• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লাখ টাকায় ভাড়া হয় সার ডিলার লাইসেন্স, কৃষকদের দিতে হয় বেশি দাম

মো: ফরিদ উদ্দিন বিপু, কলাপাড়া

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ২১ মে ২০২৩

আপডেট: ১৫:৫৫, ২১ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
লাখ টাকায় ভাড়া হয় সার ডিলার লাইসেন্স, কৃষকদের দিতে হয় বেশি দাম

একই ব্যক্তির নামে একাধিক অনুমতিপত্র নিয়ে মাসচুক্তিতে ভাড়া দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ খুচরা সার বিক্রেতাদের

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিসিআইসি সার ডিলার লাইসেন্স ভাড়া দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকায়। একই ব্যক্তির নামে একাধিক অনুমতিপত্র নিয়ে মাসচুক্তিতে ভাড়া দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ কৃষকসহ খুচরা সার বিক্রেতাদের। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়াও অতিরিক্ত মূল্য গুনতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। আর কৃষকরা বলছেন, অসাধু ব্যক্তিদের সিন্ডিকেট কবলে পড়ে বছরে হাজার হাজার টাকা লোকশান গুনছেন তারা। এমনকি কৃষি বিভাগকে অবহিত করেও কোন সমাধান পাচ্ছেন না।

 

কৃষকসহ খুচরা সার বিক্রেতাদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে সরেজমিনে। উপজেলার নীলগঞ্জ  ইউনিয়নের সার বিক্রেতা সন্তোষ কর্মকার। প্রভাবশালী এক ব্যক্তির অনুমতি পত্র মাস চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘবছর ধরে সার বিক্রি করছেন। জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকারোক্তি দেন এই বিক্রেতা। জানান, তিনি মেসার্স কলাপাড়া এন্টার প্রাইজ নামের একটি অনুমতি পত্র ভাড়া নিয়ে সার বিক্রি করছেন পাখিমারা বাজারে। আর এই অনুমতি পত্র প্রাপ্ত ব্যক্তিটি পটুয়াখালীর বাসীন্দা সাজবিন সিদ্দিকা পরশমনি। মূলত এই নারীর নামে অনুমতি পত্র নিয়েই ভাড়া দেন তার স্বামী রুহুল আমিন মুন্সি। তবে মাস চুক্তিতে কত টাকা ভাড়া দেয়া হচ্ছে তা জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেন তিনি। 


এদিকে মৎস্যবন্দর আলীপুরেও একই ভাবে ভাড়া দেয়া হচ্ছে সার বিক্রির অনুমতি পত্র। মেসার্স শাহ পরান টেডার্স নামের অনুমতি পত্রটির সত্বাধিকারী ছিলেন পটুয়াখালীর বাসীন্দা মো. রতন তালুকদার। যিনি কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে স্থানীয় খুচরা সার বিক্রেতাদের অভিযোগ, শাহপরান ট্রেডার্স নামে অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিটিও ছিলেন রুহুল আমিনের মামা। তিনি কখনো আলীপুরে আসেননি। এ লাইসেন্সটিও মাসচুক্তিতে ভাড়া দিতেন রুহুল আমিন। 

লতাচাপলী ইউপির ২ নংওয়ার্ডের খুচরা সার বিক্রেতা রিয়াজ মোর্শেদ বলেন, মূলত এই বিসিআইসি লাইসেন্সগুলো বিভিন্ন নামে নিয়ে মাস চুক্তিতে ভাড়া দেন প্রভাবশালী রুহুল-আমিন। যিনি কলাপাড়ার বাসীন্দা নয়। পটুয়াখালী থেকে স্ত্রী,মামাসহ একধিক ব্যক্তির নামে অনুমতি পত্র নিয়ে ৩ থেকে চার লাখ টাকায় ভাড়া দেন তিনি। যার প্রভাব পড়ছে কৃষকদের উপরে। সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়াও অতরিক্তি মূল্য দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। অপরদিকে ওই ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের খুচরা সার বিক্রেতা খলিল খাঁন জানান, ভাড়া দেয়া লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যক্তি এখন জীবীত নেই। তবে ফের ওই ব্যক্তির পরিবারে অনুমতি পত্র নিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন প্রভাবশালী রুহুল-আমিন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। অনুমতি পাওয়ার উপযুক্ত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ডিলারশিপ দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে এবিষয়ে রুহুল-আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে অনুমতি পত্র অন্য লোক দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে দোষের কিছু নেই। পটুয়াখালীর একাধিক প্রবীন সাংবাদিকদের পরিচয় দিয়ে তার নাম রুহুল আমিন এটা মনে রাখার কথা বলেন তিনি। এছাড়া কলাপাড়ায় একটি সাংবাদিক সংগঠনে ডোনেশন দেন বলেও দাবি করেন তিনি। সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার সাথে তার সখ্যতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে নিউজ না করে নিরিবিলি সময়ে সাক্ষাতের আহবান জানান তিনি। 
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, বিসিআইসি ডিলার লাইসেন্স ভাড়া দেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি অনুমতি পত্র ভাড়া দেয়ার সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মন্তব্য করুন: