প্রতিবন্ধকতা জয় করে এইচএসসি পরীক্ষায় বসলো অরিত্র

অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকলে যে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অরিত্র ইশতিয়াক আলম। দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাকে কোন বাধা মনে করেননি। এটিকে জয় করে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেছেন। স্পিকারে শুনে শুনে পড়া আয়ত্ত করেছেন। ভাল প্রস্তুতিও নিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অরিত্র অংশগ্রহণ করেছেন। শ্রুতি লেখক দিয়ে এইচএসসির প্রথম পরীক্ষা দিয়েছেন মেধাবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অরিত্র।
অরিত্র গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ফিরোজ আলম মৃধার ছেলে। তিনি সরকারি মুকসুদপুর কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। অরিত্র মুকসুদপুর উপজেলা সদরের সরকারি সাবের মিয়া জসিমুদ্দীন এসজে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পরীক্ষায় বসে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অরিত্র প্রশ্নের উত্তর মুখে বলে দিচ্ছেন। তার হয়ে শ্রুতিলেখক দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুচিত্রা বিশ্বাস লিখে দিচ্ছে। মেধাবী অরিত্র প্রশ্নের উত্তর সাবলীলভাবে মুখে বলেছে। শ্রুতি লেখকও সবোচ্চ চেষ্টা করে উত্তর শুনে শুনে লিখে দিয়েছে। অরিত্রর অংশগ্রহণে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও উজ্জীবিত হয়েছেন।
ইশতিয়াক আলম অরিত্রর পিতা ফিরোজ আলম মৃধা জানান, আমার ছেলে জন্ম থেকেই একটু চোখে কম দেখে। প্রথমে বাম চোখে সমস্যা ছিলো। ইন্ডিয়া থেকে তার চোখের অপারেশন করানোর পরে তার ডান চোখে সমস্যা হয়। বর্তমানে তাকে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এতো সমস্যা থাকার পরেও তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা থেকেই সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সে চোখে দেখতে পায় না তাই একজন শ্রুতি লেখক দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি আমার সন্তানের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।
সরকারি এসজে উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সুপার সরকারি মুকসুদপুর কলেজের প্রভাষক ড. কবির আহম্মেদ জানান, অরিত্র একজন নিয়মিত ও মেধাবী ছাত্র। কলেজে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন সময়ে পুরষ্কার জিতেছে। সে তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শ্রুতিলেখক দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে এইচএসসিতে ভাল করবে। তার অংশগ্রহন অনেক শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করেছে।
মুকসুদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাদৎ আলী মোল্যা জানান, অরিত্র শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার এই ইচ্ছা শক্তিকে আমি সাধুবাদ জানাই। তার মনোবল তাকে ব্যাপক সাফল্য এনে দেবে। আশা করি এইচএসসিতে সে ভালো ফলাফল করবে।
পরীক্ষা শেষে অরিত্র বলেন, আমার পরীক্ষা ভাল হয়েছে। এইচএসসিতে আমি ভাল রেজাল্ট করতে পারব। এসএসসিতে মুকসুদপুর উপজেলার হাদিউজ্জামান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে অংশ নিয়ে আমি জিপএ ৩.৮ পেয়েছিলাম। এইচএসসিতে আরো ভাল করার প্রস্তুতি নিয়েছি। এই জন্য আমি সবার কাছে দোয়া চাই।
ওই কেন্দ্রর পরীক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অরিত্র আমাদের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেছে অরিত্র। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তার এ অংশ গ্রহন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাই তার দেখাদেখি এইচএসসিতে ভাল রেজাল্ট করতে আমরাও আত্মনিয়োগ করছি।
বিভি/এমএস/এজেড
মন্তব্য করুন: