ঝুঁকি মোকাবেলা সংস্থা না থাকার জটিলতায় অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম

ভৌগোলিকভাবে পাহাড়ি অংশ ছাড়া পুরো বাংলাদেশই সমতল। তাই বেশিরভাগ অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রম ভৌগোলিকভাবে চ্যালেঞ্জের দিক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিস্ময়ে পরিপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী অসংখ্য অ্যাডভেঞ্চার দল এখন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে রয়েছে। আলোকচিত্রীরা ফটোগ্রাফি ট্যুরের আয়োজন করছেন, বার্ড ক্লাবের সদস্যরা আয়োজন করছেন পাখি পর্যবেক্ষণ ট্যুর বা বন্যপ্রাণী পরিভ্রমণ, সাইক্লিং এবং বাইকিং গ্রুপগুলো প্রায় প্রতিনিয়তই নতুন স্থান অন্বেষণ করছে। দেশীয় অ্যাডভেঞ্চার পর্যটকরাও অ্যাডভেঞ্চারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছেন।
বাংলাদেশে অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণের জন্য অব্যবহৃত সম্পদ রয়েছে সমতল ভূমির অক্ষত প্রকৃতির অংশ, বিশাল আঁকাবাঁকা জলপথ, দক্ষিণ-পূর্বে সবুজ পাহাড়, সারা দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম এবং অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরাঞ্চল। এমনকি আমাদের অনেকের কাছেই প্রচলিত অনেক জিনিস, যেমন নদীতে মাছ ধরা, কাদা-বাঁশের ঘরে থাকা এবং সরল গ্রামীণ জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা। এসব গ্রামীণ জীবনের সাথে মানিয়ে নেওয়া অপ্রস্তুত শহরবাসীর কাছে বেশ দুঃসাহসিক হতে পারে।
অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণের পূর্বশর্ত হলো- প্রথম এবং সর্বাগ্রে, রোমাঞ্চের সম্ভাবনা যা বেশ আসক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। পাহাড়ের চূড়ায় ট্র্যাকিং করার পরে প্রথম দৃশ্য যা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের মন জুড়িয়ে দেয়, রঙিন সামুদ্রিক জীবন দেখার জন্য পানির নিচে স্নোরকেলিং, গভীর উপত্যকার ওপর জিপ লাইন বেয়ে নেমে আসা, প্যারাসুট নিয়ে নীচে নেমে আসার জন্য পাহাড়ের ঢাল থেকে লাফ দেওয়া ইত্যাদি। সব মিলিয়ে অ্যাডভেঞ্চারের অসংখ্য উপাদান রয়েছে বাংলাদেশে। এ ধরণের আরেও অনেক উৎস রয়েছে যা অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ সাধারণত তরুণ এবং সুস্থদের জন্য উপযোগী। কারণ, সহজাত কার্যকলাপের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্তরের শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। যেহেতু বাংলাদেশে একটি বিশাল তরুণ দল রয়েছে, যাদের অনেকেই অনাবিষ্কৃত স্থানের প্রতি অনুরাগী, তাই এটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র।
অন্যদিকে, কঠিন অ্যাডভেঞ্চারের জন্য প্রায়শই কঠোর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় এবং একইসঙ্গে নিতে হয় অতিরিক্ত ঝুঁকি। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ধরণের পর্যটনের বিকাশের জন্য, কিছু মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে। রাস্তাঘাট, তথ্য উৎস, প্রশিক্ষিত গাইড এবং অন্যান্য সম্পর্কিত কর্মী এবং প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত উন্নয়নের মতো অবকাঠামো ব্যয়বহুল এবং নিশ্চিতভাবে তহবিলের প্রয়োজন।
দেশে সর্বোত্তম সম্ভাব্য উপযোগিতা অর্জনের জন্য তহবিল বরাদ্দ করে সতর্ক এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী এবং টেকসই ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চার ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা সম্ভব। তবে, এখনও পর্যন্ত মৌলিক এবং প্রায়শই সাধারণ অবকাঠামোর বাইরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পিছনে কোনও বাস্তব চিন্তাভাবনা নেই বললেই চলে। নানামাত্রিক জটিলতা অনেক উদ্ভাবনী উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করে, যা অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন খাতকেও ব্যাহত করে।
বাংলাদেশে পর্যটনের বিভিন্ন দিক তদারকি করার জন্য অনেকগুলো সংস্থা রয়েছে, যা ইতিমধ্যেই অনেক বেশি এবং প্রায়শই যুক্তির বাইরে বলে মনে হয়। অনেক অ্যাডভেঞ্চার কার্যকলাপকে ‘ক্রীড়া’র অংশ হিসাবেও বিবেচনা করা হলেও বাংলাদেশে অস্বাভাবিক অনেক ক্রীড়া কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের কোন নীতিমালা নেই। তাই অ্যাডভেঞ্চারের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার জন্য কোন সংস্থা নিযুক্ত না থাকায় এসবের সমাধান জটিল। এর ফলে অনেক ইতিবাচক ধারণার বিকাশ কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি শুরুর আগেই অ্যাডভেঞ্চারের বহু উদ্যোগ থেমে যায়।
তাছাড়া, নিরবচ্ছিন্ন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন পর্যটনের কারণে পরিবেশের অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য শৈশব থেকেই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সকল বাণিজ্যিক ট্যুর অপারেটরদের অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা উচিত।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের জানান, বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশে এসে পর্যাপ্ত সেবা না পেলে দ্বিতীয়বার সে পর্যটক আর বাংলাদেশে আসবেন না। সেজন্য আমরা পর্যটনখাতে দক্ষ লোকবল তৈরিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। ২০৩০ সাল নাগাদ পর্যটন খাতে ৭২ লাখ ৮৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আশা করছি অ্যাডভেঞ্চারের জন্য সেবাদানের লক্ষ্যে পর্যটন খাতে পৃথক মানবসম্পদ তৈরি সময়ের সাথে সাথে সম্ভব হবে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: