• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কমলদহ ট্রেইল

অনিন্দ্যসুন্দর জলপ্রপাতে একদিন

মাজহারুল ইসলাম শামীম

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ০০:৩৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
অনিন্দ্যসুন্দর জলপ্রপাতে একদিন

সংগৃহীত ছবি

কমলদহ ঝর্ণার ট্রেইল মোটামুটি অপরিচিত একটা ট্রেইল। অসাধারন এই ট্রেইলে বড় কমলদহ ঝর্ণা আছে। বড় কমলদহ ঝর্ণাতে আবার আছে ৪-৫ টা বড় এবং মাঝারি ঝর্না। অনেক দূর এগিয়ে বামে ডানে দুইদিকেই ঝর্ণা আছে। এরমধ্যে বামে অনেকদুর এগিয়ে আবার পথ দুইভাগ হয়ে যায়। দুইভাগেই কয়েকটা ঝর্না আছে যার মধ্যে একটা ৩ স্টেপ এর বিশাল ঝর্ণা (উচ্চতা ১২০-১৪০ ফুট)। বড় কমলদহ ঝর্ণা বর্ষাকালে খুবই বিপদজনক। তাই বর্ষার একদম শেষে যাওয়াটাই ভালো। ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য খুবই ভালো জায়গা হতে পারে এটি। বড় কলমদহ ট্রেইলে দুইটা ঝর্ণা রূপসী এবং ছাগল কান্দা ঝর্ণা। দুটিই কাছাকাছি আছে।

 

বড়দারোগার হাট, কলমদহ, মিরসরাইয়ে ঝর্ণা দুটির অবস্থান। মিরসরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোলে এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাত। মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝর্ণাগুলোর চেয়ে এই ঝর্ণায় যাওয়া অনেকটাই সহজ। সৌন্দর্য্যে কোনো অংশেই খৈয়াছড়া, নাপিত্তাচড়া ঝর্ণার চেয়ে কম না। এই ঝর্ণার যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছড়া, দুপাশের দণ্ডায়মান পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মত ঢালু ছড়া, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝর্ণা রূপসীর সৌন্দর্য্যকে অন্যান্য ঝর্ণা থেকে আলাদা করেছে। এই ঝর্ণার নাম শুনে প্রতিদিন ছুটে আসছে শতশত ভ্রমণ পাগল মানুষ।

এক কথায় বলা চলে, রূপসী ঝর্ণা যেনো তার রূপ দিয়ে মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে। রূপসী ঝর্ণার অনিন্দ সুন্দর রূপের কারণের স্থানীয়রা একে রূপসী ঝর্না নাম দিয়েছে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের আরেক নাম বড় কমলদহ রূপসী ঝর্ণা। আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝর্ণার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নুপুরধ্বনি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। রূপসী র্ঝণা প্রথম দেখেই তার রূপে পাগল হবে যে কেউ। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। রূপসী ঝর্ণার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ঝর্ণার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে।

রূপসী ঝর্ণার অনিন্দ সুন্দর রূপের কারণের স্থানীয়রা একে রূপসী ঝর্না নাম দিয়েছে

এমন এক রূপময় ঝর্ণা দেখার জন্য আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করছি। যেনো রূপসী ঝর্ণায় অবিরামভাবে গড়িয়ে পড়া স্বচ্ছ পানির শীতল পরশ নিতে আমরা ফেনী সরকারি কলেজের ৪ জন শিক্ষার্থী বন্ধু ( আমি,রিজভী, সাজিদ,সুজন) মিলে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফেনী থেকে রওনা দিই। বড় দারোগার হাটে বাস থেকে নেমে আমরা ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য কিছু শুকনো খাবারসহ পানির বোতল কিনে নিলাম। এরপর ১০ মিনিট পায়ে হেঁটে রূপসীর ঝর্ণা স্পটের নিকট পৌঁছাই। সেখানে থাকা একটি হোটেলে কথা বলে, সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হোটেল কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়ে এবং দুপুরের খাবার অর্ডার করে ঝর্ণার দিকে রওনা দিই।

দুই পাশে সুবিশালভাবে দন্ডায়মান সবুজ পাহাড়ের মধ্যে স্বচ্ছ পানির শীতল জলধারা দিয়ে হাঁটার সময় অনন্য অনুভূতি সবাইকে উদ্বেলিত করে। রূপসী ঝর্ণার রয়েছে ৩টি আলাদা আলাদা ধাপ। এরা বড় কমলদহ, ছাগলকান্দা ও পাথর ভাঙ্গা ঝর্ণা নামে পরিচিত। প্রথম ধাপের ঝর্ণাটি অনেকটা বড় একটি ঝর্ণার মতো। এই ঝর্ণাটা অনেকটা খাড়া পথ বেয়ে নেমে পড়ছে। এটি আসল রূপসীর বাইরের রূপ। প্রথমধাপের ঝর্ণাটিতে পৌঁছে সবাই স্বচ্ছ জলধারায় নিজেদের ভিজিয়ে নেয়। এই প্রথম ধাপটি বেয়ে উঠলে একটি বড় পাথর রয়েছে। ১০ ফিটের খাড়া এই পাথরটা বেয়ে উপরে উঠে আরও চমৎকার সৌন্দর্য নজর কাড়ে। সম্মুখে রয়েছে বৃক্ষ, ফুল, লতা-পাতা ঘেরা বিশাল ঝিরিপথ (পাহাড়ের পানি নামার পথ)। ঝিরিপথ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন কোনো গুহার মধ্যদিয়ে হেঁটে হেঁটে রহস্যভেদ করছি আমরা। ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া যাবে দুটি পথ। এক পথের আকার বড়, আরেক পথের ছোট। বড় পথ ধরে একটু গেলেই রূপসীর মূল ঝর্ণা।

অনেক দূর থেকেও আমাদের কানে ভেসে আসছিল ঝর্ণার পানি পড়ার ধ্বনি। এই রূপসী ঝর্ণার ধ্বনি ও জলধারা যে একবার দেখছে সে বারবার দেখতে চাইবে। চলার পথে দেখা পেয়েছি নানা রকম পাখ-পাখালি। রূপসীর জলধারা মুহূর্তেই ভুলিয়ে দিয়েছে আমাদের ভ্রমণের সব ক্লান্তি। ৫০ ফিট উপর থেকে বয়ে পড়া ঝর্ণার সুমধুর ধ্বনি আর রূপসীর জলুস যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পাথর বেয়ে পড়া স্বচ্ছ জলের অমিয় ধারা মুহুর্তেই আপ্লুত করেছে আমাদের ভ্রমণপিপাসু মন। রূপসীর রূপের সুধায় পরিতৃপ্ত করেছে আমাদের তরুণ মনকে। প্রায় চার ঘণ্টার ঝর্ণা ভ্রমণ শেষে বড় কমল এলাকার কুড়ে হোটেলে এসে আমরা ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করি। গ্রামীণ এলাকায় হোটেলগুলোতে বহু মানুষের গোসলের ব্যবস্থা ও জিনিসপত্রের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই ভালো। তাদের আন্তরিকতা আমাদের আবার যেতে আগ্রহী করে তুলেছে। এভাবে আমাদের রূপসী ঝর্ণার পার্ট শেষ হলো।

আমরা ফেনী সরকারি কলেজের ৪ জন শিক্ষার্থী

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন বাসে (ভাড়া মানভেদে ৪০০-১২০০ টাকা)। প্রথমে সীতাকুণ্ড এর বড় দারোগারহাট বাজারে নামতে হবে। এছাড়াও ট্রেনে ফেনী বা চট্রগ্রাম নেমে আসতে পারবেন। চট্রগ্রামের শুভপুর বা অলংকার থেকে বাসে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম (কদমতলী শুভপুর ষ্টেশন) থেকে চয়েসে যেতে পারেন, ভাড়া ৮০ টাকা। অন্য উপায়েও যাওয়া যায় মিনিবাসে করে। বড় দারোগার হাট থেকে লেগুনাতে ইট ভাটার পর্যন্ত। এর পরের রাস্তা দিয়ে পূর্ব দিকে ২০-২৫ মিনিটের হাটা পথ। বাকি পথ ছড়া ধরে গেলেই হবে। তাছাড়া ও দূর থেকে পাহাড় এবং ঝর্ণার পানির আওয়াজ শুনা যায় বিধায় পথ খুঁজে নিতে কষ্ট হয় না।

কোথায় থাকবেনঃ
মিরসরাইতে থাকার জন্য ভালো কোন আবাসিক হোটেল নেই, তাই আপনাকে সীতাকুন্ডে থাকতে হবে। যদিও সীতাকুন্ডেতেও তেমন ভালো মানের আবাসিক হোটেল নেই। বাজারের ভিতরে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। আমাদের এক দিনের ট্যুর ছিলো বিধায় থাকার ঝামেলায় পড়তে হয় নি। দূর থেকে যারা আসবে তাদের সীতাকুণ্ড বাজারে যেকোনো মানের হোটেলে থাকতে পারেন।

কোথায় খাবেনঃ
বড়দারোগাহাট, বড়কমলদহ ও কমলদহ বাজারে খাওয়ার হোটেল রয়েছে। আরো ভালো হোটেলে খাওয়ার জন্য সীতাকুন্ড উপজেলা সদরে বিভিন্ন রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। তাছাড়া যারা আমাদের মতো দিনের ট্যুর দিবেন তারা ঝর্ণা যাওয়ার পথের যেসকল রেস্তোরাঁ আছে সেগুলো তে খেয়ে নিতে পারেন। আর যারা দূর থেকে আসবেন তারা যদি রাত্রি যাপনের জন্য হোটল রুম ভাড়া নেন তাহলে সেখানের আশেপাশে ও পাবেন খাবারের রেঁস্তোরা।

অবশেষে একটি কথা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় আমরা কোনোভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবো না। অন্য ভ্রমণ পিপাসুদেরও সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকবো।

লেখক : শিক্ষার্থী
 

মন্তব্য করুন: