রাজনৈতিক দলে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব কতদূর?

মো. হুমায়ূন কবীর:
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব ধরণের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখার শর্ত ছিল। তবে কোনো দলই নির্ধারিত সময়ে সেই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এই শর্ত পূরণ করার জন্য বাড়তি সময় চেয়েছে প্রত্যেকটি দল। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদেরকে সময় বাড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে। এদিকে রাজনৈতিক দলে নারীদের পিছিয়ে পড়ার জন্য সামাজিক প্রেক্ষাপট ও নারীরা নিজেরাও দায়ী- এমনটা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইসি সূত্র জানায়, সব প্রক্রিয়া শেষে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন হলেই কত সময় পাচ্ছে দলগুলো তা চূড়ান্ত হবে। ইসির প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন ও সংসদে উপস্থাপনের পর আইন সংশোধন হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলই নারী প্রতিনিধির কোটা পূরণ করতে পারলো না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে তো পারেনি। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার সঙ্গে সঙ্গে নারী নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার মানসিকতা সমাজ যারা পরিচালিত করেন তাদেরও ধারণ করতে হবে। দলের মধ্যে এবং পরিবারের মধ্যে তার চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
'আর শুধু চাইলেই তো আর পারবে না। বাংলাদেশের একটা প্রেক্ষাপট আছে। নারীরা যে এগিয়ে আসছে তাও তো না। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটটা তো পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের যে সামাজিক বাধাগুলো আছে, পারিবারিক বাধাগুলো আছে। এগুলো অতিক্রম করে মেয়েদের আসতে হবে না? ২০২০ আমাদের একটা টার্গেট ছিল। অনেক দল নারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে।' যোগ করেন তিনি।
এ জন্য দলগুলোকে বাড়তি সময় দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। এটা এখনো অনুমোদন হয়নি। রাজনৈতিক দলেরও সময় বাড়ানোর দাবি ছিল।
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। আরপিও ৯০ খ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির সব দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ২০২০ সাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। প্রতিশ্রুতি পূরণে ইসি দফায় দফায় তাগাদা দিলেও বেঁধে দেওয়া সময়ে কোনো দলই তা করতে পারেনি।
এ বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আইন সংস্কার নিয়ে জনমত নিয়েছে ইসি; তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আরও সময় দেওয়ারও প্রস্তাব আসে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, দলগুলোর জন্য বেঁধে দেওয়া সময় তো শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে মতামতও নেওয়া হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আরও সময় দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ইসির নিবন্ধনে বর্তমানে ৩৯টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন সংশোধন করে আরও সময় দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সব কিছু পর্যালোচনা করে পুরো প্রক্রিয়া শেষে কত সময় পাবে দলগুলো তা আইন সংশোধন হলেই চূড়ান্ত হবে।
অধিকাংশ দলই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। অনেকে সময়ও চেয়েছে। সব বিবেচনায় নিয়ে দলগুলোকে সুযোগ দেওয়াই ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে যোগ করেন তিনি।
বিভি/এইচকে/এমএস