• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

আমার লেখক হয়ে উঠার নেপথ্য গল্প

জসিম মল্লিক

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৮ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
আমার লেখক হয়ে উঠার নেপথ্য গল্প

আমার লেখক হয়ে ওঠার পিছনে বরিশালের কয়েকজন মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিরাট ভূমিকা আছে। সেই মানুষগুলোর কথা আমার কখনও বলা হয়নি। আমি তখন বরিশাল বিএম কলেজে পড়ি। পত্রপত্রিকায় চিঠিপত্র লিখি। বিচিত্রায় ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দেই। পত্রমিতালী করি। প্রতিদিন ডজন ডজন চিঠি আসে আমার কাছে। আমি সেই চিঠির উত্তর দেই। বেশিরভাগ চিঠি মেয়েদের। বিএম কলেজে আমার অনেক মেয়ে বন্ধু। আমার ডিপাৰ্টমেন্টেৱ যেমন তেমনি অন্য ডিপাৰ্টমেন্টের মেয়েদের সাথেও আমার সখ্যতা। বিএম কলেজ দেশের খ্যাতিমান কলেজ। মেধাবী শিক্ষাৰ্থীৱা পড়ে এখানে। মেধাবী শিক্ষকগন শিক্ষা দেন। লেখালেখির প্রতি  আমার আগ্রহ দেখে কয়েকজন শিক্ষক আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। উৎসাহ দিতেন। কলেজের সাংস্কৃতিক কৰ্মকান্ডে আমি অংশগ্রহন করি। কলেজ ম্যাগাজিনে লিখি। 



বিচিত্রা ফোরাম ক্লাব তখন দেশজুড়ে খুবই আলোচিত। বিচিত্রায় সামান্য এক লাইন দুলাইন লেখা ছাপা হলে আলোচনার ঢেউ ওঠে। বরিশালে বিচিত্রা ফোরাম ক্লাব গড়ে উঠে পঞ্চপান্ডবের নেতৃত্বে। পঞ্চপান্ডবের একজন ছিলেন বরিশালের সাংস্কৃতিক ও নাট্য ব্যাক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল। পঞ্চপান্ডব তখন ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপনে খুবই আলোচিত নাম। সে সময় তসলিমা নাসরিন, রফিকউল্লাহ এমরান ইমু, সিউ সুবৰ্ণগ্রাম, রজনী, মাসুদ এমকো, মরবিড, জিয়া খন্দকার প্রমুখরা ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপনে বেশ সরব। ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপন ছাড়াও পাঠকের পাতায় চিঠি লিখি আমি। সেই চিঠি ছাপা হয় নিয়মিত। এছাড়া চিত্রালী, পূৰ্বানী, রোববার, ইত্তেফাক, বেগম, সন্ধানী এসব পত্রিকায় চিঠি লিখি। সৈয়দ দুলালের সাথে তখন থেকেই আমার সখ্যতা গড়ে উঠে। তিনি লেখালেখির জন্য আমাকে খুবই অনুপ্রানিত করতেন। যেকোনো সাংস্কৃতিক কৰ্মকান্ডে আমাকে ডেকে নিতেন। আমি একটা নুতন জগতের সন্ধান পাই। আমার ভিতর যে অন্য একটা আমি আছে সেটা টের পেতেন দুলাল ভাই। তিনি আমাকে সাহসী করে তুলেছিলেন। যুদ্ধ করে কিভাবে টিকতে হয় শিখিয়েছিলেন।

বরিশালের খ্যাতিমান বইয়ের দোকান বুকভিলার রূপক আমার স্কুলের বন্ধু। ক্লাস টু থেকে মাস্টাৰ্স পৰ্যন্ত আমরা একসাথে পড়াশুনা করেছি। রূপক আর আমি মিলে বিচিত্রা ফোরাম ক্লাব বিএম কলেজ শাখা করেছিলাম। দুলাল ভাই আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন। মূলতঃ তার পরামৰ্শেই আমরা ফোৱাম ক্লাব করেছিলাম। রূপক সবসময় আমাকে লেখালেখির জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছে। রূপক তখনও বুকভিলার দ্বায়িত্ব নেয়নি। ফারুক ভাই ছিলেন দ্বায়িত্বে। তা সত্বেও ভাল কোনো বই এলে রূপক আমাকে পড়তে দিত। আমাকে কখনও বই কিনে পড়তে হয়নি। এখনও আমি বরিশাল গেলে বুকভিলায় যাই। রূপক আজও আমার লেখালেখির  অনুপ্রেরণাৱ নাম। বই পড়েই আমার গল্প উপন্যাস লেখাৱ প্রতি আগ্রহ জাগে, অনুপ্রানিত হই। 

বিএম কলেজে পড়ার সময় আমার বন্ধু পান্না এবং শামীম আরা আমার লেখালেখির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছিল। পান্নাও টুকিটাকি লিখত। আমরা লেখা নিয়ে কথা বলতাম। আমি নুতন কিছু লিখলে হোক সেটা চিঠি বা ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপন পান্নাকে আগে পড়তে দিতাম। মেয়েরা যে আমাকে এতো এতো চিঠি লিখত সেই চিঠিও ওকে পড়ে শোনাতাম। আমি কি রিপ্লাই দিয়েছি তাও পান্নাকে পড়তে দিতাম। পান্নার কাছে আমার গোপন কিছু ছিল না। শামীম এবং পান্না দু’জনই আমার ক্লাসের ছিল। আমি লিখি বলে আমার প্রতি শামীমের একটা পক্ষপাত ছিল। আমাকে সবসময় ভাল কিছু লেখার জন্য অনুপ্রেরণা দিত। ভাল ভাল বই এনে দিত, দৈনিকবাংলা থেকে উপসম্পাদকীয়র কাটিং এনে দিত। সবসময় বলত তোমাকে চিঠিপত্রের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, বড় কিছু লিখতে হবে। দৈনিকবাংলা এবং বিচিত্রা এই দুই পত্রিকা ছিল সাহিত্যের প্রতি আমার হাতেখড়ি। সেই পথচলা আজও থামেনি। আজও চেষ্টা করি যাচ্ছি। আমার জগতটা অনেক ছোট আৱ লেখালেখি আমার আনন্দের উৎস। বেঁচে থাকার অবলম্বন। লেখালেখির এই দীৰ্ঘ পথ পরিক্রমায় আমার এই বন্ধুদের কথা আমি সবসময় কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি।

ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২২
 

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2