• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

সিনেমাকেও হার মানায় পঙ্গু সানোয়ারের গল্প

লড়াকু সানোয়ারের দূর দূর শুনতে ভালো লাগে না

মারুফ সরকার

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ৩ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
লড়াকু সানোয়ারের দূর দূর শুনতে ভালো লাগে না

মাথা উঁচু করে বাঁচার অদম্য এক লড়াকু সৈনিকের নাম সানোয়ার হোসেন। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের হাসনা গ্রামের আজাহার আলী শেখের ছেলে। হতদরিদ্র বাবার একার আয়ে সংসার চলে না। তাই খুব ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে শ্রমিকের কাজ করেন। একটু বড় হতেই বাবা তার বিয়ে দেন। অল্প বয়েসেই সুন্দরী স্ত্রী হাসিনা খাতুনের কোল আলো করে আসে দুই ছেলে। সংসার খরচ রেড়ে যায়। তাই সানোয়ার শ্রমিকের কাজ ছেড়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে শুরু করেন জলপাইয়ের ব্যবসা।

সংসার তার ভালই চলছিল। একদিন জলপাই পাড়ার সময় হঠাৎ গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার কোমড় ভেঙ্গে যায়। সংসারে নেমে আসে ঘোড় আমাবাস্যা। হাতের পুঁজি ও ধার দেনা করে চিকিৎসা করেও তিনি আর ভালো হন না। চিকিৎসকের ভুলে মাত্র ৩০ বছর বয়েসে তিনি চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। সংসার ও চিকিৎসা খরচ চালাতে হুইলচেয়ারে বসে শুরু করেন ভিক্ষা। দু’বছর পর দুই ছেলেকে ফেলে স্ত্রী হাসিনা খাতুন অন্যের হাত ধরে চলে যায়। সেই থেকে দীর্ঘ ১০ বছর তিনি ভিক্ষা করেন।

কিন্তু মানুষের কাছে আর হাত পাততে তার ভালো লাগে না। অবশেষে তিনি ধারদেনা আর কর্জ করে কিছু টাকা গুছিয়ে আবারও শুরু করেন জলপাইয়ের ব্যবসা। হুইলচেয়ারে বসেই তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে জলপাই গাছ কেনেন। এরপর শ্রমিক দিয়ে গাছ থেকে জলপাই পেড়ে বাগবাটি হাটে এনে সে জলপাই বিক্রি করেন। এ থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। বড় ছেলে হাসান শেখ বাবার এ অবস্থা দেখে অল্প বয়সেই রাজমিন্ত্রীর জোগালির কাজ করে। আর ছোট ছেলে শাকিল শেখ ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। 

তিনি আগের চেয়ে ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন। হঠাৎ করোনা মহামারিতে ২ বছর ব্যবসা না থাকায় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেলের দাম আকাশ চুম্বি বেড়ে যাওয়ায় তার এ সামান্য আয়ে আর সংসার চলে না। তাই তিনি আবারও গভীর সংকটে পড়েছেন। কিন্তু তিনি আর ভিক্ষা করতে চান না। তিনি চান সমাজে আর সবার মত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। কিন্তু তার নিজের কোন পুঁজি নেই। ধারদেনা শোধ করার পর তার আর কিছু থাকে না। তাই তার ব্যবসার জন্য কিছু পুঁজির দরকার।

পঙ্গু সানোয়ার হোসেন বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে পঙ্গু হয়ে হুইলচেয়ারে বসেই প্রস্রাব-পায়খানা সারি। এতে খুবই কষ্ট হয়। জীর্ণ ঘরটি দিয়েও বৃষ্টি এলে পানি পড়ে। ঘরটি মেরামত করার মতও অর্থ নাই আমার কাছে। এখন জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। তারপরেও ভিক্ষা করতে আর আমার ভালো লাগে না। 

একদিন বদলে দুইদিন একজন মানুষের দ্বারে গেলে লোকে মন্দ কয়। গালি দেয়। দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তাই ব্যবসা করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। এ জন্য আমার নগদ পুঁজির প্রয়োজন। কিন্তু নিজের কোনো পুঁজি না থাকায় ভালো করে ব্যবসাও করতে পারছি না। 

পঙ্গু সানোয়ার হোসেনের বৃদ্ধ বাবা বলেন, আমার ছেলে ভিক্ষুক না। সে কর্মঠ। খুব ছোট বেলা থেকেই কাজ করে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সে আজ পঙ্গু। তাকে কেউ আর্থিক সাহায্য করলে সে ব্যবসা করে জীবন জীবিকা চালাতে পারতো। 

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2