• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাঁধ সংস্কার বন্ধ দুই বছর

সরকারের ৮’শ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা

আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:১২, ৩১ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
সরকারের ৮’শ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা

পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার ও টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু না হওয়ায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পে সরকারের প্রায় ৮’শ কোটি টাকার অতি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে পাখিমারা বিলের কৃষকদের ১৫৫৬.৬২ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই বছরের জন্য ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অদ্যবধি কোনও কৃষক তা পাননি। ফলে টিআরএমভুক্ত বিলের জমি মালিকরা তাদের জমি নিজেদের দখলে নিয়ে সেখানে এখন মাছ চাষ করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দ্বিতীয় পর্যায়ের ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকার কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তরিক না হওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নদ অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ।

জানা যায়, কপোতাক্ষ নদ অববাহিকার ভুক্তভোগি ১৫ লাখ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ অনুমোদন করেন। ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনে শেষ হয়। প্রকল্পটির প্রধান দুটি বিষয় ছিল, ৯০ কি.মি নদী খনন এবং তালা উপজেলার জালালপুর, খেশরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন। 

পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশাল বিলে নদের পলি অবক্ষেপিত হয়ে কপোতাক্ষ নদ খনন পরবর্তীতে নাব্যতা ধরে রাখে। এতে নদ অববাহিকার ১৫ লাখ অধিবাসী জলবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জুলাই’ ২০২০ থেকে জুন’ ২০২৪ পর্যন্ত (২য় পর্যায়) প্রকল্প সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। 

দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটির মূল কাজ পাখিমারা বিলে টিআরএম অব্যাহত রাখা এবং নদী খনন। কিন্তু ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের দুই বছর অতিবাহিত হলেও টিআরএম ব্যবস্থা পুনরায় বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি নেই। 

এদিকে ২০২০ সালে জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে তৈরি ওই বাঁধ কিছুদিনের মধ্যে ভগ্নদশায় পরিণত হয়। এমতাবস্থায় প্রকল্পের স্বার্থে ও জনগণের দাবির মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে টিআরএম বিলের সংযোগ খালের মুখ বেঁধে দেয়া হয়, যা’ এখনও রয়েছে। এ কারণে, কপোতাক্ষ নদের ভবিষ্যৎ ও নদ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের সফলতা নিয়ে এখন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তালার বালিয়া গ্রামের আব্দুল আলিম মোড়ল ও ফিরোজ সানা জানান, টিআরএম এর বিলে তাদের ৮ বিঘা করে জমি রয়েছে। ২০১১ ও ২০১২ সালে সরকার থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও অদ্যবধি আর কোনও টাকা তারা পাননি। 

এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক অফিসে অনেক বার যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। 

গৌতমকাটি গ্রামের মো. আলাউদ্দীন সরদার জানান, এই বিলে তাদের ২২ বিঘা জমি রয়েছে। ২০১১ সালে ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও আর কোনও টাকা না পাওয়ায় তিনি এখন সেখানে মাছের ঘের করছেন। 

তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান জানান, কপোতাক্ষ নদ খননের প্রথম পর্বে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় পর্বে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা সরকার বরাদ্দ দিলেও টিআরএম ভুক্ত বিলের জমি মালিকরা মাত্র দুই বছর ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। যে কারণে জমি মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন সেখানে চাষাবাদ করছেন। এছাড়া বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারে চলছে ধীরগতি। এর ফলে সরকারের প্রায় ৮শ’ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাওয়াসহ কপোতাক্ষ নদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, ঠিকমতো ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় পাখিমারা বিলের কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জমি মালিকরা ক্ষতিপূরন পেলে তাদের কোনও আপত্তি থাকতো না। 

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক অফিস সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় ফেইজের টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড জমা না দেয়ায় কৃষকের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া যাচ্ছে না। তবে, কপোতাক্ষ নদ খননের দাবীতে আন্দোলন করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ অতিদ্রুত সংস্কার পূর্বক টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নদ পুনঃখননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় ফেইজে নদী খনন সাতক্ষীরা অংশে প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। 

টিআরএম এলাকার ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, রেভিনিউখাতে টাকা ধরা আছে। কৃষকরা জেলা প্রশাসক অফিস থেকে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবেন। তবে দ্বিতীয় ফেইজে দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও টিআরএম কেন চালু হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষকরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় সেখানে কোন কার্যক্রম করা যাচ্ছে না।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: