধতিকে শিক্ষার্থীর উপর চাপিয়ে দিলেন তখনই কিন্তু আপনার মুক্তবুদ্ধি আড়ষ্ট হয়ে গেলো। অন্যকে আটকে ফেললো।

একজন শিক্ষার্থী যেমন শিক্ষককে সম্মান করবেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকেরও উচিত শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও মতামতকে সম্মান করা, যতক্ষণ না সেটি অন্যের ক্ষতি করছে। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ৪ ধরণের শিক্ষক দেখেছি-
১. একটি অংশ আপনার নিকাবের জন্য সমস্যা তো করবেনই না, বরং নিকাবের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশংসা ও সম্মান করেন। তাঁরা বোধ ও বিবেক কাজে লাগান।
২. একটি অংশ নিকাবের ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই। আপনমনে পাঠদানে ব্যস্ত। কোন সমস্যার সম্মুখীন তাঁদের পক্ষ থেকে হতে হয় না। তাঁরা চোখ, কানসহ পাঠদানে জরুরী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজে লাগান।
৩. তৃতীয় একটি অংশ নিকাবী শিক্ষার্থী দেখলে নাক সিঁটকান বরাবরই। বকাঝকা করেন। হেয় করেন। কিন্তু পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যাত্রাভঙ্গে উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।
৪. চতুর্থ পক্ষ নিকাবীদের রীতিমতো অচ্ছ্যুৎ মনে করেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানকে 'জাত গেলো টাইপ' মনে করেন। তাই যে কোন মূল্যে নিকাবীদের দমন করার জন্য টার্গেট করে যাত্রাভঙ্গের চেষ্টা করেন। সংখ্যায় বেশি না হলেও তাঁদের জোর বেশি। 

কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- প্রথম দুটি অংশ পাঠদানে সক্ষম হলে, শিক্ষার্থীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হলে পরবর্তী দুটি অংশ পারেন না। কেন? কিসের অভাব? 

অন্যদিকে, একজন নারী শিক্ষার্থীর নিকাবে কার এমন কী ক্ষতি হয় যে, তাঁকে এতটুকু সম্মান দেয়া যায় না? বারবার তাঁকে হেনস্তা করা হয়? আদালত পর্যন্ত গড়াতে দিতে হয়? প্রতি মূহুর্তে শিক্ষার্থীকে আশংকায় থাকতে হয়, কখন কী রায় আসে? 

গাছের পাতা যদি তার শিকড় থেকে আলাদা হতে চায়, তাহলে শুষ্কতায় তার মৃত্যু অবধারিত। রং ও বর্ণ হারিয়ে তখন সে নাম-পরিচয়হীন হয়ে যায়। একজন মুসলিম হিসেবে আপনার, আমার শিকড় কোথায় সেটি ভেবেই কদম ফেলা উচিত। একজন হিন্দু শিক্ষককে কখনো দেখিনি তাঁর সম্প্রদায়ের কোন শিক্ষার্থীকে টিকি, সিঁদুর, পৈতের জন্য মন্তব্য করতে, চোখ পাকিয়ে শাসাতে। 

তো আপনি ও আপনারা মুসলিম হয়ে কেন ক'দিন পর পর নিকাবী শিক্ষার্থীদের উপর কদর্য মন্তব্যবাণে জর্জরিত করেন। এইটুকু সহ্য করবার সৎসাহসটুকু হারিয়ে ফেলেন। মনের কদর্য রূপ জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। শিক্ষকের জায়গাটা অনেক উচ্চে। সেখান থেকে ধুলোয় লুটিয়ে দেন। 

যারা শিক্ষককে বাবার মতো বলে বাবাই বানিয়ে দেয়ার পুরোদমে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন,  তারা কিন্তু শিক্ষাঙ্গনের একজন অভিভাবক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন না। তো, কিভাবে হাজার শিক্ষার্থীদের বাবা হয়ে যান।
 দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেও ঘোল কখনো দুধ হয় না। না হলে মানুষ মণকে মণ ঘোলই কিনতো, দুধ নয়। 

যারা শিক্ষক নামের বাবা হবার পথে-
★ আপনাদের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে কিছু বলতে শুনলাম না, কোন লেখাও চোখে পড়লো না।
★ কখনো শুনলাম না রাস্তাঘাটে এত নোংরা ময়লা কেন?
★ কখনো বলতে শুনলাম না ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা কেন?
★ একবারও চোখে পড়েনি আপনাদের এমন কোন উদ্বিগ্ন মন্তব্য- কেন শিক্ষাঙ্গনের অব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মান, ক্লাসরুমে শিক্ষাদান পদ্ধতির উন্নয়ন ও গবেষণামূলক কাজ, প্রক্সি,  লবিং ও দুর্নীতির করালগ্রাসে নিমজ্জিত নিয়োগব্যবস্থা, হলগুলোর অনুন্নত আবাসন, খাবারের মান, পরিবেশ নিয়ে। শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলেও না। বারবার আকুতি জানালেও না। সমাধানতো দূরের স্বপ্ন। 

★হলে হাউস টিউটর ও ডিপার্টমেন্টে টিউটোরিয়াল  টিউটর থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে চাপা কষ্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের কিছুদিন পরপর আত্মহত্যা নিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কোন খবরও পেলাম না, শুনলাম না। 

★পুরো শিক্ষাঙ্গনকে উন্মুক্ত টয়লেট বানিয়ে রাখার ব্যাপারটিতেও সমাধানের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

★ অনাকাঙ্ক্ষিত কনসার্ট, সভা ও সমাবেশের বিকট শব্দ দূষণ বন্ধ করে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার কোন আবেদন শুনিনি। কোন উদ্যোগ ও ভূমিকা দেখিনি।

নিকাব ও হিজাব বন্ধ করলেই কি আপামর জনসাধারণ ও বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে নিমিষেই? নিকাবের সময়ই বাবা, বাকি সময় কোথায়? নিকাব শিক্ষাঙ্গন ও সমাজকে বাধাগ্রস্ত করছে না, তাহলে আপনি ও আপনারা কেন নিকাবকে বাধাগ্রস্ত করছেন? শিক্ষার্থীদের বিব্রত করছেন?

জাতির কর্ণধারের আসনে বসে আপনি ও আপনারা শিক্ষার্থীদের বৈষম্য শেখাচ্ছেন, বুলিং শেখাচ্ছেন, পারস্পরিক মতামতের প্রতি অশ্রদ্ধা শেখাচ্ছেন, অসহিষ্ণুতা শেখাচ্ছেন বিষয়টা একেবারেই বেমানান। আপনার চিন্তা অন্যে মেনে নিলে সেটি মুক্তবুদ্ধির চর্চা আর আমার নয়, এমন অবিচার কেন?

মুক্তবুদ্ধির চর্চা অনেক হলো, এবার দায় থেকে বোধের উন্নয়ন হোক!

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এ.জেড

মন্তব্য করুন: