স্বাস্থ্য সহকারীদের নতুন কর্মসূচি, সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত
নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসাবে চতুর্থ দিনে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। উক্ত কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া হাজার হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা অংশ নিয়ে বিক্ষোভ ও বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের প্রস্তাবিত, প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস দেওয়া কথা দাবি বাস্তবায়নের জিও (প্রজ্ঞাপন) আকারে প্রকাশ না করা পর্যন্ত তারা ফিরে যাবেন না কর্মস্থলে। এর আগে সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে শহিদ মিনারের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক মো. ওয়াসি উদ্দিন রানা ও সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী।
নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ মোট ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। তাদের ঘোষিত এ কর্মবিরতির কারণে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে এক লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র। প্রতিদিন অনুষ্ঠিত ১৫ হাজার টিকা কেন্দ্র স্থগিত থাকায় প্রায় দেড় লাখ মা ও শিশু নিয়মিত টিকাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্দোলনকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা থেকে বঞ্চিত করতে চাননি। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিনের অবহেলা, বৈষম্য এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার কারণে তারা বাধ্য হয়েছেন কর্মবিরতিতে যেতে।
তারা বলেছেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে ২৭ বছর ধরে শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে। আশ্বাস দিয়ে কর্মকর্তারা ঘুমিয়ে আছেন, তাদের ঘুম আর ভাঙ্গছে না। আজ অধিদপ্তরে কর্মসূচিতে এসেছি তাদের ঘুম ভাঙ্গাতে। তাদের এ কর্মসূচির কারণে যদি টিকা না পাওয়ায় কোনো মা বা শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে, তার দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, তারা মূলত প্রান্তিক পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচিসহ জনস্বাস্থ্যের সেবায় সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে কাজ করেন। মানব শিশু জন্মের পর পরই তাদের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য ১০টি মারাত্মক রোগের প্রতিশোধক টিকা একমাত্র তারাই প্রদান করেছেন। তাদের কাজের বিনিময়েই বিশ্বে টিকাদানে বাংলাদেশ রোড মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশে থেকে গুটি বসন্ত দূর হয়েছে, মাতৃ-শিশুমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে, দেশ পোলিও মুক্ত হয়েছে। হাম-রুবেলা, করোনার টিকা, জরায়ুমুখের ক্যান্সারের (এইচপিভি) টিকা, সর্বশেষ প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েড (টিসিভি)’র টিকা তারাই সফল ভাবে প্রদান করেছেন।
তারা আরো বলেন, তাদের কাজের ফলে দেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি হয়েছে এবং আন্তজার্তিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত সুপিরচিতি লাভ করেছে। যাদের কাজের বিনিময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ গর্বিত আজ তারাই অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা মহাখালি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে দেশের ৬৪ জেলা থেকে স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা ব্যানার, ফেস্টুন ও মনিপাতা নিয়ে দলে দলে এসে কর্মসূচিতে যোগ দেন। ‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে এই অবস্থান কর্মবিরতি শুরু করেন। গত ২৩ নভেম্বর সংগঠনটি জাতীয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচির দেওয়া হয়েছিল। ২৮ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে তারা এ কর্মবিরতিতে যাবেন। এর আগেও গত অক্টোবরে একই দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেন। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তখন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিলো।
তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতাসংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সকল স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতন স্কেল পুর্ননিধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা ও ইতোমধ্যে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
বিভি/এসজি




মন্তব্য করুন: