গুজব ও অপবাদ রটানো বড় গুনাহ, রয়েছে কঠিন শাস্তির বিধান

প্রতীকী ছবি
ইসলামের বিধানে নানা গুনাহের বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে। উল্লেখিত বড় গুনাহসমূহের অন্যতম হলো— গুজব ও মিথ্যা অপবাদ রটানো। এটি মানুষের হক সম্পর্কিত গুরুতর গুনাহ। গুজব ও মিথ্যা অপবাদ মানুষের সম্মান নষ্ট করে, অনৈক্য ও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
কোরআনে গুজব ও মিথ্যা রটানোর ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে এবং যেকোনো খবর যাচাই করে প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো, যাতে তোমরা অজান্তে কোনো সম্প্রদায়কে কষ্ট না দিয়ে বসো এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত না হও। (সুরা হুজুরাত: ৬)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে সংবাদ যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে সমাজে মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে না পড়ে এবং মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
একাধিক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গুজব ছড়ানোর ব্যাপারে সাবধান করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষ যা শোনে তাই যাচাই ছাড়া বর্ণনা করা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (সহিহ মুসলিম: ১)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, অনেক কথা মানুষ সত্য কিনা তা যাচাই না করে মানুষের মাঝে প্রচার করে শুধু হাস্যরসের জন্য, অথচ এই কাজই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য যথেষ্ট। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯০)
এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট যে, অপবাদ ও গুজব ছড়ানোর কারণে আখেরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
অপবাদ দিয়ে মানুষের সম্মান নষ্ট করার ব্যাপারে সাবধান করে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দেয় এবং তার সম্মানহানি করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ করবেন। (সুনানে নাসাঈ: ৪০০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩০২৯)
বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে নবিজি (সা.) মানুষের জীবন ও সম্পদের মতো সম্মান নষ্ট করাকেও হারাম ঘোষণা করেন। নবিজি (সা.) বলেন, হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন দিন? সমবেত সাহাবিরা বলেন, সম্মানিত দিন। তিনি বলেন, এ মাসটি কোন মাস? সাহাবিরা বলেন, সম্মানিত মাস। তিনি বলেন, এ শহরটি কোন শহর? সাহাবিরা বলেন, সম্মানিত শহর। এরপর নবিজি (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আপনাদের পরস্পরের কাছে পরস্পরের রক্ত, সম্পদ ও মর্যাদা সম্মানিত (নষ্ট করা হারাম), যেমন সম্মানিত এই দিন, এই মাস ও এই শহর। (সহিহ বুখারি: ১৭৩৯)
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হওয়ার কারণে এগুলোকে ব্যবহার করে মানুষকে অপবাদ দেওয়া, গুজব ছড়ানো সহজ হয়ে গেছে, যা মানুষের মধ্যে অস্থিরতা, ভুল বোঝাবুঝি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আমাদের সবার কর্তব্য এ ব্যাপারে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া। কোনো সংবাদ শুনলে তা যাচাই না করে প্রচার করা থেকে বিরত থাকা।
গুজব ও অপবাদ ছড়ানো আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তির কারণ হতে পারে, তা যেন আমরা ভুলে না যাই।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: