• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

জীবনের আসল উদ্দ্যেশ কি?

আহসানুল ইসলাম রাকিব

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
জীবনের আসল উদ্দ্যেশ কি?

সংগৃহীত ছবি

আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসেবে সৃষ্টি করে, সুন্দর একটা জীবন দান করেছেন। এই জীবনের আসল উদ্দেশ্য কি!  আমরা যেটাকে জীবনের সফলতা মনে করি সেটাই কি প্রকৃত সফলতা! এমন কিছু প্রশ্ন আমাদের মনে প্রায়শই ঘোরপাক খায়। 

 

জীবন হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের সমষ্টি। সময় যেমন ফুরায়, তেমনি  জীবনও প্রতিনিয়ত ফুরাতে থাকে।  যেহেতু এই জীবন অনন্তকাল স্থায়ী নয়, তাই জীবনটা অর্থবহ হলেও এই জীবনের চাওয়া-পাওয়া, সুখ, সখ, সফলতা-বিফলতা, দারিদ্রতা-ধনাঢ্যতার সবই প্রকৃত অর্থে অর্থহীন। এখানে কোন কিছুই নিখুঁত না। কিছুই আমাদের মনের মত হবার নয় । আমরা যেমনটা চাই, তা পরিপূর্ণরূপে দুনিয়া আমাদের কখনোই দিতে পারবে না। কারণ, এটা দুনিয়া, জান্নাত না। জীবন এক রহস্যময় জিনিস। আপনি যাই উপার্জন করেন না কেন আপনার জীবন বৃদ্ধি পাবে না বরং জীবনমান বাড়বে। ভালো পরিবেশে থাকলে আপনি বেশীদিন বাচবেন তা কিন্তু নয়। তাহলে মানুষ ভালো লাইফস্টাইলের জন্যে দৌড়াচ্ছে। ভালো লাইফের/জীবনের জন্যে নয়। যা নিতান্তই বোকামি। 

তাহলে জীবনের আসল উদ্দেশ্য কি! 
আখেরাতের দৃষ্টিকোন থেকে একজন মানুষের জন্য তার মূল উদ্দেশ্যে কী নির্ধারণ করা উচিৎ! এবং সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তি কোথায় নিহিত আছে। তা মহান আল্লাহ পাক সুস্পষ্ট করেছেন। কারণ, সাধারণত সকলের ধ্যান-ধারণা ক্রিয়াকলাপ চিন্তা-ভাবনা সবকিছু অস্থায়ী পৃথিবীর অত্যন্ত স্বল্পকালীন আয়ুর ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে পরিচালিত জীবনের সংখ্যা অতি নগণ্য। যার প্রমাণ জীবনের উদ্দেশ্য জাগতিক ভিত্তিক। পরলৌকিক ভিত্তিক নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমের প্রত্যেকটি কার্যকলাপ, ধ্যান-ধারণা হওয়া উচিত চিরস্থায়ী জীবনকে সামনে রেখে। সে ক্ষেত্রে ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ, অসৎ কাজগুলি থেকে সরে থাকা বাঞ্ছনীয়, অথচ সে অবস্থান কতো দূরে? কিংবা বহু দূরে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন____

الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲﴾الذی خلق الموت و الحیوۃ لیبلوکم ایکم احسن عملا و هو العزیز الغفور ۙ
যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে কর্মের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।
(সূরা মূলক - আয়াত ২)

 দুনিয়া কর্মের জায়গা, আর কর্ম সেটাই যেটা উত্তম। সুতরাং আমাদের আগে জানতে হবে ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম কাজ কোনটা! অল্প শব্দে বলতে গেলে, আমরা যে যেই সেক্টরে আছি, সেখান থেকেই আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী চলা এবং নিশেধ গুলোকে বর্জন করাই ভালো কাজ। আর যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলি, আল্লাহ তা'আলা আমাদের একেক জনকে একেকটা নির্দৃষ্ট  কাজের জন্য বানিয়েছেন। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আলেম, কেউ এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বা আল্লাহ প্রদত্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। পেশাটা  মানবীয় দৃষ্টিতে ছোট অথবা বড় হোক, সবাই যদি সবার কাজ গুলো সততার সাথে করি এবং আমাদের কাজে আল্লাহকে ভয় করি। আর রাসুলের আদর্শ অনুযায়ী আমাদের চিন্তা, আমাদের দর্শন, আমাদের কর্মপন্থা হয় তাহলেই আমাদের জায়গা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জান্নাতে হবে।  
তার জীবনের প্রকৃত সফলতা এটাই! 
কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন_____
فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ
যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফল। 
(সূরা আল-ইমরান আয়াত-১৮৫)


আপাতদৃষ্টিতে যেটাকে  সফলতা মনে হয়, সেটাই প্রকৃত সফলতা নয়। দুনিয়া কর্মের জায়গা, আল্লাহ তাআলা আপনাকে যতটুকু মেধা, যোগ্যতা, এবং সফলতা দান করেছেন, তা আপনার কর্মের উপকরণ মাত্র। এটা নিয়ে অহংকারের অবকাশ নেই। এটা আল্লাহ তায়ালার একটা পরীক্ষা মাত্র। যেন আপনি এগুলোর সাহায্যে সৎকর্ম করে জান্নাতে যেতে পারেন। কিন্তু সকল দুনিয়াবী সফলতা অর্জনের পরেও যদি আপনি জান্নাতে যেতে না পারেন তাহলে সেটা আপনার প্রকৃত সফলতা নয়। 
আপনার উপরে যখন যেই দায়িত্ব  অর্পিত হয়েছে সেটা শরীয়ত অনুযায়ী সঠিকভাবে আদায় করার নামই ইবাদত। 
আর আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার এবাদত এর জন্যই। 


( مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾و ما خلقت الجن و الانس الا لیعبدون
আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।সূরা জারিয়াত -৩৬)

আশাবাদী মানুষ সব সময় সফল হয় এবং তারা তাদের লক্ষ্যকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। মুমিনের গন্তব্য এবং আসল সফলতা যেহেতু জান্নাত, তাই এই দুনিয়ার বিফলতায় হতাশ হওয়ার কোনো মানে নেই। 
মুমিনের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কর্ম করে যাওয়া। যদি রাসুলের আদর্শ অবলম্বনে কর্ম করে অস্থায়ী জীবন পার করা যায় তবে প্রকৃত সফলতা নির্ধারিত হবে স্থায়ী জীবনে। 

ইহকালীন জীবন ত্যাগের জন্য নির্ধারিত, ভোগ-বিলাসের জীবন হলো জান্নাত। যদি এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপলক্ষ  ভোগ-বিলাসীতা হয়, আর আল্লাহর সীমানা অতিক্রম করে, নিজের নফসের খেয়াল-খুশি আর চাহিদাকেই জীবনের প্রকৃত সফলতা মনে করা হয়, তাহলে মানুষ নিতান্তই হতাশ হবে। আর স্থায়ী জীবনে তার স্থান হবে চরম ব্যর্থদের সাথে। 

বলুন , নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, যিনি সমস্ত সৃষ্টিজীবের প্রতিপালক (এবং আমারো প্রতিপালক) । সূরা আল আনয়াম : আয়াত ৬২। 

আমাদের জীবন মরণ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। জীবন নামের এই কিছু সময়ের সমষ্টি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে জান্নাত লাভের উপকরণ মাত্র। জীবন ত্যাগের জন্য নির্ধারিত, সুখের জন্য নয়। তাই আমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ জান্নাত।  আর যেই কর্মের মাধ্যমে জান্নাত অর্জিত হয় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকা যায় সেই কাজে সবাইকে আহবান করা, যেমনিভাবে আমাদের রাসুল সা. করেছেন। আর আমাদের উপর আল্লাহ পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে নিরলস ভাবে সেগুলোকে আঞ্জাম দেওয়া। আমাদের ক্ষমতা, মেধা, যোগ্যতা এবং সফলতাসহ সৎ কর্ম সম্পাদনের যেই উপকরণ গুলো আমাদের দান করা হয়েছে তার যথাযথ হক আদায় করা আমাদের কর্তব্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম । 

লেখক : শিক্ষার্থী- জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, ঢাকা)

মন্তব্য করুন: