• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘অনাহার-অর্ধাহার’  মৃৎশিল্পীদের প্রতিদিনের গল্প

মো. অসীম চৌধুরী

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
‘অনাহার-অর্ধাহার’  মৃৎশিল্পীদের প্রতিদিনের গল্প

‘নতুন কি ব্যবসা করিম, টাকা নাই। হাটত ১২৫ টাকা বিক্রি করি ভ্যান ভাড়া দিছুং ৮০ টাকা। ৪৫ টাকা দিয়া ক্যায় চাউল, তরকারি দিবে, না খায়া দুইদিন থাকির নাগবে।’ অশ্রুসিক্ত নয়নে কথাগুলো বলছিলেন তমিজ উদ্দিন। তিনি একজন মৃৎশিল্পী, বসবাস করেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায়। 

এক সময়ের কর্মব্যস্ত কুমারপাড়া এখন অনেকটাই নীরব। বাজারে আধুনিক ও প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং এই কাজে ব্যবহারিত বিশেষ মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানান কুমারেরা।

যারা এখনও এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন, মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় তারা অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। এ সম্প্রদায়ের লোকজন বেঁচে থাকে বাংলা নববর্ষের মেলা এবং প্রদর্শনীর আয়োজন ঘিরে। সাপ্তাহিক হাট গুলোতে এখন আর কেউ এ মাটির পণ্যটি কেনেন না। যার ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে তাদের জীবন। ভালো নেই তারা। তৈরি করা বহু মাটির তৈজসপত্র অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

উপজেলার বগুলাগাড়ী এলাকার অনেক পরিবার এক সময় এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জীবিকার তাগিদে আবার অনেক পরিবারের সদস্যরা এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

মৃৎশিল্পী তৈয়ব আলী বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় মাটির জিনিস তৈরি করে আসছি। এ পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও আমাদের উন্নয়নে বা আর্থিক সহায়তায় সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

মৃৎশিল্পী মোনায়েম আক্ষেপ করে জানান, মাটির তৈরি এসব সামগ্রী শুকানো, রং করাসহ পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করতে সাত দিন সময় লাগে। পরে এগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জলঢাকা হাট ও জেলার বিভিন্ন এলাকায়। দাম না থাকায় এ কাজ করা আর সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম পাশা এলিচ জানান, মাটির জিনিসের চাহিদা কমতে থাকায় এবং দূরের এলাকা থেকে বেশি দামে মাটি কিনতে হয় বলে মৃৎশিল্পীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে কিছু পরিবার বংশ পরম্পরায় এ পেশায় রয়ে গেছেন।

জলঢাকা বণিক সমিতির সভাপতি পৌর মেয়র ইলিয়াস হোসেন বাবলু বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৃৎশিল্পীরা ব্যাপক অবদান রাখেন। তাদের সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে। ঋণ প্রদানকারী কতৃপক্ষ যদি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মৃৎশিল্পীদের তালিকা করে ক্ষুদ্র ঋণসহ প্রণোদনার আর্থিক সুবিধা দিতে পারে তাহলে অন্তত টিকে থাকতে পারবেন তারা। মৃৎশিল্প সম্প্রদায় আমাদের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে বিলুপ্তের হাত হতে রক্ষা করতে হবে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: