মাঠে গড়াচ্ছে এশিয়া কাপ, মনে পড়ছে সাকিবদের সেই কান্না

রাত পোহালেই আরব ভূমিতে শুরু হবে এশিয়ার ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে লড়বে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফিগানিস্তান আর হংকং। ২৭ আগস্ট শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে এবারের আসর। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ৩০ আগস্ট আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে।
এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কখনো শিরোপা জেতেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১২ সালের পর এশিয়া কাপ এলেই ভক্তদের বুকের বাঁ পাশ ব্যথায় চিন চিন করে ওঠে। আর জলে টলমল করা চোখে ভেসে ওঠে সাকিবদের কান্নার দৃশ্য। এশিয়া কাপ আসলেই সাকিব আল হাসানের একটি ছবি ভেসে আসে স্মৃতিপটে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ায় সেই ছবি, যা আজও পোড়ায় দেশবাসীকে। ওই ছবিতে দেখা যায়— সাকিবের চোখ ছল ছল করছে। মুখে হাত দিয়ে সেই কান্না লুকানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছেন এ অলরাউন্ডার। আর তার বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদছে মুশফিক।
২০১২ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। ম্যাচের শেষদিকে জয়ের সুবাসও পেতে শুরু করেছিল সাকিব মুশফিক নাসিররা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ধূলিসাৎ হয়ে যায় বাংলাদেশের এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন।
তীরে এসে এমন তরী ডোবার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি সাকিব। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। সেদিন ফাইনালে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ হেরে বাংলাদেশি সমর্থকদের মাথায় হাত! অনেকে তো বুক চেপে কষ্ট লাঘব করছিলেন। কেউ কেউ তো স্ট্রোক করা মতো অবস্থায়ও পৌঁছে গিয়েছিলেন। নিঃশ্বাস নেওয়াটা যেন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছল।
পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা যখন শিরোপা জয়ের উদযাপনে মত্ত, তখন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে কান্নার রোল। ড্রেসিংরুম থেকে ফিরে টাইগারদের কেউ কেউ মাটিতে বসে পড়লেন। কেউ বা শুয়ে। সবাই কাঁদছেন। কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন!
হাউমাউ করে কাঁদছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এনামুল হকের চোখে জল। হতবাক চোখে তাকিয়ে আছেন নাসির হোসেন। অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সাকিবেরও। দুঃখ আর সইতে না পেরে একসময় সতীর্থ সাকিবকে জড়িয়ে ধরলেন মুশফিক। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলেন।
সাকিব তখন অজানার উদ্দেশ্যে দুই চোখ রেখে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় মাঠে নেমে পড়লেন ক্রীড়া সাংবাদিকসহ ফটোগ্রাফাররা। তারা একের পর এক ছবি তুলছিলেন। এ সময় সাকিব মুখে হাত দিয়ে নিজের কষ্টটা লুকাতে চাইলেন, যা বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের ক্যামেরাবন্দি হয়।
পর দিন দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে সাকিবের সেই ছবি প্রকাশিত হয়। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে জয়ের এত কাছে গিয়েও হারের যে হতাশা, তার প্রতীকী ছবি হয়ে যায় সাকিবের সেই কান্না। পুরো দেশে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
মিরপুর শেরেবাংলা অনুষ্ঠিত সেই এশিয়া কাপে বাংলাদেশ গ্রুপপর্বে ভারত ও শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে আগে ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
জবাবে দারুণ খেলে বাংলাদেশ। তামিম সাকিবের ফিফটিতে জয়ের দিকে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। শেষ পাঁচ ওভারে যখন ৪৭ রান প্রয়োজন, তখন আউট হন মুশফিকুর রহিম।মাশরাফি ৩টি চার মেরে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন। তিনি ৪৮তম ওভারে আউট হন।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৯ রানের। আজিজ চিমার করা শেষ ওভারের শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল ৪ রান। পঞ্চম বলে আব্দুর রাজ্জাক আউট হয়ে যান, শেষ বলে একটি লেগ-বাই রান আসে। বাংলাদেশ ২ রানে হেরে যায়।
এই ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশের সাকিব, মুশফিক, নাসির হোসেনরা মাঠেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তবে শিরোপা জেতা না হলেও ওই আসরের সেরা ক্রিকেটার হন সাকিব আল হাসান। আর শিরোপার খাতা শূন্যই থেকে যায়।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: