• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সন্দেহ-গুজব-অপবাদ, ইসলামে এসবের ভয়াবহ শাস্তির বিধান

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
সন্দেহ-গুজব-অপবাদ, ইসলামে এসবের ভয়াবহ শাস্তির বিধান

ইসলামে ন্যায়বিচার (আদল) একটি মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যা সামাজিক, অর্থনৈতিক, বিচারিক ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতিরিক্ত সন্দেহ, গুজব, অপবাদ ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, যতক্ষণ না কোনো ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হয়, ততক্ষণ তাকে অযথা সন্দেহ করা, অপরাধী বলা বা শাস্তি দেওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এতে নিজেই অপরাধী গণ্য হবেন।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যার জিনিস চুরি হয়, সে ধারণা ও অনুমান করতে করতে চোরের চেয়েও অগ্রসর হয়ে যায়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ১৩০১) 

ইসলামে সন্দেহ করাটাই অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ।’ (সুরা হুজরাত: ১২) 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘মন্দ ধারণা থেকে দূরে থাকো। কেননা, মন্দ ধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’ (তিরমিজি: ১৯৮৮) 

গুজব যাচাই বাধ্যতামূলক
আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন- ‘হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও।’ (সুরা হুজরাত: ৬) ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৬) ‘সব শোনা কথা প্রচার করা ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ: ৪৯৯২)

অপবাদের ভয়াবহ পরিণতি
অপবাদ হলো মিথ্যার সর্বোচ্চ পর্যায়। আল্লাহ সচ্চরিত্রবান নারীদের অপবাদদাতাদের সম্পর্কে বলেন- ‘নিশ্চয়ই যারা... ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩) ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ।’ (সুরা নুর: ১৫) রাসুল (স.) বলেন- ‘একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় জ্ঞান করে।’ (মুসলিম: ৬৪৩৫)

অপরাধ প্রমাণের কঠোর শর্ত
ইসলামে অপরাধ প্রমাণে কঠোর ও নির্ভরযোগ্য শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, চারজন প্রত্যক্ষদর্শী (চোখে দেখা সাক্ষী) ছাড়া এ অভিযোগ প্রমাণযোগ্য নয়। (সুরা নিসা: ১৫) অন্যান্য অপরাধে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ থাকা আবশ্যক। যেমন: সাক্ষ্য, দালিলিক উপাদান বা দৃঢ় স্বীকারোক্তি এবং প্রমাণ ছাড়া কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করা নিষিদ্ধ।

আখেরাতে ভয়াবহ পরিণতি
অপবাদকারী কেয়ামতের দিন ‘মুফলিস’ (নিঃস্ব) হিসেবে উপস্থিত হবে। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ক্ষমা না নিলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন না। অত্যাচারিত ব্যক্তির গুনাহ অপবাদকারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এর পরিণতি হতে পারে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

আমাদের করনীয় 
কোনো ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ হলে হুটহাট সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাকে জানানো উচিত। গুজব প্রচার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সদয় হওয়া। নিজের জিহ্বা ও ধারণার ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিনা প্রমাণে সন্দেহ, গুজব প্রচার ও অপবাদ দেওয়ার মতো ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। 
 

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: