• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

পর্যটক ও গবেষকদের নতুন ঠিকানা বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্য

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ৮ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
পর্যটক ও গবেষকদের নতুন ঠিকানা বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্য

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ ভারত আর নেপালে অবস্থান করে ধর্মপ্রচার করলেও ধারণা করা হয় বর্তমান বাংলা ভূখণ্ডেও এসেছিলেন তিনি। আর তাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক কালে নির্মিত ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্যাগোডা বাংলাদেশে এখনও বিদ্যমান। বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপত্যের আধুনিক নির্মাণশৈলীর এক অন্যতম নিদর্শন বহন করছে এসব প্যাগোডা। ধর্মীয় প্রার্থনা ছাড়াও নিরবতায় ঘেরা প্যাগোড়াগুলো এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক ও দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে ভিড় করেন পর্যটক ও গবেষকরা। 

বাংলাদেশের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে ভ্রমণ একটি অনন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যকলার মেলবন্ধন দেখতে পাওয়া যায়। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার রয়েছে, যেমন রাংকূট বৌদ্ধ বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি ১০০ ফুট বৌদ্ধ মূর্তি, লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি। এখানকার বিহারগুলোতে গেলে বৌদ্ধ সংস্কৃতির নানা দিক সম্পর্কে জানা যায়। এজন্য যদি এলাকাভিত্তিক বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর তালিকা ও একইসঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ওয়েবসাইট কিংবা বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যান্য মাধ্যমে সংযু্ক্ত করা গেলে সেখানে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।

নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত সোমপুর মহাবিহার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। কুমিল্লার ময়নামতিতে শালবন বিহারও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এখানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। যা পরবর্তীতে আবিস্কার করে এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত আছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব (৭৮১-৮২১) অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই বিশাল স্থাপনা আবিষ্কার করেন।

ইউনেস্কোর মতে পাহাড়পুর বিহার বা সোমপুর বৌদ্ধ বিহার দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। আয়তনে এর সাথে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা হতে পারে। এটি ৩শ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, বরং চীন, তিব্বত, মায়ানমার (তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। খ্রিস্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি প্রদান করে।

পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর (বর্তমান মহাস্থান) এবং অপর শহর কোটিবর্ষ (বর্তমান বানগড়)-এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল সোমপুর মহাবিহার। এর ধ্বংসাবশেষটি বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহীর অন্তর্গত নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। অপরদিকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব পশ্চিমদিকে মাত্র ৫ কিলোমিটার।

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ভাসুবিহার একটি প্রাচীন বৌদ্ধ স্থান। এটি বাংলাদেশের বৌদ্ধ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অবস্থিত এই বিহারটি রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষের উপাসনালয় এবং কুয়াকাটা ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের জন্যও একটি আকর্ষণ। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এই বৌদ্ধ মন্দিরটি বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির। কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত এই মন্দিরটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ স্থান।

মন্দিরগুলোতে ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ভ্রমণের সময় শালীন পোশাক পরিধান ও ধর্মীয় কার্য সম্পাদনে অগ্রাধিকার দেয়াসহ মন্দিরভিত্তিক বিভিন্ন নিয়মকানুন অনুসরণ করা যেতে পারে।

ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের উপাধ্যক্ষ আনন্দ মিত্র মহাথেরো বলেন, দেশের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপাসকদের পাশাপাশি পর্যটক ও গবেষকরাও আসেন। থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে মানুষজন আসেন। আগত উপাসক ও পর্যটকদের আমরা যথাসম্ভব সহায়তা করে থাকি।

এছাড়াও পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, শালবন বিহারসহ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে বেশ কিছু বিহার দেশি-বিদেশি পর্যটক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে চালু থাকা প্যাগোডাগুলোয় আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়ায় সেগুলোতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের ভীড়।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে যদি কোন বুদ্ধিস্ট আসেন তাহলে তিনি কতদিন থাকলে কোন কোন মন্দির ভ্রমণ করতে পারবেন সেরকম একটি চার্ট আমরা তৈরি করছি। তাহলে সেটি পর্যটকদের জন্য আরো সুবিধা হবে। তাছাড়া বৌদ্ধ মন্দিরগুলো কেন্দ্রীক আমরা বিভিন্ন মানের আবাসন ও স্থানীয় খাবারের ব্যবস্থা করছি। যাতে পর্যটকরা অতি সহজেই তাদের আবাসন ও খাবারের সুবিধা পান। এছাড়াও যদি কোন পর্যটক স্থানীয়দের জন্য একসঙ্গে থাকতে চান সে ব্যবস্থাও আমরা রাখবো।

গবেষণার কাজে যদি কেউ বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর পরিদর্শনে আসেন তাদের জন্যও পর্যাপ্ত বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে বৌদ্ধ মন্দিরগুলো কেন্দ্রীক। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোও যেহেতু আগের চেয়ে আরো আধুনিক এবং পর্যটকবান্ধব হয়েছে তাই আমরাও সেভাবে বিদেশি পর্যটকদের বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানগুলোতে নিরাপদ আবাসন, সহজলভ্য শাটল পরিবহন ব্যবস্থা  ও পর্যটক বান্ধব খাবার ব্যবস্থা করা গেলে ধর্মীয় প্রার্থনাসহ সারা বিশ্বের পর্যটকদের টানবে এসব প্রতিষ্ঠান আর তাই  বিদেশি পর্যটকদের জন্য অতিথি বান্ধব ইমেগ্রেশন ব্যবস্থা ও ভিসা সহজীকরণের পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: