তরুণদের ভাবনায় ৭ মার্চের ভাষণ

৭ মার্চ বাঙালির জাতীয় জীবনের অনন্য অধ্যায়। স্বাধীনতার সূচনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত সে ভাষণে। ঐতিহাসিক সেদিনের সুবর্ণ জয়ন্তী আজ। দিনটি তরুণ প্রজন্মের কাছে কেমন? শুধুই কি একটি দিন, না বিশেষ কিছু। তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন হাসান ওয়ালী।
বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে হতে হবে আপোষহীন
ফারহানাহ সানজিদাহ
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
আজ, এই যে স্বাধীনতার ৫০ বছরটিতে এসে দাঁড়িয়েছি, সেই স্বাধীনতার সূচনা এই ৭ ই মার্চের ভাষণ দিয়েই। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিকাল ২ টা ৪৫ মিনিটে মাত্র ১৮ মিনিটের তার ভাষণে তুলে ধরেছিলেন, তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর নিপীড়নের, শোষণের, বৈষম্যের কথা। সাত কোটি মানুষকে ডাক দিয়ে ছিলেন, স্বাধীনতার জন্য। তিনি তার এই ভাষণের মাধ্যমেই বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করে ছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন, এক বৈষম্যহীন, শোষণ- নিপীড়ন-হীন, স্বাধীন - সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের জন্য। যারই ফলশ্রুতিতে, বাংলার স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে আর ৩ লক্ষ নারী হারিয়ে তাদের সম্ভ্রম। কিন্তু এতো ত্যাগ ও তিতিক্ষার নয়টি মাসের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে যে স্বাধীনতাকে আমরা আমাদের করে পেলাম, তা কি টিকে আছে আমাদের জাতীয় জীবনে, আমরা কী সত্যিই স্বাধীন? স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পরে এসেও কি আমরা পেরেছি বৈষম্যহীন, শোষণ- নিপীড়ন-হীন বাংলাদেশকে দেখতে? তাই, আজকের যুব সমাজকে ভাবতে হবে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে নিয়ে, তৈরি করতে হবে এক
বৈষম্যহীন, শোষণ- নিপীড়ন-হীন, বাংলাদেশ। অন্যদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেও বঙ্গবন্ধুর মতো মৌলিক বিষয় নিয়েও অনেকে তর্ক-বিতর্ক করেন। আজ সুবর্ণ জয়ন্তী ৭ই মার্চের ভাষণের সুবর্ণ জয়ন্তী দিনে তরুণ প্রজন্মকে শপথ নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে হতে হবে আপোষহীন।
৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতা, মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের মহাকাব্য
মামুন সোহাগ
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের মহাকাব্য; বাঙালি তথা বিশ্বের সকল লাঞ্ছিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সনদ। ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের চূড়ান্ত প্রেরণা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল এবং বিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত ভাষণ। ভাষণটি যতবার শোনা হয়, ততবারই নতুন ভাবনা তৈরি হয়। এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য একেকটি স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে, নতুন বার্তা দেয়। ১৮ মিনিটের একটি ভাষণ একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এই কালজয়ী ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে এবং বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার অনির্বাণ শিখা হয়ে অফুরন্ত শক্তি ও সাহস যুগিয়ে আসছে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ‘‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই। তবে তার রেখে যাওয়া প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা মুহূর্ত আজকের তরুণদের ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে। শক্তি যোগাবে।
৭ মার্চের ভাষণ শুনলে আবেগাপ্লুত হই
সাজিয়া আফরিন সৃষ্টি
শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ডাকটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দান থেকে দিয়েছিলেন। তাঁর সেদিনের ভাষণে ছিল মুক্তিযুদ্ধের ডাক এবং এই ভাষণের জন্য বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নিয়ে আসে স্বাধীনতা। আজ আমরা যে স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করছি সেটি এসেছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক থেকেই। আমাদের স্বাধীনতার ডাক, বাঙালির ঐক্যবদ্ধতা,মুক্তি, স্বাধীনতা এবং স্বাধীন রাষ্ট্র সকল কিছুই এসেছে ৭ ই মার্চের ভাষণ থেকে। শিক্ষার্থী হিসেবে, সবসময় বঙ্গবন্ধুকে জানার আগ্রহ আছে আমার। বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো বিশেষত ৭ই মার্চের ভাষণ শুনলে আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। একধরণের গর্ব আর ভালোলাগা কাজ করে। ৭ই মার্চের দিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা।
এগিয়ে যেতে হবে নতুন বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে
লাব্বী আহসান
শিক্ষার্থী, অনার্স ১ম বর্ষ, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি
আমার চোখে ৭ই মার্চ মানেই অন্যতম প্রেরণার উৎস। অনেকেই এই দিনটির গুরুত্ব এখনও বুঝে না। আমরা যখন অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে ভুলে যাই, চোখের সামনে অন্যায় দেখেও প্রতিবাদ করিনা, তখন ৭ ই মার্চের ভাষণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বাঙ্গালীর সংগ্রামী চেতনার কথা। ৭ই মার্চ আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহের দিন। এই বিদ্রোহ পাকিস্তানি অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন আমাদের শিখিয়েছিলেন যে আমরাও প্রতিবাদ করতে জানি। সেদিন তিনি স্বাধীনতার ডাক না দিলে হয়ত বাঙ্গালীর স্বাধীনতা এত তরান্বিত হতো না।
তরুণদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ হতে পারে শক্তি সঞ্চারে মন্ত্র। জাতির পিতার ভাষণ শোনার পর এদেশের মানুষেরা নতুন ভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলো। সোনার বাংলাদেশের বীজ বপন করেন এইদিন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বাঙালি জাতি লড়াই করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে।
আজ যখন চারদিকে এত অন্যায় দেখেও আমরা প্রতিবাদ না করে চুপ করে থাকি, তখন ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের নতুন করে লড়াই করার প্রেরণা যোগাতে পারে। এই ভাষণ মুখস্থ করে বা বইয়ে পড়েই আমাদের কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে না। বরং সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নতুন বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের আজও অনুপ্রাণিত করে
রায়হান হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা কলেজ
বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি; এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি পুরো জীবন জাতি ও দেশের জন্য শুধু উৎসর্গই করে গেছেন। নিজের ও পরিবারের জন্য বলতে গেলে তেমন কিছুই করেননি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তিনি মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন অকাতরে, চিরদিন পেতে থাকবেন তা। পুরো বাঙালি জাতি তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ। তার ত্যাগ-তিতিক্ষা-ই আজকের বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। মানুষকে ভালবাসা এবং তাদের জন্য কিছু করাই ছিল জাতির জনকের জীবনের ব্রত।
আজকে আমার যারা তরুণ তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন হতে এ শিক্ষাটিই গ্রহণ করি। একাত্তরে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রামের। সে এক ডাকে প্রাণ বাজি রেখেছিল বাংলার সাধারণ কিন্তু ভীষণ সাহসী তরুণ সন্তানরা। তাঁর স্বাধীনতার ডাক ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতির নির্দেশে পাল্টে যায় পুরো দেশের চিত্র।
একাত্তর আমাদের, অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের কাছে কেবল শোনা গল্প। মা, বাবার কিংবা যুদ্ধে অংশ নেওয়া স্বজনের স্মৃতিগল্প। সেদিন আমাদের জন্ম হয়নি। দেখিনি ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো। শুনিনি সেদিন কবির কণ্ঠে সেই কবিতাখানি, অবাক হইনি তাঁর দৃপ্ত স্বাভাবিক পথচলায়। ভাবতেও পারি না, মাত্র একজন লোক কী করে কোটি কোটি বাঙালিকে মোহিত করেছিলেন। হোক না তা আমাদের কাছে অন্যের মুখে শোনা গল্প। তবু তো বাস্তব।
৭ই মার্চ আজকের তরুণদের দেশের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করে। তাদের চিন্তা চেতনায় মননশীলতায় ৭ই মার্চ কাজ করে ৭ই মার্চের ভাষণ প্রগতিশীল সমাজ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। সেই জয়বাংলা স্লোগান আজও ধ্বনিত হয় পৃথিবীর সব খানে যে খানে বাংলাদেশীরা থাকে। ৭ই মার্চ এর ভাষণের কারণে পাকিস্তানী ভূত আজ আমাদের ঘাড়ের উপর পড়তে পারেনি।
‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি হয়ে গিয়েছিল একটি রণহুঙ্কার। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ঐ নামেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আর ছিল ‘জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধুর মুখ নিঃসৃত ‘জয় বাংলা ‘ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের রণধ্বনি। তাই তো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের আজও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।