ইসলামে নারীর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি
সমান অধিকার নয়, ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে ইসলাম

পৃথিবীর সৃষ্টি কয়েক লাখ বছর হলেও মানব সৃষ্টির ইতিহাস ১০-১১ হাজার বছরের। আল্লাহ মানব সৃষ্টির পর পুরুষ ও মহিলাকে আলাদা কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিছু আমল মহিলা-পুরুষ একসাথে সমানভাবে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ পুরুষকে, আবার কিছু ক্ষেত্রে মহিলাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এভাবে দুনিয়ার শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন। মা হিসেবে নারীদের আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। মায়ের আনুগত্যের মধ্যে সন্তানের বেহেশত। তবে, জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। সবার যদি সমান অধিকার হয় দুনিয়ায় শান্তি-শৃঙ্খলা থাকবে না। ইসলামে মহিলাদের ওপর পুরুষদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একারণে আগে মহিলা সৃষ্টি করেননি, আগে সৃষ্টি করেছেন পুরুষ। এভাবে যাতে জন্মগতভাবে পুরুষের কর্তৃত্ব মহিলাদের ওপর থাকে।
আবার নেক আমলসহ কিছু ক্ষেত্রে উভয়কে সমান মর্যাদা দিয়েছেন। আর কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন, বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে। পুরুষ গর্ভধারণে অক্ষম। এভাবে আল্লাহপাক যে যতটুকু পাওয়ার, তাকে ততটুকু ন্যায্য অধিকার দিয়েছেন। সবক্ষেত্রে সমান অধিকার দিতে গেলে তা ন্যায্য না হয়ে জুলুমের অর্ন্তভুক্ত হবে। যেটা মহিলা পারবে না সেটা তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যেমনি অন্যায়, তেমনি যেটা পুরুষ পারবে না সেটাও তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়।
আল্লাহপাক মা-বাবার খেদমতের ক্ষেত্রে মা-কে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবীরা কার সাথে ভালো আচরণ করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মহানবী আল্লাহর নির্দেশনায় পরপর ৩ বার বললেন, তুমি তোমার মায়ের সাথে ভালো আচরণ করো। চতুর্থবারে বাবার সাথে ভালো আচরণ করার কথা বলেন। আচরন ও সেবার ক্ষেত্রে মা-কে প্রাধান্য দিয়েছেন। বিশেষ করে মায়ের নাফরমানি আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
হাদীসে আছে, মায়ের নাফরমানি তোমাদের জন্য হারাম। মা-বাবার নাফরমানি কবিরা গুনাহর অর্ন্তভুক্ত। জাহেলি যুগে নারীদের ভোগের পণ্য মনে করা হতো। নারীর কোন মর্যাদা ছিল না। কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতো। সেটা তোমাদের জন্য হারাম। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা হারাম। প্রতিটি ধর্মে তাদের অবহেলা করা হতো। ইসলাম সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছে নারীদের।
সুরা নিসা’র প্রথম আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে পৃথিবীর সকল মানুষ। তোমার আল্লাহকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একব্যাক্তি আদম (আ:) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তারই থেকে তার স্ত্রী হাওয়া (আ:)-কে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয় থেকে পৃথিবীতে মানবজাতিকে সম্প্রসারণ করেছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার উছিলায় তোমার একে একে অন্যের কাছে নিজেদের হক চেয়ে থাকো। আত্মীয়দের অধিকার খর্ব করাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’ এভাবে আজ আমরা দুনিয়াতে কোটি কোটি মানুষ দেখতে পাচ্ছি।
মহানবী সর্বপ্রথম নারীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেন। তিনি সতর্ক করেন, কোনো কন্যাশিশু জন্ম নিলে অসম্মানবোধ করবে না। সন্তান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছেলে সন্তান যেমনি দেন, তেমনি মেয়ে সন্তানও দেন। কাউকে ছেলে সন্তান দেন। যেমন ইব্রাহিম (আ:)-কে দিয়েছেন। আবার কাউকে মেয়ে সন্তান দেন। লুত (আ:)-কে কন্যা সন্তান দিয়েছেন। আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা:)-কে ছেলে-মেয়ে উভয় সন্তান দিয়েছেন। আবার কিছু মানুষ আছে, যাদের কোন সন্তান দেন না। যেমন ইয়াহিয়া (আ:) এর কোন সন্তান ছিল না। ইছা (আ:)-এর কোন সন্তান ছিলো না।
জাহেলি যুগে ছেলে সন্তান হলে খুশি, মেয়ে সন্তান হলে পেরেশানিতে পড়তো। ঘর থেকে বের হতো না কয়েকদিন। জাহেলি যুগের সেই প্রথাকে বিলুপ্ত করেছে ইসলাম। আল্লাহপাক নবীর মাধ্যমে মেয়ে সন্তানকে জীবিত থাকার অধিকার দিয়েছেন। সাথে কন্যার বাবা হওয়াকে নেয়ামত বলেছেন। কন্যাশিশুর জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেন। যার ৩টি কন্যা সন্তান হলো। তাদের লালন পালন করে বিয়ের ব্যবস্থা করলো। তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। একটি কন্যা সন্তানের ব্যপারেও একই সিদ্ধান্ত। এমনকি বোনকে লালন-পালন করে বিয়ের ব্যবস্থা করলেও একই পুরষ্কার রয়েছে। ছেলের ব্যাপারে রাসূল (সা:) বলেননি, মেয়ে ও বোনের ব্যাপারে বলেছেন। কারণ, তারা দুর্বল। সেই কারণে তাদের লালন-পালনের ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
এর এর্থ এই নয় যে, আপনার রিজিক থেকে মেয়ে ও বোনকে খাওয়াচ্ছেন। তাদের রিজিক আল্লাহ আপনার আয়ের মধ্যে দিয়েছেন। তাদের জন্য আপনার রিজিকে আল্লাহ বরকত দিয়েছেন। তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে ওই পরিমাণ রিজিক আপনার কাছ থেকে সরে যাবে।
কোরাআনে আল্লাহপাক বলেছেন, বিবিরা তোমাদের পোশাক, তোমার তাদের পোশাক। অর্থাৎ, একজনের সাথে অপরজনের গভীর সম্পর্ক।মহানবী বলেছেন, বিবিরা বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি। সুতরাং, তোমার যদি সেটাকে সোজা করতে যাও, সেটা ভেঙে যাবে। আবার ছেড়ে দিলে, আরো বেশি বাঁকা হয়ে যাবে। তাহলে সেখানে তোমাদের ছাড় এবং শাসন দুটোই করতে হবে।
বিবি হিসেবেও নারীদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ঘরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলো, যে বিবির কাছে শ্রেষ্ঠ। বিবি যদি বলে আমার স্বামী ভালো, এটাই বড় সার্টিফিকেট। বিবির জন্য রোজকার করা রিজিকে আল্লাহ লোকমায় লোকমায় নফল সওয়াব দিবেন। নবীর মাধ্যমে আল্লাহপাক বিবির হক বর্ণনা করেছেন। কেউ যদি মোহর উল্লেখ নাও করে অটো মোহর ওয়াজিব হয়ে যাবে। নিজের বোন-কিংবা ফুফুর সমপরিমানে।
সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মর্যাদায় কারো উপরে কারো স্থান নীচে। নারী সংস্কার কমিশন ৩১৮ পৃষ্টার প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেখানে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের সমান অধিকার, উত্তরাধিকার আইনে সমান অধিকার এবং শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশসহ ১০ জায়গায় ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে।
নারী-পুরুষের সমান অধিকার। সূরা নিসায় আছে: অর্থাৎ পুরুষ মহিলার দ্বিগুণ পাবে। ওরা যদি এখানে সমান অধিকার চায় তাহলে তাদের এটাও করা উচিত বিয়ে করার সময় নারীরা মোহরানা পাবে না। ওখানে সমান অধিকার হলে মোহর পাবে কেন? নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেওয়া জুলুম। কারণ: ইসলামে নারীদের কোন খরচের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বরং, নারী যদি কোটিপতিও হয় তার অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের দায়িত্ব স্বামীর।
কিন্তু ছেলে গরীব হলেও তার স্ত্রীর খরচ বহনে বাধ্য। নাবালক ছেলে-মেয়ের খরচ বহন করবেন পিতা। আবার নিজের খরচও বহন করতে হবে। আপনি ধনী-গরীব যাই হন, একজন পুরুষের এই চারজনের খরচ বহন করা ফরজ। এরপর আপনি ধনী হলে মা-বাবা, ভাই-বোন গরীব হলে তাদের সহযোগিতা করা জরুরি।
অনেক সময় দেখা যায়, মোহরানায় সম্পত্তির অধিকার থেকে বেশি পাচ্ছে। সেই কারণে ইসলাম সমান অধিকারের কথা বলে না। ইসলাম ন্যায্য অধিকারের কথা বলে। অর্থাৎ যার যা হোক, সেটা দেওয়াই হলো ন্যায্য অধিকার। ধরুন, আপনি দান করেছেন। একটি পরিবারে দুইজন, অন্য পরিবারে সাতজন সমস্য। তাদের সমান দান করলে হলো? ন্যায্য হলো যার পরিবারে লোক বেশি তাকে বেশি দেওয়া। তাদের ইসলামের জ্ঞান না থাকার ফসল যৌনকর্মীকে শ্রমিকের অধিকার দেওয়ার সুপারিশ। ইসলামে কেয়ামত পর্যন্ত ব্যাভিচার হারাম।
দত্তক শিশুকে আসল শিশুর মর্যাদা দেওয়া ইসলামে বৈধ নয়। ছেলে-মেয়ে লালন-পালন করা জায়েজ। রাসূল(সা:) জায়েদ বিন হারেছা-কে লালন-পালন করেছেন। লোকজন বলতো, জায়েদ বিন মুহাম্মদ। কিন্তু, আল্লাহপাক কোরআনের আয়াত নাজিল করে বলেছেন, জায়েদ বিন মুহাম্মদ বলা যাবে না। আসল বাবার নাম ধরে তাকে জায়েদ বিন হারেছা ডাকতে হবে। কেউ কোনো শিশু লালন-পালন করলে তার পিতার নামে পরিচিত হবে, পালক পিতার পরিচয়ে নয়। সম্পদের অধিকারও পাবে না। কিছু দিতে হলে তাকে জীবিতাবস্থায় দিতে হবে। অছিয়ত করলের পাবে তিনভাগের একভাগ। বাবা ডাকতে পারবে। কিন্তু, পরিচয়ের ক্ষেত্রে তার আসল বাবার নাম লিখতে হবে। সুতরাং, নারী সংস্কার কমিশনের ৩১৮পৃষ্টার প্রতিবেদনের ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বাদ দেয়া দরকার।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: