• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার শঙ্কায় মাদ্রাসা-মসজিদসহ ১০টি স্থাপনা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:২২, ১৫ আগস্ট ২০২৫

ফন্ট সাইজ
নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার শঙ্কায় মাদ্রাসা-মসজিদসহ ১০টি স্থাপনা

সাতক্ষীরার আশাশুনির মরিচ্চাপ নদীর বেঁড়িবাধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকায় প্রায় দুই’শ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধে ভেঙে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় হামিউচ্ছুন্নাহ কওমিয়া ও হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার একটি কক্ষ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।

ভাঙন অব্যাহত থাকায় স্থানীয় চর জামে মসজিদ ও তেঁতুলিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ কওমিয়া ও হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসাসহ অন্তত ১০টি স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। গোটা এলাকাজুড়ে বর্তমানে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন মাস আগে বেড়িবাঁধে ধ্বস দেখা দিলে বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে সংশ্লিষ্ট অংশসহ পাশাপাশি আরও দুটি স্থানে ধ্বস দেখা দেয়। মরিচ্চাপ নদীর ভাঙনে ঝুঁকিতে রয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা। 

এছাড়া পৃথক তিনটি অংশে আরও প্রায় দেড়শ ফুটের মতো বাঁধে ধ্বস লেগেছে। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মসজিদের পাশে ভাঙন রোধে ধসে যাওয়া অংশে বাঁশ পুঁতে এবং বাঁধের অবশিষ্ট অংশ জিও শিট দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া বিলীন হওয়া বাঁধের পাশে অবস্থিত ভবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তেঁতুলিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, গত বুধবার দুপুরের জোয়ারে আকস্মিকভাবে মসজিদ ভবনের পাশ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ ফুট বেঁড়িবাঁধ মরিচ্চাপ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে রাতের জোয়ারে বেঁড়িবাঁধের প্রায় দুই’শত ফুট এলাকা জুড়ে নদীতে বিলীন হয়ে ভাঙন মসজিদের একেবারে কাছে পৌঁছে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সরদার জানান, ভাঙনের শঙ্কা থেকে বাঁচতে তারা সেখানে শতাধিক বাঁশ কিনে আনেন। একপর্যায়ে পাউবোর কাউকে না পেয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিলীন হওয়া অংশে বাঁশ পুঁতে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করেন।

তিনি এসময় অভিযোগ করে বলেন, মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির সদস্যসহ এলাকাবাসী প্রায় তিন মাস আগে পাউবোর কর্মকর্তাদের সেখানকার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। বেঁড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকানোর পাশাপাশি মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ আশপাশের স্থাপনাগুলো রক্ষার আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু ‘দেখবেন’ বলে জানালেও পরে একটি বারের জন্যও পাউবোর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে খোঁজ-খবর নেননি।

ভাঙন কবলিত এলাকায় থাকা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, এক বছর আগে মরিচ্চাপ নদী পুনঃখনন করা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা পাউবোর কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সঙ্গে মিলে একটি ইটভাটার মালিকসহ কয়েকজন বিত্তবান ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে গিয়ে ম্যাপ অনুসরণ করেননি। ইচ্ছাকৃতভাবে পুনঃখনন কাজ পশ্চিম দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তারা একের পর এক ভাঙনের মুখে পড়ছেন। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তিন মাস আগে কাজ শুরু করলে এতগুলো স্থাপনা নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে পড়তো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বশীল উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সরকারি জমির ওপর অবৈধভাবে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। তাই অবৈধভাবে নির্মিত কোনো স্থাপনা রক্ষার জন্য তাদের কোনো বরাদ্দ থাকে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো বরাদ্দ না দেওয়ায় তিন মাস আগে অভিযোগ পেয়েও তারা কাজ করতে পারেননি। 

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় জানান, বাঁধ বিলীন হওয়ার খবর পেয়ে ইতিমধ্যে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে তারা তাকে জানিয়েছেন বলে তিনি আরো জানান।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাশকিয়া জানান, তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আজ শুক্রবার থেকে সেখানে কাজ শুরু করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৬০০টি জিও ব্যাগও দেয়া হয়েছে। জিও ব্যাগে বালুভর্তি করে ধসে যাওয়া অংশে ফেলে ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। 

তবে তিন মাস আগে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি মাত্র দুই মাস আগে সাতক্ষীরাতে যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: