একে একে দেখা দিচ্ছে আলামত, বিশ্ব কি দাজ্জালের জন্য প্রস্তুত? (ভিডিও)
আদম (আ.) থেকে শুরু করে যত নবী-রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন, তারা সবাই তাদের উম্মতদের দাজ্জাল সম্পর্কে সাবধান করেছেন। তবে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) তার জাতিকে, অর্থাৎ আমাদের দাজ্জাল সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করে রেখেছেন কারণ শেষ সময়েই আসবে দাজ্জাল।
দাজ্জালের আগমন আর পরিচিতি সম্পর্কে মহানবী (স.) যে পরিমাণে বিস্তারিত বলেছেন তা আর কোন নবী রাসুল বলেননি। এ থেকে বোঝা যায় দাজ্জাল সম্পর্কে ধারণা রাখাটা প্রতিটা মুসলিমের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আদ-দাজ্জাল একটি আরবি শব্দ যার উৎপত্তি ‘দাজাল’ শব্দ থেকে, যার অর্থ মিথ্যা, প্রতারণা বা ছলনা। আরও নিখুঁতভাবে বলতে গেলে, সত্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে যে প্রতারণা করা হয় তাকেই ‘দাজাল’। এবং মিথ্যার যতগুলো রূপ আছে তার মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ‘দাজাল’। তাই বলা যায়, মিথ্যার যতগুলো রূপ আছে, বিশেষ করে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ, সবই থাকবে দাজ্জালের মাঝে।
দাজ্জাল আসার আগে কিছু ঘটনা ঘটবে। পৃথিবীকে প্রস্তুত করা হবে তার আগমণের জন্য। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) দাজ্জালের নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে গেছেন তার হাদিসে। যেন তার উম্মতেরা দাজ্জালকে চিনতে পারে। মহানবী (স.) তাকে আল মাসিহ আদ-দাজ্জাল বলে সম্বোধন করেন। ‘আল মাসিহ’ শব্দের অর্থ মুছে ফেলা বা নষ্ট করে ফেলা। তাকে এই নামে ডাকা হয়ছে কারণ তার ডান চোখ থাকবে নষ্ট। দেখলে মনে হবে যেন একটা আঙ্গুর থেকে সব রস শুষে নেয়া হয়েছে।
সহীহ বুখারি হাদিসে এসেছে যে, “তার কপালে আরবি হরফের ‘ক্বাফ’ ‘ফা’ এবং ‘রা’ এই তিনটি অক্ষর অর্থাৎ ‘কাফির’ লিখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত সবাই তা স্পষ্টভাবে পড়তে পারবে।” [সহীহ বুখারি]
মহানবী (স.) আরও বলেন যে তার চুল হবে কোকড়ানো, পা হবে বাঁকা। তার স্বাস্থ্য হবে খুবই শক্ত-সমর্থ। সে হবে হবে যুবক। তার শরীর শক্ত সমর্থ হলেও সে খুব বেশি লম্বা হবে না এবং তার চেহারায় একটা কাঠিন্য থাকবে। তার কপাল ও কাধ থাকবে প্রশস্ত।
দাজ্জাল পৃথিবীতে আসার আগের ৩ বছরের কথা মহানবী (সা.) বলেছেন। তিনি বলেন, “প্রথম বছর আল্লাহ আকাশকে বৃষ্টির ৩ ভাগের ১ ভাগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিবেন। দ্বিতীয় বছরে ৩ ভাগের দুই ভাগ আর তৃতীয় বছরে কোন বৃষ্টিই হবে না। অর্থাৎ মানব সভ্যতা এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাবে। এর পরই আগমণ ঘটবে তার।” [সুনান-ইবনে মাজাহ]
মহানবী (স.) বলেন যে আল্লাহ দাজ্জালকে বেশ কিছু ক্ষমতা দিবেন আর তা দিয়ে সে ফেতনা সৃষ্টি করবে। সে যাকে ইচ্ছা তাকে বৃষ্টি দিবে এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষরা দিবে। ফলে দেখা যাবে যারা তাকে অনুসরণ করছে তাদের খাদ্যের অভাব হবে না আর যারা তার পক্ষে নেই তাদের হবে প্রচুর খাদ্যের অভাব। মহানবী (সা.) আরও বলেন সে পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করবে। প্রতিটা গ্রাম, প্রতিটা শহরে যাবে আর ফেতনা সৃষ্টি করবে তবে দুইটি জায়গা বাদে। মক্কা আর মদীনা। এই দুই শহর তার জন্য নিষিদ্ধ।
দাজ্জাল পৃথিবীতে থাকবে ৪০ দিন। মহানবী (স.) বলেন, “এই ৪০ দিনের প্রথম দিনটি হবে ১ বছরের মত, ২য় দিনটি হবে এক মাসের মত, ৩য় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মতো আর বাকি দিনগুলা হবে সাধারণ দিনের মতো।” [সুনান ইবনে মাজাহ]
১ দিন কীভাবে ১ বছরের মতো বা এক মাসের মতো হয় এই নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। তখন কী পৃথিবীর আহ্ণিক গতি পরিবর্তন হবে নাকি অন্য কিছু হবে তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। তবে আমরা যতটুকু জানি তা হচ্ছে দাজ্জাল পৃথিবীতে আসবে, এবং সে হবে সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে বড় ফেতনা।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: