জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: ৪ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব করবে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী

জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার দিনব্যাপী ৩৬ জুলাই সাংস্কৃতিক উৎসব করবে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। “জুলাই জাগরণ” শিরোনামে এই সাংস্কৃতিক উৎসব আগামী ১ আগস্ট শুরু হয়ে শেষ হবে ৪ আগস্ট। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই উৎসব উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছে ইসলামী ঘরনার সাংস্কৃতিক সংগঠনটি।
চার দিনব্যাপী এই আয়োজনে জুলাইয়ের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, মঞ্চনাটক ও আবৃত্তি পরিবেশনা, শহীদ পরিবার ও আহতদের গল্প এবং স্মৃতিচারণ, শিশুদের জন্য কিডস জোন ও খেলার আয়োজন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জুলাই চলাকালে আঁকা গ্রাফিতি প্রদর্শনী ও শহীদদের স্মরণে তৈরি বিশাল ক্যানভাসে বাংলাদেশের মানচিত্র আরও থাকছে ফুড স্টল, গ্রাফিতি ওয়াল, “আয়নাঘর” নামক বিশেষ প্রদর্শনী এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আয়োজন সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে “জুলাই জাগরণ” প্রোগ্রামের পরিচালক আবু মুসা বলেন, এই আয়োজনটি চলবে ৩টি অধিবেশনে, যার প্রথমে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত জুলাইয়ের ওপর নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র, ডকুফিল্ম, বিভিন্ন ক্যাটাগরির ডকুমেন্টারি। তারপর বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহীদ পরিবার, আহত ও অতিথিদের নিয়ে একটি অধিবেশন থাকবে আর সর্বশেষ সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে থাকবে দেশসেরা শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন পরিবেশনা ও মঞ্চ নাটক থাকবে।
জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে আয়োজিত এই সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উপদেষ্টারা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী, অভিনেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিচিত মুখরা উপস্থিত থাকবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে আবু মুসা বলেন, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী এ দেশের মানুষের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনাকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নানা শাখায় কাজ করে যাচ্ছে। দেশের শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়নে সংগঠনটি শুরু থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। বিগত স্বৈরশাসন আমলে সাইমুমকে দেশীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে মনে করা হতো। সেই সময় সাইমুমের ওপর চালানো হয় ভয়াবহ নিপীড়ন, নেতদের একাধিকবার গ্রেফতার করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়, সংগঠনের অফিস থেকে কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, সিডি, ডিভিডিসহ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সংগঠনের প্রতিবাদী কণ্ঠকে দমন করার বহু চেষ্টা চালানো হয়। তবুও সাইমুম থেমে যায়নি। বরং সময়ের ধারায় আরও শক্তিশালী হয়ে গড়ে তুলেছে অসংখ্য শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, যারা এখনও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ও মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ গঠনে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং জুলাইকে হৃদয় থেকে ধারণ করার বার্তা নিয়ে ৩৬ জুলাই কালচারাল ফেস্ট “জুলাই জাগরণ” আয়োজন করছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে সাইমুমের উপদেষ্টা ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সাদিক কাইয়ুম বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও, কালচারাল ফ্যাসিস্ট্রা এখনও আগের মতোই রয়েছে, এদেরকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে না সরালে ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
এ সময় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর বর্তমান পরিচালক শিল্পী জাহিদুল ইসলাম বিগত স্বৈরাচার আমলে সাইমুমের উপর বিভিন্ন নিপীড়ন এবং সাইমুমের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে ও জুলাই গণভ্যূত্থানে সাইমুমের অবদান তুলে ধরেন।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: