• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

ফজর নামাযের দশ ফযীলত

প্রকাশিত: ১১:২০, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ফজর নামাযের দশ ফযীলত

ছবি: ফাইল ফটো

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয। তবে শয়তানের ধোঁকা ও গাফলতের কারণে অনেকেই নামাযে অবহেলা করেন বা নামায ছেড়ে দেন; যা মুমিনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ। বিশেষ করে ফজর ও আসরের নামাযে বেশি গাফলতি হয়ে থাকে। মহান রাব্বুল আলামীন তাই কুরআনুল কারীমে এই দুই নামাযের প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

حٰفِظُوْا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوةِ الْوُسْطٰی.

তোমরা সকল নামায এবং (বিশেষ করে) মধ্যবর্তী (তথা আসরের) নামাযের প্রতি যত্নবান হও। -সূরা বাকারা (০২) : ২৩৮

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا.

এবং স্বীয় রবের সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকুন; সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে। -সূরা ত্ব-হা (২০) : ১৩০

এই আয়াতে গাফলতের দুই ওয়াক্ত ফজর ও আসরের নামাযের কথা উল্লেখ করে এর সবিশেষ গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।

যাইহোক, এ দুই গুরুত্বপূর্ণ নামাযের মধ্যে ফজরের নামাযের মাধ্যমে মুমিনের দিবসের সূচনা হয়। এই নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বেশ কিছু আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

এক. আল্লাহ কসম করেছেন ফজরের

প্রতি ওয়াক্ত নামাযই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফজরের গুরুত্ব অন্য সব ওয়াক্তের তুলনায় বেশি। কুরআনে কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফজরের কসম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

وَ الْفَجْرِ  وَ لَیَالٍ عَشْرٍ.

কসম ফজর-কালের। এবং দশ রাতের। -সূরা ফাজর (৮৯) : ১-২

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপরই কসম করেন। যেহেতু আল্লাহ ফজরের কসম করেছেন, তাই এটি সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে এই সময় এবং এই সময়ে আদায়কৃত নামাযের গুরুত্ব অন্য সময় ও নামাযের তুলনায় বেশি।

ফজরের নামায এবং ফজরের তিলাওয়াতের গুরুত্ব প্রকাশ করে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیْلِ وَ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ ؕ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا.

(হে নবী!) সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের সময় কুরআন পাঠে যত্নবান থাকুন। স্মরণ রাখুন, ফজরের তিলাওয়াতে ঘটে থাকে সমাবেশ। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৭৮

শায়খুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনে এ আয়াতের টীকায় লেখেন-

‘মুফাসসিরগণ এর [অর্থাৎ ‘ফজরের তিলাওয়াতে ঘটে থাকে সমাবেশ’- একথার] দুই রকম ব্যাখ্যা করেছেন :

ক. অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, ফজরের নামাযে যে তিলাওয়াত করা হয়, তাতে ফিরিশতাদের দল উপস্থিত থাকে। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা জানা যায়, মানুষের তত্ত্বাবধানের কাজে যেসকল ফিরিশতা নিয়োজিত আছে, তারা নিজেদের দায়িত্ব পালাক্রমে আঞ্জাম দিয়ে থাকে। একদল আসে ফজরের সময়। তারা দিনের বেলা দায়িত্ব পালন করে। আরেক দল আসে আসরের সময়। তারা রাতের বেলা দায়িত্ব পালন করে। প্রথম দল ফজরের নামাযে এসে শরীক হয় এবং কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শোনে। আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে।

খ. একদল মুফাসসির বলেন, এর দ্বারা মুসল্লীদের উপস্থিতি বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, ফজরের নামাযে মানুষ যেহেতু ঘুম থেকে উঠে শরীক হয়, তাই তারা যাতে ঠিকভাবে নামায ধরতে পারে, সে লক্ষ্যে নামাযে তিলাওয়াত দীর্ঘ করা বাঞ্ছনীয়।’

প্রকৃতপক্ষে ফজরের জামাতে উপস্থিত হতে না পারা বহু কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার নামান্তর। 

দুই. ফজরের জামাতে উপস্থিত হতে পারা ঈমানী শক্তির পরিচায়ক

আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنَّ أَثْقَلَ صَلَاةٍ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ، وَصَلَاةُ الْفَجْرِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا.

এশা ও ফজরের নামায মুনাফিকদের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন। তারা যদি জানত যে, এ নামাযের পুরস্কার বা সওয়াব কত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুই নামাযে (জামাতে) হাযির হত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫১

তিন. কেউ ফজরের নামায আদায় করলে সে আল্লাহর যিম্মায় চলে যায়

সাহাবী জুনদুব আলকাসরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ صَلّٰى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللهِ..

যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করল সে আল্লাহর যিম্মায় চলে গেল।... -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৭

ইমাম কুরতুবী রাহ. বলেন, فِي ذِمَّةِ اللهِ অর্থ হল-

في أمان الله وفي جواره.

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ে থাকা।

যে আল্লাহ তাআলার আশ্রয়ে থাকে, কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। -আলমুফহিম লিল কুরতুবী ২/২৮২

চার. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ، وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ، وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ، وَصَلَاةِ الْعَصْرِ، ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ، فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ: كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي؟ فَيَقُولُونَ: تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ، وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ.

ফিরিশতাগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমণ করেন। এক দল দিনে, এক দল রাতে। আসর ও ফজরের নামাযে উভয় দল একত্র হন। তারপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি যখন উঠে যান, তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় দেখে এলে? অবশ্য তিনি নিজেই বান্দাদের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত।

উত্তরে ফিরিশতারা বলেন, আমরা তাদের নামাযরত দেখে এসেছি। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাযরত ছিলো। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩২

পাঁচ. জান্নাতের সুসংবাদ

সাহাবী আবু মূসা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ صَلّٰى البَرْدَيْنِ دَخَلَ الجَنَّةَ.

যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডার সময়ের (অর্থাৎ ফজর ও এশার) নামায আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৫

ছয়. সারা রাত ইবাদতের সওয়াব 

উসমান ইবনে আফ্ফান রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ صَلّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ، وَمَنْ صَلّٰى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلّٰى اللَّيْلَ كُلَّهُ.

যে ব্যক্তি এশার নামায জামাতে আদায় করল সে যেন অর্ধরাত নামাযে দণ্ডায়মান থাকল। যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতে আদায় করল সে যেন সারা রাত নামায আদায় করল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৬

এই হাদীসটি একজন মুমিনের জন্য বিশাল সুসংবাদ। কারণ, সারা রাত ঘুমিয়ে থেকেও রাতভর নামায আদায়ের সওয়াব আমলনামায় লেখা হচ্ছে।

সাত. ফজরের নামায আদায়কারী লাভ করবে আল্লাহর দীদার

সাহাবী জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন-

كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ نَظَرَ إِلَى القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، فَقَالَ: أَمَا إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا، لاَ تُضَامُّونَ - أَوْ لاَ تُضَاهُونَ - فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا، فَافْعَلُوا، ثُمَّ قَالَ: وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا .

আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা অচিরেই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদ দেখতে পাচ্ছ। তোমরা আল্লাহকে দেখতে কোনো প্রকার ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। যদি এ নিআমত লাভ করতে চাও, তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামাযের (অর্থাৎ ফজর ও আসরের) প্রতি যথাসাধ্য যত্নবান হও (কোনো প্রকার গাফলতের শিকার হয়ো না এবং শয়তানের কাছে পরাস্ত হয়ো না)।  অতঃপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনে কারীমের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন-

وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا.

[এবং স্বীয় রবের সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকুন- সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে। -সূরা ত্ব-হা (২০) : ১৩০] -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৫১

যেহেতু নফস ও শয়তানের সাথে অনেক মুজাহাদা করে একজন মুমিনকে এই দুই ওয়াক্ত নামায আদায় করতে হয়, তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন; আল্লাহর দীদার লাভের পুরস্কার! বান্দা আপন রবকে দেখতে পাবে- এর চেয়ে বড় পাওয়া ও বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে। এ পুরস্কার লাভের জন্য তো বান্দা যেকোনো কষ্ট স্বীকার করতেও রাজি।

আট. জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা

উমারা ইবনে রুআইবা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلّٰى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا- يَعْنِي الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ.

যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামায আদায় করে সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৪


ففَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ.

যাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিয়ে জান্নাতে দাখিল করা হল সে-ই সফলকাম হল। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮৫

নয়. দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝের সবকিছুর চেয়ে দামী কিছু পাওয়া

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا.

ফজরের দুই রাকাআত নামায (আমার কাছে) দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু আছে সবকিছু থেকে উত্তম। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৫

দশ. কিয়ামতের দিন নূরপ্রাপ্তির সুসংবাদ

আখেরাত জীবনের কঠিন কঠিন ঘাটি পার হওয়ার জন্য প্রয়োজন নূর ও আলোর। রাতের শেষ অন্ধকারে আদায় করা এই নামায আমার জন্য শেষ দিবসের আলো হবে; যা আমাকে জান্নাত পর্যন্ত পথ চলতে সাহায্য করবে; যা না হলে আমি সেখানের অন্ধকারে হারিয়ে যাব। যদি নূরের অধিকারী হতে পারি, তাহলেই পৌঁছতে পারব পরম কাক্সিক্ষত জান্নাতে।

বুরায়দা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

অন্ধকারে পায়ে হেঁটে (ফজরের নামায আদায় করতে) মসজিদে গমনকারী ব্যক্তিদেরকে সুসংবাদ দাও- কিয়ামতের দিন তাদেরকে পরিপূর্ণ নূর দান করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫৬১; জামে তিরমিযী, হাদীস ২২৩
 

বিভি/এমআর

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2