তারুণ্যের উৎসব ‘নেক্সাস ফেস্ট ২০২৫’ শুরু, চলবে ৫ দিনব্যাপী

দেশের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি জেলা- চট্টগ্রাম, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং কক্সবাজারের টেকনাফে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘নেক্সাস ফেস্ট ২০২৫’। মানবিক সাড়াদান, জলবায়ু কার্যক্রম, উন্নয়ন ও শান্তি-সম্প্রীতিকে এক সুতোয় গেঁথে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এই অনন্য উৎসবটি আয়োজন করেছে একশনএইড বাংলাদেশ।
স্থানীয় তরুণ সমাজ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে উৎসবের মূল আকর্ষণ- শিল্প ও চমকপ্রদ উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শন, বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং কমিউনিটি সম্পৃক্ততাসহ নানা অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম।
দেশের বিভিন্ন জলবায়ু ঝুকিপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তন, মানবিক সংকট, উন্নয়ন প্রতিবন্ধকতা এবং নানাবিধ সামাজিক সমস্যার মতো বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তরুণদের ঘিরে এই উৎসবের অন্যতম লক্ষ্য- একটি সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই ধরনের সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা। উৎসবের সহ-আয়োজক হিসেবে থাকছে নজরুল স্মৃতি সংসদ (বরগুনার পাথরঘাটা), কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ফর উইমেন (সাতক্ষীরা), ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম (চট্টগ্রাম) এবং সোসাইটি ফর হেলথ এক্সটেনশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (টেকনাফ)।
উৎসবটি যাত্রা শুরু করবে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এবং চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। ২৬-২৭ আগস্ট উৎসবের প্রথম আসর শুরু হবে চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমি ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিদ্যানিকেতন মাঠে। এরপর ২৭-২৮ আগস্ট, সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি এবং বাগেরহাট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয়ে ৩০-৩১ আগস্ট কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ে এই উৎসবের পর্দা নামবে। এই আয়োজনের লক্ষ্য স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পরিবর্তনের মূল কারিগর হিসেবে গড়ে তোলা।
চট্টগ্রাম জেলার কমিউনিটি সদস্য ও শিক্ষার্থী মো: জাবিন বিন সোলাইমান বলেন, “নেক্সাস ফেস্টের মতো একটি মঞ্চ পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। এটি আমাদের মতো তরুণদের জন্য নিজেদের কথা বলার এবং স্থানীয় সমস্যা সমাধানের সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের উদ্ভাবনী সমাধানগুলো এখন দেশের সামনে তুলে ধরতে পারব এবং নিজেদের কমিউনিটির উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখতে পারব।”
এই উৎসবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “নেক্সাস ফেস্ট ২০২৫-এর মূল লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীগুলোর সহনশীলতা বৃদ্ধি করা। এই উদ্যোগ মানবিক কার্যক্রম, জলবায়ু উদ্যোগ, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং শান্তি-সম্প্রীতিকে এক সূত্রে গেঁথে দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই উৎসব সরকারসহ রাষ্ট্রের সকল অংশীদার, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যেখানে সবাই স্বাধীনভাবে নিজেদের মত প্রকাশ, কার্যক্রম পরিচালনা এবং এর সাথে নিজেদের যুক্ত করতে পারবে।”
একশনএইড বাংলাদেশ-এর ইয়ুথ অ্যান্ড জাস্ট সোসাইটি-এর লিড নাজমুল আহসান বলেন, “একশনএইড বাংলাদেশ তরুণদেরকে একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিতে উৎসাহিত করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, জলবায়ু পরিবর্তনকে বিচ্ছিন্নভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়- এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় এবং সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সমাধান করতে হবে। নেক্সাস ফেস্ট হলো তরুণ নেতৃত্বের বিকাশের একটি প্ল্যাটফর্ম, যা এই মানুষদের সংযুক্ত করবে এবং সকল অংশীদারকে অর্থবহ ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।”
উৎসবের মূল আকর্ষণগুলো হলো এর অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম। উৎসবে থাকবে বিভিন্ন শিল্প ও প্রকল্প প্রদর্শনী, যেখানে তরুণ সংগঠন, স্থানীয় সরকার ও অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবনী সমাধান উপস্থাপন করবে। তরুণরা সামাজিক উন্নয়নে গবেষণা, গল্প বলা, বিতর্ক ও নীতি সংলাপের সাহায্যে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরবে। এছাড়া, জারি গান, গম্ভীরা, যাত্রাপালা ও থিয়েটারের মতো লোকজ পরিবেশনা স্থানীয় সংস্কৃতি ও কণ্ঠস্বরকে সৃজনশীলভাবে তুলে ধরবে। সকলের স্তরের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উৎসবে রাখা হয়েছে মেয়েদের সাইকেল র্যালি এবং বাবা-মেয়েদের ফুটবল ম্যাচের মতো ব্যতিক্রমী আয়োজন। কমিউনিটি সম্পৃক্ততা বাড়াতে র্যালি, লোকসংগীত, খেলাধুলা ও সৃজনশীল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হবে, যা সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি বজায়ে সাহায্য করবে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: