ঘুষ গ্রহণের মামলায় সাবেক সাঁটলিপিকারের ৭ বছরের কারাদণ্ড

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সাঁটলিপিকার এ.কে.এম শহীদুজ্জামানকে ঘুষ গ্রহণের একটি মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুদকের দায়ের করা মামলায় সোমবার (২৮ জুলাই) খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোঃ আশরাফুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ ইয়াছিন আলী।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি শহীদুজ্জামান সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার পারকুমিরা গ্রামের মোঃ সোহরাব উদ্দিনের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই সাতক্ষীরা সদর থানাধীন দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ৩ লাখ টাকা অনুদান পাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মেহেদী হাসান জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। আবেদনটি নিয়ে তিনি এসময় সাঁটলিপিকার শহীদুজ্জামানের অফিস রুমে যান। শহীদুজ্জামান আবেদনপত্রটি গ্রহণ করে সিল ও স্বাক্ষর করে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলেন, অনুদান পাইয়ে দিলে সেক্ষেত্রে তাকে শতকরা ৩০ শতাংশ হারে টাকা দিতে হবে। সে সময়ে ওই প্রধান শিক্ষক স্কুলের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে তাকে তখন ১০ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শহীদুজ্জামান তাকে বলে, স্কুলের নামে আরও ২ লাখ টাকা পাইয়ে দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে তাকে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক যোগাযোগ করলে শহীদুজ্জামান তাকে ঘোরাতে থাকে এবং বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ মে অভিযুক্তের সাথে দেখা করলে ওই শিক্ষককে বাকি টাকা দ্রুত দেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। বিষয়টি অনৈতিক বিবেচনা করে প্রধান শিক্ষক দুর্নীতি দমন কমিশনের শরণাপন্ন হন। ওই বছরের ৩ জুন প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান এ ব্যাপারে খুলনার দুদক পরিচালকের নিকট আবেদন করেন। পরে তাকে গ্রেফতারের জন্য দুদক কর্মকর্তারা ফাঁদ পাতে। একপর্যায়ে ১২ জুন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ওৎ পাতে দুদক কর্মকর্তারা। ওইদিন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান জেলা পরিষদের সাঁটলিপিকার শহীদুজ্জামানের রুমে প্রবেশ করে এবং পূর্ব উল্লিখিত ৫০ হাজার টাকা প্রদান করতে চাইলে অভিযুক্ত শহীদুজ্জামান বলে, এক লাখ টাকা উৎকোচ না দিলে কাজ হবে না। এ কথা শোনার পর তিনি বিভিন্নস্থান হতে আরও ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে তাকে প্রদান করেন। টাকাটি নিয়ে শহীদুজ্জামান তার প্যান্টের বাম পকেটে রাখেন। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক সংকেত দিয়ে জানানোর সাথে সাথে শহীদুজ্জামানের রুমে প্রবেশ করেন দুদক কর্মকর্তারা এবং তাকে ঘুষের ১ লাখ টাকাসহ আটক করেন।
এ ঘটনায় ওইদিন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার সহকারী পরিচালক মোঃ মহতাব উদ্দিন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২৮ নভেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ শাওন মিয়া শহীদুজ্জামানকে আসামি করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন এবং একই আদালতে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চার্জ গঠন করা হয়।
এ মামলায় খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক আজ (সোমবার, ২৮ জুলাই) আসামি শহীদুজ্জামানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ৭ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণাকালে আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: