নুর-এর দলের নেতৃত্বে রেজা কিবরিয়া!
ডাকসু'র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর-এর নতুন দলে চমক হিসেবে দেখা যেতে পারে ড. রেজা কিবরিয়াকে। দলটির আহবায়কের দায়িত্ব নিতে পারেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়া’র ছেলে রেজা কিবরিয়া। চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ করছে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্মটি। চলতি সেপ্টেম্বরের শেষে কিংবা অক্টোবরের শুরুতে ঘোষণা আসতে পারে নতুন এই রাজনৈতিক দলের। নুর-এর এই দলের যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে বাংলাভিশন ডিজিটালকে জানিয়েছেন রেজা কিবরিয়া।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর। ওই আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হন তিনি। পরে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন। মূলত তখন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন নুর।
এরপরই রাজনৈতিক দল গঠনে মনোযোগ দেন নুর। মূল দল গঠনের আগেই পাঁচটি সহযোগী সংগঠন গঠন করেছে নুর-এর নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি। এগুলো হলো- ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ এবং পেশাজীবী অধিকার পরিষদ। নুর বর্তমানে এই সংগঠনগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের কয়েকজন প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যের সংগে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত গণ অধিকার পরিষদ এবং বাংলাদেশ অধিকার পার্টি নাম দু’টি নাম রয়েছে চূড়ান্ত আলোচনায়। নতুন দল হিসেবে আরও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে জ্যেষ্ঠ কোনো বিশিষ্ট নাগরিককে নেতৃত্বে আনতে চান তাঁরা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই ড. রেজা কিবরিয়াকে সামনে রাখতে চায় সংগঠনটি। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় রেজা কিবরিয়া আহবায়ক এবং নুরুল হক নুরকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠিত হতে পারে। এছাড়াও রাষ্ট্রচিন্তা, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও গণসংহতি আন্দোলনের কেউ কেউ দলটিতে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আহবায়ক কমিটির সংগে দল পরিচালনায় নীতিনির্ধারণী পরিষদ এবং একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের আলোচনা চলছে। নীতিনির্ধারণী পরিষদে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাসান আল মামুন, রাশেদ খান, ফারুক খানসহ অন্যরা থাকবেন। আর উপদেষ্টা পরিষেদে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. আসিফ নজরুলসহ বিশিষ্টজনদের দেখা মিলতে পারে।
এই প্রসংগে কথা হয় ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন দুই সদস্যের সংগে। যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘মূল দুই পদের একটিতে আমাদের বাইরের কেউ আসতে পারেন। কিন্তু কে আসবেন এই মূহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’ সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে আমরা দল গঠন করতে চাই। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে পথ চলতে চাই। এই সবকিছুই এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।’
নুরুল হক নুর বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ‘আমরা সিনিয়র কাউকে নেতৃত্বে আনতে চাই। সেক্ষেত্রে রেজা কিবরিয়া ছাড়াও অন্য সিনিয়ররাও থাকবেন। বেশ কয়েকজন আমাদের সংগে যুক্ত হতে পারেন। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই মাসের শেষ নাগাদ আমরা ঘোষণা দিতে পারবো বলে আশা করছি। এখনও সবকিছু আলোচনার মধ্যে আছে।’
ছাত্র-যুব অধিকার পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা জানান, এখন পর্যন্ত রেজা কিবরিয়াই আছেন নেতৃত্বে আসার মূল আলোচনায়। সম্প্রতি শ্রমিক অধিকার পরিষদ এবং পেশাজীবী অধিকার পরিষদের অনুষ্ঠানেও দেখা মিলেছে রেজা কিবরিয়া’র।
নতুন দলে দায়িত্ব নেওয়া প্রসংগে ড. রেজা কিবরিয়া বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ‘এটি তো তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমি উপদেষ্টা হিসেবে থাকবো, না নেতৃত্ব থাকবো, এটি তাঁরা জানাবে। আমি ওদের সংগে আছি। কোন পজিশনে থাকবো, সেটি আমি জানি না। আমি তো বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হবো, বা আরেকটি দলের সেক্রেটারি ছিলাম, আমাকে সেক্রেটারি দিতে হবে, তাতো আামি বলতে পারি না। আমি প্রায় দেড় বছরের মতো আসা যাওয়া করছি তাঁদের সংগে। তাঁদের আমার খুব ভালো লাগে, তাঁরা সাহসী।’
প্রকাশিতব্য রাজনৈতিক দলটি নিয়ে বেশ আশাবাদী ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা রেজা কিবরিয়া। বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরাই প্রথম শক্তি হবো। আওয়ামী লীগ চতুর্থ শক্তি হয় কি-না সেটিই সন্দেহ। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া জন সমর্থন মাপার তো উপায় নেই। এই শক্তি আমি মনে করি, দেশের জন্য শুভ শক্তি নিয়ে আসবে।’
বিভি/এমএস
মন্তব্য করুন: