• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

মুসলিম কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেছিলেন বিবেকানন্দ, যে ভাবে বাংলায় শুরু হল কুমারী পুজো

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৩ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ২০:১৬, ৩ অক্টোবর ২০২২

ফন্ট সাইজ
মুসলিম কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেছিলেন বিবেকানন্দ, যে ভাবে বাংলায় শুরু হল কুমারী পুজো

আজও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় কুমারী পুজোর চল রয়েছে । প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় মহাষ্টমী পুজোর শেষে বা নবমীতেও এই পুজো হয়ে থাকে। তবে কেবল দুর্গাপুজো নয়, জায়গা বিশেষে জগদ্ধাত্রী পুজো, অন্নপূর্ণা পুজো, এমনকী কালি পুজোতেও কুমারী পুজোর চল রয়েছে। বাংলায় এই পুজোর চল বহুদিনের। পশ্চিমবঙ্গ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট-এ কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে। বেলুড় মঠের কুমারী পুজো অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। স্বয়ং স্বামীজি নিজের হাতে সেখানে কুমারী পুজোর সূচনা করে গিয়েছিলেন।

কুমারী পুজোর শুরু ঠিক কবে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে শাস্ত্রমতে কোলাসুর নামে এক অসুরের উৎপাতে স্বর্গ দেবতাদের হাতছাড়া হওয়ার জোগাড় হয়। তখন দেবতারা মহাকালীর স্মরণাপন্ন হন। দেবতাদের সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী নতুন জন্মে কুমারীরূপে আবির্ভূত হন, এবং কোলাসুর বধ করেন। মহাভারতে অর্জুনের কুমারী পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৃহদ্ধর্মপুরাণেও এই পুজোর উল্লেখ রয়েছে। তবে সেখানে বলা হচ্ছে, দেবতাদের স্তবে দেবী কুমারী রূপেই দেবতাদের দর্শন দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণেও বিস্তৃত উল্লেখ রয়েছে এই কাহিনির। তবে পণ্ডিতেরা মনে করেন, কুমারী পুজো দুর্গাপুজোর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে তান্ত্রিক মতের প্রভাবে। এক সময় সমস্ত শক্তিপীঠ গুলিতে এই কুমারী পুজোর রীতি ছিল। এমনকী শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারীর উল্লেখ পাওয়া যায়।

যোগিনীতন্ত্রে কুমারী পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে একবার ব্রহ্মার শাপে বিষ্ণুর শরীরে পাপ বাসা বাঁধে। সেই পাপ থেকে মুক্তি পেতে বিষ্ণু হিমাচলে মহাকালীর তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় দেবীকে সন্তুষ্টও করেন তিনি।

তখন বিষ্ণুর পদ্ম থেকে কোলাসুরের জন্ম হয়। এই কোলাসুর দেবতাদের পরাজিত করে ভূমণ্ডল, বিষ্ণুর বৈকুণ্ঠ, ব্রহ্মার কমলাসন—সমস্ত দখল করে ফেলে। পরাজিত ও বিতাড়িত দেবতারা তখন দেবীর স্তব করতে শুরু করেন। দেবতাদের স্তবে দেবী আবারও সন্তুষ্ট হন, এবং জানান, তিনি কুমারীরূপ ধারণ করে কোলানগরী গিয়ে কোলাসুরকে সবান্ধবে হত্যা করবেন। দেবীর হাতে কোলাসুর মারা যায়। সেই থেকেই নাকি কুমারী পুজোর শুরু।

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর প্রথম কুমারী পুজো করেছিলেন ১৮৯৮ সালে, তাঁর কাশ্মীর ভ্রমণের সময়। এক মুসলমান মেয়েকে কুমারী জ্ঞানে পুজো করেন স্বামীজি। পরের বছর ডেপুটি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল মন্মথ ভট্টাচার্যের কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেন। ১৯০১ সালে যখন তাঁর হাতে বেলুড় মঠে দুর্গাপুজো শুরু হল, তখন নয়জন কুমারী এক সঙ্গে পূজিতা হন। এখন অবশ্য শাস্ত্রীয় রীতি মেনে একটি কন্যাই পুজো পান।
শাস্ত্রে যে কোনো কুমারী অর্থাৎ রজঃস্বলা নয় এমন নারীকেই পুজোর যোগ্য হিসেবে বিধান দেওয়া রয়েছে। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণকন্যা ছাড়া কুমারী পুজো হয় খুব কমই। বয়স অনুসারে বিভিন্ন নাম হয় কুমারীর—

কন্যা এক বছরের হলে নাম —সন্ধ্যা।
কন্যা দুই বছরের হলে নাম —সরস্বতী বা কুমারী কন্যা। বলা হয়, এঁর পুজোয় দুঃখ ও দারিদ্র কাটে, ধনবৃদ্ধি হয়, শত্রুনাশ, আয়ুবৃদ্ধি ইত্যাদি ফল পাওয়া যায়।
কন্যা তিন বছরের হলে নাম —ত্রিধামূর্তি বা ত্রিমূর্তি কন্যা। বলা হয় এঁর পুজোয় পুত্র সন্তান লাভ হয়, বিদ্যাবুদ্ধি ও মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
কন্যা চার বছরের হলে নাম —কালিকা বা কল্যানী কন্যা। কথিত রাজসুখ প্রাপ্তি, অত্যন্ত জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এঁর পুজোয়।
কন্যা পাঁচ বছরের হলে নাম—সুভগা বা রোহিনী কন্যা। বলা হয়, সমস্ত রোগমুক্তির জন্য এবং সব ক্ষেত্রে জয় লাভের জন্য এঁর পুজো ফলপ্রদ।
কন্যা ছয় বছরের হলে নাম —উমা। শত্রু জয়ের জন্য, সবার প্রিয় হওয়র জন্য এঁর পুজো করা হয়।
কন্যা সাত বছরের হলে নাম —মালিনী। মূলত ধনসম্পদ ও মান সম্মান লাভের জন্য এঁর পুজো হয়ে থাকে।
কন্যা আট বছরের হলে নাম —কুষ্ঠিকা। ঝগড়ার অবসান ও সিদ্ধিলাভের আশায় এঁর পুজো করা হয়।
কন্যা নয় বছরের হলে নাম —কালসন্দর্ভা। কঠিন থেকে কঠিনতর সমস্যা থেকে মুক্তি,ভয় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এঁর পূজার আয়োজন।
কন্যা দশ বছরের হলে নাম —অপরাজিতা। অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এঁর পুজো হয়ে থাকে।
কন্যা এগারো বছরের হলে নাম —রূদ্রাণী।
কন্যা বারো বছরের হলে নাম —ভৈরবী।
কন্যা তেরো বছরের হলে নাম —মহালপ্তী।
কন্যা চৌদ্দ বছরের হলে নাম —পীঠনায়িকা।
কন্যা পনেরো বছরের হলে নাম —ক্ষেত্রজ্ঞা।
কন্যা ষোলো বছরের হলে নাম —অন্নদা বা অম্বিকা।
সাধারণত দশ বছরের মধ্যে থাকা কন্যারাই কুমারী পুজোয় পুজো পান।

নারীতে পরমার্থ দর্শন এবং পরমার্থ অর্জন—এই হল কুমরী পুজোর মূল মন্ত্র। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় হয়ে চলেছে সারাক্ষণ যে ত্রিশক্তির দ্বারা, সেই ত্রিশক্তিই কুমারীতে রয়েছে বীজাকারে। আদতে কুমারীর মধ্যে নারীজাতির বীজ রয়েছে। তাই সে নারীর প্রতীক। কুমারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা, আসলে নারীশক্তিরই সাধনা। এই রীতিতে সাধকের কাছে বিশ্বজননী নারী কুমারী রূপ ধারণ করে, তাই সে পূজ্যা। ভোগ্যা নয়। মহাষ্টমীর দিন কুমারী পুজোর জন্য নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে ফুলের গয়না দিয়ে অঙ্গ সাজানো হয়। পা ধোয়ানো হয়, আলতা পরানো হয়। কপালে সিঁদুর তিলক, হাতে ফুলের মালা—পুজোর আসনে বসেন কুমারী। তাঋর পায়ের কাছে রাখা হয় পুজোর নৈবেদ্য। এরপর কুমারীর ধ্যান। মহাষ্টমী পুজোর শেষে বা নবমী পুজোর হোমযজ্ঞের পর কুমারীপুজোর বিধান রয়েছে শাস্ত্রে।


সুত্র: 

আনন্দবাজার পত্রিকা
এশিয়ানেট নিউজ
আজতক বাংলা
প্রথম কলকাতা

বিভি/এসআই

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2