সূর্যগ্রহণে রসুল (সা.) যে আমল করতেন

সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ একটি মহাজগতিক ঘটনা। এটি আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ নিদর্শন। তাঁর নির্ধারণ করা প্রকৃতির নিয়মেই ঘটে। সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়। দুনিয়ার কারো জন্ম-মৃত্যু বা বিশেষ কোনো ঘটনার কারণে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় আমাদের নবীজীর (সা.) চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতো। তখন তিনি সাহাবীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন। কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছেলে ইবরাহিমের মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ হলে সাহাবিরা বলাবলি করছিলেন যে, নবিজির (সা.) ছেলের মৃত্যুর কারণেই এমনটা ঘটেছে। নবিজি (সা.) সাহাবিদের এই ধারণা সমর্থন করেননি। তিনি সাহাবিদের নিয়ে সালাতুল কুসুফ বা সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায় করেন এবং বলেন, এটা আল্লাহর নিদর্শন, কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ হয় না।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হলো। সূর্যগ্রহণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুত মাসজিদে গেলেন এবং সবাইকে মাসজিদে যেতে বললেন। তারপর সবাইকে নিয়ে নামাজে দাঁড়ালেন এবং নামাজ অনেক দীর্ঘ করলেন। জামাতের নামাজ তিনি এত দীর্ঘ করতেন না। নামাজ শেষ হতে হতে সূর্যগ্রহণ শেষ হয়ে গেল। আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবিদের সামনে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসার পর বললেন, ‘সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর অগণিত নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন, কারো মৃত্যু কিংবা জন্মগ্রহণের ফলে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না। তাই যখন তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবে তখনই আল্লাহকে ডাকবে, তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করবে এবং নামাজ আদায় করবে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
সুতরাং সূর্যগ্রহণের সময় আমাদের কর্তব্য আল্লাহকে স্মরণ করা, নামাজ আদায় করা এবং জিকির ও ইস্তিগফারে মগ্ন থাকা। সূর্যগ্রহণকে আল্লাহ তাআলার নিদর্শন মনে করা এবং কোনো রকম কুসংস্কারে বিশ্বাস না করা।
সূর্যগ্রহণের নামাজ কীভাবে পড়তে হয়?
আরবিতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘সালাতুল কুসুফ’ বলা হয়। দশম হিজরিতে যখন পবিত্র মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়, রাসুল (সা.) ঘোষণা দিয়ে লোকদের নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাসহ সব রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকালে মুমিনদের করণীয় হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে একত্র হয়ে সালাত আদায় করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।
এ সালাত আদায় করা নফল। এই নামাজে আজান ও ইকামত দিতে হয় না। তবে লোকজন ডাকার জন্য ‘আস-সালাতু জামিয়া’ (নামাজ সমাগত) বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে ডাকার অবকাশ রয়েছে। সমাবেশস্থলে জুমার নামাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমাম উপস্থিত থাকলে তিনি সূর্যগ্রহণের সালাত জামাতে আদায় করাবেন। আর ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকলে একা একা সালাত আদায় করা যাবে। এ সালাত অন্য সালাতের চেয়ে অধিক দীর্ঘ হওয়া উচিত। রাসুল (সা.) এ সালাতের কিরাত, কিয়াম, রুকু, সিজদাসহ অন্য আমলগুলোও অনেক দীর্ঘ করেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সালাতে কিয়াম, রুকু ও রুকু থেকে দাঁড়ানো অবস্থা অত্যধিক দীর্ঘায়িত করেছেন। এমনকি কিয়াম অবস্থায় প্রায় সুরা বাকারা তিলাওয়াত করার মতো সময় অতিবাহিত করেছেন এবং রুকু থেকে দাঁড়িয়ে এর চেয়ে তুলনামূলক কম সময় অবস্থান করেছেন। আর দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের চেয়ে ছোট করেছেন।
তিনি কিয়ামের মধ্যে কিরাত ছাড়াও তাসবিহ, তাহলিল, তাকবির, তাহমিদ, দোয়া পড়েছেন বলে অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে। সালাত আদায় শেষ হলে সূর্য পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত দোয়া করতে হয়। হানাফি মাজহাবে অন্য সালাতের মতো এ সালাতেও প্রতি রাকাতে একটি মাত্র রুকু আদায় করতে হয়। শাফিয়ি মাজহাবে প্রতি রাকাতে দুটি রুকু করতে হয়।
অবশ্য হাদিসের বর্ণনাগুলোতে এ সালাতে রাসুল (সা.) দুই বা ততোধিক রুকু করেছেন বলেই উল্লেখ রয়েছে। এ সালাতের রাকাত সংখ্যা দুই। তবে চার রাকাত বা তার বেশিও আদায় করা যায়।
সে ক্ষেত্রে প্রতি দুই বা চার রাকাতের পর সালাম ফিরাতে হবে। সালাতের শেষে কোনো খুতবা পড়তে হয় না। কোনো কোনো বর্ণনায় রাসুলের (সা.) খুতবা পাঠের কথা বর্ণিত থাকলেও তা সালাতের সংশ্লিষ্ট হিসেবে নয়; বরং তা ছিল ‘গ্রহণ’ সম্পর্কে জাহিলি যুগের ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের জন্য দেয়া বিশেষ বিবৃতি। (আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি)
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: