• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গভীর রাতে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে ধরা, তিন লাখ টাকায় মিললো মুক্তি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ১৫ মে ২০২৪

ফন্ট সাইজ
গভীর রাতে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে ধরা, তিন লাখ টাকায় মিললো মুক্তি

সালিশের মাধ্যমে নির্ধারিত এক নারীর ইজ্জতের মূল্য মাত্র তিন লক্ষ টাকা দিয়ে মুক্তি মিলেছে এক প্রবাসীর। আর সেই অর্থের বিশাল অংশ সালিশকারীদের পকেটে গেছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এমন ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায়। 

সোমবার (১৩ মে) গভীর রাতে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েন প্রবাসী যুবক। পরদিন ১৪ মে মঙ্গলবার রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশের একজন এএসআই এবং উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে এই জরিমানা বা অর্থদন্ড দেন সালিশকারীরা।

এ বিষয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বাংগাবাড়ি ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মৃত বজলুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (৩৪) ও আলিনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মিষ্টু আলীর স্ত্রী (৩০) এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এরই রেশ ধরে সোমবার (১৩ মে) রাতে অসামাজিক কাজের সময় স্থানীয়রা তাদের ধরে ফেলে। পরে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে ওই নারীকে পরিবারের দায়িত্বে দিলেও প্রবাসী যুবক আব্দুল্লাহকে আটক করে রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসে। 

পরদিন মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে বাংগাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম ও আলিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল কাসেম মাসুম এবং পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মো. আব্দুল মালেকের উপস্থিতিতে সালিশ করা হয়। সালিশে ওই নারীর ইজ্জতের মূল্য তিন লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে ছেলে পক্ষকে জরিমানা করে রফা-দফা শেষ করেছে। এদিকে সালিশে দেয়া তিন লক্ষ টাকার সিংহভাগ চেয়ারম্যান ও পুলিশ নিয়েছেন বলে মৌখিক অভিযোগ করে মেয়ে পক্ষ।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই (উপ-পরিদর্শক) আরেফিন বলেন, সোমবার রাতে আলিনগরে একটি বড় ধরনের ঝামেলা হয়েছিলো। আমি ওসি স্যারের নির্দেশে সেখানে গিয়ে একজন আসামিকে ধরে এনে তদন্ত কেন্দ্রে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চলে আসি। এরপরে কি হয়েছে তা আমার জানা নাই।

এদিকে টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে আলিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মাসুম বলেন, সম্পূর্ণ সালিশে আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমাকে ফাঁড়িতে ডাকা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে আমি শুধু কাগজে স্বাক্ষর করে চলে এসেছি। এর আগেও মেয়ে এবং ছেলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকালকে ফাঁড়িতে এ ঘটনার মীমাংসা হয়েছে। মেয়ে নিজ ইচ্ছয় তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে। তবে বাংগাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলামের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে সালিশে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এএসআই আব্দুল মালেক বলেন, ওসি স্যারের নির্দেশে দুই চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সামান্য মুচলেকা নিয়ে আব্দুল্লাহকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বড় কোন আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যদি কিছু হয়ে থাকে তবে তাদের নিজেদের মধ্যে হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহম্মেদের সাথে। তিনি বলেন, আলিনগরে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটা ঝামেলা চলছিল। জনতা উত্তেজিত হয়ে বড় ধরনের ঝামেলার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় ফোর্স পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রবাসী ওই ছেলে আব্দুল্লাহকে আটক করে আনা হয়েছিল। তারপরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুইজনেই বিবাহিত যার কারণে তারা অভিযোগ দিতে চাইনি। কেউ যদি অভিযোগ দেই। তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব। আর টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: