নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়ে ‘রোকেয়া রান’ আয়োজন
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বিডি রানার্স এর যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ‘রোকেয়া রান’ অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে সমবেতস্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য রোকেয়া রান এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাডভোকেট দীপ্তি শিকদার অ্যাড. দীপ্তি সিকদার; প্রশিক্ষণ ও গবেষণা পরিচালক শাহাজাদী শামীমা আফজালী শম্পা এবং প্রোগ্রাম অফিসার (কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে দৌড়ের নিয়মকানুন ও রুট সম্পর্কে অবহিত করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিউতি সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রানার্স কমিউনিটির সদস্য মিঠুন এবং পাপ্পু। কমিউনিটি দৌড় শেষে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; বাংলাদেশের প্রথম আয়রনম্যান ও বিডি রানার্সের এ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত ও আয়রনম্যান, পর্বতারোহী এবং বিডি রানার্সের এ্যাকটিভিস্ট ইমতিয়াজ এলাহী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্যে সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, এই রোকেয়া রান সকল জড়তা, ক্লান্তি এবং আড়ষ্টতা কাটিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এসময় তিনি বলেন, রোকেয়ার যে আহবান- জাগো ভগিনীরা জাগো; এই আহ্বানে উজ্জীবিত থেকে নারী-পুরুষের জন্য সমতা পূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে কাজ করে যাবো। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের যে লড়াই ছিলো সে লড়াইয়ের কেন্দ্রে ছিলো প্রথা ভাঙার লড়াই; আজ চারিদিক থেকে আবার নারীদের নানা ঘেরাটোপে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, রোকেয়ার সম্বন্ধে কটূক্তি করার স্পর্ধা যারা দেখাচ্ছে তাদের সেই স্পর্ধার সামনে দাড়িয়ে আমরা জোর গলায় বলতে চাই প্রথা ভাঙার লড়াইকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আজকের এই রোকেয়া রান বিশেষ অবদান রাখবে। একইসাথে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান তিনি।
কমিউনিটি দৌড় শেষে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বলেন, উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে জন্মগ্রহণ করে এই মহিয়সী, স্বপ্নচারী বিদূষী নারী নারীমুক্তির যে মন্ত্র আমাদের শুনিয়েছিলেন যে ‘অবগুণ্ঠণ এবং অবরোধ’ নারীর ভবিতব্য হতে পারে না। সেই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আমরা ছুঁটে চলেছি, ছুঁটে যাবো, সমাজের সকল জায়গায়। তিনি এসময় বলেন, শুধু ঘরে নয়, সমাজের সকল জায়গায় নারীরা সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হবে এই আকাঙ্খা পূরণের পথে সমাজের যা কিছু বাঁধা আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে, সেই সকল বাঁধাকে পেছনে ফেলে আমরা অবিরাম ছুটছি, ছুটবো!
বাংলাদেশের প্রথম আয়রনম্যান মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত বলেন, সমতা পূর্ণ সমাজ গড়তে রোকেয়ার চিন্তাভাবনা ছিলো দূরদর্শিতাসম্পন্ন যা আজকের দিনেও আমরা ভাবতে পারি না। পুরুষের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের যে অনুপ্রেরণা থাকে তা আমাদের বার্তা দেয় যে সবাইকে একসাথে অগ্রসর হতে হবে।
আয়রনম্যান, পর্বতারোহী এবং বিডি রানার্সের এ্যাকটিভিস্ট, ইমতিয়াজ এলাহী বলেন, এটি কেবল একটি দৌড়ের ইভেন্ট না, নারী মুক্তিকামীদের সামনে এগিয়ে চলার শক্তিকে আহ্বান জানায়। তিনি এসময় নারীদের এই এগিয়ে চলার যাত্রাকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
বক্তব্য শেষে বাংলাদেশের প্রথম আয়রনম্যান মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত ও আয়রনম্যান, পর্বতারোহী এবং বিডি রানার্সের এ্যাকটিভিস্ট ইমতিয়াজ এলাহীকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ফুল ও প্রকাশনা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
উক্ত রোকেয়া রান কর্মসূচিতে বিডি রানার্স এর একটিভিস্ট ও সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেত্রীবৃন্দ, কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকসহ প্রায় ২০০ জন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাডভোকেট দীপ্তি শিকদার।
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: