ঈদ যাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত ১৩ কি.মি. যানজটের শঙ্কা

ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারে দুর্ঘটনা ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজটের আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি রয়েছে। মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ না হওয়ায় ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে থ্রি-হুইলার দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে।
যাত্রী সাধারণ ও চালকরা যানজট নিরসনে মহাসড়কেও ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছে। মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের গাফলতি ও ধীরগতির কারণে দীর্ঘদিনেও সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের চার লেনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। যার কারণে বিগত কয়েক বছর যাবত ঈদ যাত্রায় যানজটের নাকালে চালক যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চালকরা জানান, পুলিশের নির্দেশনা মেনে গাড়ি চালালে যানজটের সম্ভাবনা খুবই কম। ফিটনেসবিহীন ও লক্কর ঝক্কর যানবাহন যাতে না চলাচল করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেনে ঠিকভাবে আসতে পারলেও এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত দুইলেনে প্রবেশ করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।
মহাসড়কের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজান সারোয়ার জানান, সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ঈদুল ফিতরে চার কিলোমিটার ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হয়। এবারের ঈদে নতুন করে আরও চার কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় ওই চার কিলোমিটারও ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হবে। এবারের ঈদে ঘরমুখী মানুষ খুব একটা সমস্যায় পড়বেন না বলে মনে করেন তিনি।
বিগত তিনটি ঈদযাত্রায় মহাসড়ক পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজট বেড়েছে। গত বছর ঈদুল ফিতরে মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০টি। একই বছরের ঈদুল আজহায় দুর্ঘনার সংখ্যা ৫৯টি এবং চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে এক বছরের ব্যবধানে দুর্ঘটনা সংখ্যা ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩টি। গত ঈদযাত্রায় ৪ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৫৩টি গাড়ি বিকল ও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে ঈদ যাত্রার শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বাসেক) বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, এবারের ঈদ যাত্রায় মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে তারা সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঈদুল ফিতরের ন্যায় টোলবুথ বাড়ানো ও মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোলবুথ বসানো হচ্ছে।
এদিকে, মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের উদ্যোগে গত ২৬ মে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরিবহন সংশ্লিষ্ট সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারি-বেসরকারি দপ্তর এবং সুধীজনদের উপস্থিতিতে মহাসড়কে যানজট নিরসনে মতামত গ্রহণ করা হয়। পরে করণীয় নির্ধারণ করে প্রত্যেকটি দপ্তরের কাজ আলোচনার মাধ্যমে বণ্টন করে দেওয়া হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে (মহাসড়কে) কাজ শুরু করে দিয়েছে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে বিশেষ নজদারীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন একমুখী করে রাখার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখা এবং ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ভূঞাপুরের লিংক রোড় হয়ে এলেঙ্গায় উঠার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাসেক’র বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নিবার্হী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, সেতু দিয়ে যত ফিটনেসবিহীন যানবাহন কম আসবে- ততই দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল কম হবে। এতে যানজটের আশঙ্কাও কম থাকবে। সেতুর পাশে যত যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকবে- ততই যানজটের লক্ষণ থাকে। এজন্য ভাঙতি টাকা দিয়ে টোল পরিশোধ করতে চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। এতে সেতুর টোল পরিশোধ করতে ভাঙতির জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা। তাছাড়া ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারও টোলবুথ বাড়ানো এবং মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোলবুথ স্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে অন্য সময়ের চেয়ে মহাসড়কে পশুবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে সেতু দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ঈদুল আজহায় মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, এ বছর বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। পশুবাহী ট্রাকগুলো ইতোমধ্যে চলাচল শুরু করেছে। এরমধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে মৌসুমী ফলের ট্রাকভর্তি গাড়ি ঢাকার দিকে যাচ্ছে। এতে পশু ও মালামাল পরিবহন বেড়েছে। ফলে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ এমনিতেই বেড়ে গেছে। মহাসড়কে পরিবহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের সাত শতাধিক সদস্য পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে পুলিশ মাঠে থাকে সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, সেতুর উপর যানবাহনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে কিভাবে সেটাকে অতিদ্রুত রিমুভ করা যায়- সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আজাহায় মহাসড়কে মাটিবাহী ট্রাক ও কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া রাস্তার পাশে পশুর হাট না বসিয়ে রাস্তা থেকে দূরে বসানোর নির্দেশে দেওয়া হয়েছে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: