• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

প্রশাসক না থাকায় স্থবির গোয়ালন্দের দুই ইউনিয়নের কার্যক্রম, চরম দুর্ভোগ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি  

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২৮ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২৩:১২, ২৮ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
প্রশাসক না থাকায় স্থবির গোয়ালন্দের দুই ইউনিয়নের কার্যক্রম, চরম দুর্ভোগ

তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের। কিন্তু, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দুই ইউনিয়ন যথা- দৌলতদিয়া ও দেবগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসক না থাকায় পরিষদের কার্যক্রম প্রায় পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। একইসঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও।

জানা গেছে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর দৌলতদিয়া ইউনিয়নে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ জামান এবং দেবগ্রামে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। পাশাপাশি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে সেবা কার্যক্রম চালু রাখতে স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তবে, দৌলতদিয়ার প্রশাসক গত ৩০ জুন বদলিজনিত কারণে দায়িত্ব ছাড়েন এবং দেবগ্রামের প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হয় ৪ জুলাই। এরপর থেকে নতুন প্রশাসক নিয়োগ না হওয়ায় পরিষদের সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) সরেজমিনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা বহু মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ এসেছেন ট্রেড লাইসেন্স নিতে, কেউ জন্মনিবন্ধনের ভুল সংশোধনে, আবার কেউ বা ওয়ারিশ সনদের জন্য। কিন্তু, কোনো চেয়ারম্যান বা প্রশাসক না থাকায় ফাইল জমা নেওয়া বা সাক্ষরের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

দৌলতদিয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাইনদ্দিন পাল বলেন, জমির নামজারি ও খারিজের জন্য দ্বৈত প্রত্যয়ন দরকার। ৭ দিন ধরে আসছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

পূর্বপাড়া গ্রামের মোছা. শিরিন আক্তার জানান, মেয়ের জন্মসনদে ভুল আছে। সংশোধনের জন্য কয়েকবার এসেছি, কিন্তু কেউ নেই, কাজ বন্ধ।

সেবা নিতে আসা মো. সজীব হোসেন বলেন, মায়ের মৃত্যুসনদের জন্য ৬ দিন ধরে ঘুরছি, এখনও পাইনি।

দৌলতদিয়া ইউপি সূত্র জানায়, গত ২০ দিনে নাগরিক সনদের জন্য ১৬০টি, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ১০টি, ওয়ারিশ সনদের জন্য ১৭টি এবং জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু, প্রশাসক না থাকায় এসব আবেদনের কোনোটিই নিষ্পত্তি হচ্ছে না। একই অবস্থা দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদেরও।

ব্যাংকিং কার্যক্রমেও এর প্রভাব পড়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক গোয়ালন্দ শাখার রিলেশনশিপ কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন বলেন, ট্রেড লাইসেন্স ও ওয়ারিশ সনদ না থাকায় ব্যাংকের অনেক গ্রাহক ঋণ কার্যক্রমসহ নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

দেবগ্রাম ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ বলেন, চেয়ারম্যান বা প্রশাসক না থাকায় কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। তবে, আমরা পূর্বের কিছু নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু জরুরি কাজ করছি।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মেনামুল হোসেন মিন্টু বলেন, চেয়ারম্যান বা প্রশাসক না থাকায় সই-সংক্রান্ত জটিলতা হচ্ছে। তবে, সেবা প্রত্যাশীদের কাগজ ঠিকঠাক করে রাখছি। দ্রুতই প্রশাসক আসলে সেসব নিষ্পত্তি করা যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় দফা প্রশাসকদের মেয়াদ ৪ জুলাই শেষ হয়েছে। এর আগেই দৌলতদিয়ার প্রশাসক বদলি হন। নতুন প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেবাপ্রত্যাশীরা বলছেন, প্রশাসক নিয়োগে এত দীর্ঘসূত্রতা অগ্রহণযোগ্য। ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে স্থানীয় সরকারের মূল ভিত্তি। সেখানে কার্যক্রম বন্ধ থাকলে জনগণের আস্থা দুর্বল হয়। দ্রুত নিয়োগ দিয়ে জনদুর্ভোগের অবসান ঘটানোর দাবি জানান তারা।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: