• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

জলাভূমি ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয়: ইকবাল হাবিবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ, কী বলছে বাপা?

প্রকাশিত: ০০:০০, ১১ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১৪:১৭, ১১ জুলাই ২০২৪

ফন্ট সাইজ

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেড়ীবাঁধের বাইরে রামচন্দ্রপুর খালে থাকা সাদিক এগ্রোর খামার ও বস্তি উচ্ছেদ এবং সুরের ধারা নামের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গানের স্কুলটি উচ্ছেদ না করা নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে। এই ঘটনায় একই এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে গড়ে তোলা ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ)র নামও উঠে আসছে। সেই প্রেক্ষাপটে জলাভূমিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ)র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিবও।

বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, পোর্ট অ্যাক্ট এবং পরিবেশ আইনসহ বিভিন্ন আইনে বেড়ীবাঁধের বাইরের (নদীর ফোরশোর এলাকার) জলাভূমি ভরাট করা দণ্ডনীয় অপরাধ বলা হয়েছে। সাদিক এগ্রোর দখলকে ঘিরে আলোচনার পর বেড়ীবাঁধের বাইরের ওই এলাকার দখল নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে বাংলাভিশন। সাটেলাইট চিত্র যাচাই করে দেখা যায়, ২০০৪ সালেও বাঁধের বাইরের পুরো এলাকা ছিল তুরাগ নদীর অংশ। বছরের বিভিন্ন সময় সেখানে আসতো নদীর পানি। কিন্তু সেই বছর থেকেই সেখানে শুরু হয় ভরাটযজ্ঞ। প্রথম ভরাট শুরু করে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ)। তাদের পাশাপাশি ভরাট করে গড়ে উঠে ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যানসহ বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটি এবং স্থাপনা। ধিরে ধিরে ফোরশোর ছেড়ে খালও দখল করে তারা।

২০০৪ সালের স্যাটেলাইট চিত্র: বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির জায়গাটিতে তখন ভরাট শুরু হয়
 
স্থানীয়রাও জানান, বেড়ীবাধের বাইরের পুরো এলাকাই নদীর মতো ছিলো। বর্ষাকালে এখানে পানি আসতো। জাহাজে করে বালু এনে এই জায়গা ভরাট করা হয়। ২০০৪ সালের দিকে প্রথমে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও ইউল্যাবের জায়গা দুটি ভরাট করা হয়। পরে তাদের দেখাদেখি ভরাট শুরু করে অন্যরাও।

বসিলা এলাকায় ৩০০ বছর ধরে বসবাস করছেন মনির হোসেনের পরিবার। তুরাগ তীরেই কেটেছে তার শৈশব-কৈশর। দেখেছেন এখানকার পরিবর্তন। তিনি বাংলাভিশনকে বলেন, আমরা ছোটকাল থেকে দেখেছি এটি পুরোটা তুরাগ নদীর অংশ ছিল। মাঝে মাঝে খালের মতো ছিল। খালটা এদিক থেকে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়েছিল। খালের জায়গাগুলোতে সারা বছর পানি থাকতো আর অন্য জায়গাগুলোতে পানি আসতো শুধু বর্ষাকালে। এটা ২০০৪ সালেও ছিল।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ আমরা দেখলাম বর্তামানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিটা যেখানে সেই জায়গাটা ভরাট শুরু হয়। ইকবাল হাবিব সাহেবরা এটা করেছেন। একই সময়ে রামচন্দ্রপুর খাল দিয়ে জাহাজে করে বালু এনে ভরাট করে মিনা বাজার পরে সেখানে ইউল্যাব হয়। তাদের দিয়েই এখানে ভরাটের শুরু। তারপর একেকটা হাউজিং সোসাইটি আসতে থাকে, ভরাট হতে থাকে। আমরা বুঝে ওঠার আগেই সব ভরে গেল। কেউ তেমন প্রতিবাদও করলো না। কে করবে, যারা করার কথা ছিল তারাই দখলদারীতে সবার আগে।

এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ) এর ওয়েবসাইটে গিয়েই দেখা যায় একেবারেই তুরাগ তীর ঘেষা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিবের নাম।

বিশ্ববিদ্যালয় দুটির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বাংলাভিশনকে বলেন, ২০১৮ সালে আমি যখন কমিশনে ছিলাম তখন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম। মাঠে দেখিয়ে দেখিয়ে বলেছি কাগজে কলমে মেপে এই দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদ শুরু করুন। আমরা অনেকের তালিকা তৈরি করেও পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা উচ্ছেদ করেনি।

তিনি বলেন, ‘এখন খামারটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এটাকে স্বাধুবাদ জানাই। কিন্তু শুধু কি এই খামারটাই জলাভূমি দখল করেছে? এখানেতো বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়েছে। আমি বুঝি না দেশে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নাকি যে নদী, খাল, জলাভূমি দখল করে বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে? এখনো বলছি এগুলোরে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

জলাভূমি রক্ষায় পরিবেশবাদী আন্দোলনের ব্যার্থতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইকবাল হাবিব সাহেব নিজেইতো অনেক জায়গা দখল করেছেন। তার বিরুদ্ধে এলিগেশন আছে। ইকবাল হাবিবতো অনেক কথা বলেন কিন্তু নিজেদের বেলায়তো সেটা মানেন না।’

মোহাম্মদপুর বেড়ীবাঁধের বাইরের এলাকার বর্তমান স্যাটেলাইট চিত্র

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্থপতি ইকবাল হাবিবের মোবাইল ফোনে বার বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সোমবার তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ লিমিটেডের অফিসে গিয়ে জানা যায় সেদিনই দেশের বাইরে গিয়েছেন তিনি। পরে তার মন্তব্য চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি।

সংগঠনের শীর্ষ এই নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রবাসে অবস্থানকারী বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলে তিনিও কোনো জবাব দেননি। 

তবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বাংলাভিশনকে বলেন, ‘তুরাগ তীরে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ইকবাল হাবিবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি যে এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে তা নয়, এ নিয়ে বাপার আগের কমিটিতেও বহু আলোচনা হয়েছে। সুলতানা কামাল আপা সভাপতি থাকাকালেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালীন সদস্য শারমিন মুরশিদ আপাকে নিয়েও বৈঠক হয়। তখন ইকবাল হাবিব ভাই জানান যে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি তৈরি হওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া, নদী রক্ষা কমিশনের করা তুরাগের দখলদারের তালিকায়ও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ছিল না এজন্য আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আইন অনুযায়ী নদীর ফোরশোর এলাকা ভরাট করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বাপার প্রভাব খাটিয়ে তালিকাকেও তিনি প্রভাবিত করেছিলেন কিনা সেটাওতো প্রশ্নের অবকাশ রাখে। কিন্তু তালিকায় নাম না এলেও এটি যে অনৈতিক এবং অপরাধ সেটি বাপা মনে করে কিনা জানতে চাইলে আলমগীর কবির বলেন, ‘অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু তিনি তো বলেছেন তিনি ট্রাস্টি বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণের পর।’

নির্মাণের পরও অবৈধ প্রতিষ্ঠানে কোনো পরিবেশ আন্দোলনের নেতার যাওয়া নৈতিক কি না-জানতে চাইলে বাপার সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যে অভিযোগগুলো উঠেছে এগুলো নিয়ে প্রয়োজনে আবারও আলোচনা হবে। নিশ্চয়ই বাপার মিটিংয়ে হাবিব ভাইয়ের বিষয়টি আবারও উত্থাপন করা হবে।’

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

আজকের সময়সূচী (২৩ মার্চ ২০২৫)

সেহরি:

০৬:০০

ইফতার:

০৬:১১

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2