হোটেলে নাস্তার বিল চাওয়ায় গুলি, ২ জন আহত

ছবি: আহত অসীম মিয়া
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নাপিতের বাজার এলাকায় নাস্তার বিল ও আগের বাকি টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে গোলাপ মিয়া (৩৬) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পিস্তল দিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হোটেল মালিকের ছেলে অসীম মিয়া (১৭) ও সেলিনা বেগম (৪২) নামে এক নারী কর্মচারী আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের নাপিতের বাজারে এ ঘটনা ঘটে। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা ছুটে গেলে গোলাপ পালিয়ে যায়।
অভিযুক্ত গোলাপ মিয়া সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চক দারিয়া গ্রামের মৃত তয়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িত বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাপিতের বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে অসীম প্রতিদিনের মতো কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ওই দিন সকালে গোলাপ হোটেলে এসে নাস্তা করেন। নাস্তা শেষে বিল না দিয়ে চলে যেতে চাইলে অসীম তার কাছে বিল এবং আগের বাকি টাকা পরিশোধের কথা বলেন।
এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির একপর্যায়ে গোলাপ কোমরে থাকা পিস্তল বের করে অসীমকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি চালান। গুলিবিদ্ধ হয়ে অসীম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করতে আসেন হোটেলের নারী কর্মচারী সেলিনা বেগম। তখন তাকেও লক্ষ্য করে গুলি চালান গোলাপ। পরে আহত দুজনকে স্থানীয়রা গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালে ভর্তি অসীম জানান, নাস্তার টাকা চাইতেই গোলাপ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। কোমরের নিচে ও অণ্ডকোষে গুলির আঘাত পেয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আর কিছু মনে নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মিনু গণমাধ্যমকে বলেন, আহত দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে গুরুতর আহত অসীম হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তবে আহত নারী ভর্তি না হয়ে চলে গেছেন। ভর্তি রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার খবর পেয়ে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং গোলাপকে গ্রেফতারের জন্য সন্দেহভাজন কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায়। এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, গোলাপকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সময় তিনি পিস্তল, বন্দুক নাকি অন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও পদ-পদবি সম্পর্কেও তদন্ত চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকেই গোলাপ বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সর্বদা অস্ত্র হাতে চলাফেরা করতেন। এ কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেত না। গোলাপ দীর্ঘদিন ধরে মাদক, অস্ত্র ব্যবসা ও চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িত।
এলাকাবাসীর দাবি, গোলাপ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং সাবেক এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্মৃতির পলাশবাড়ীর বাসায় থাকতেন। বছর তিনেক আগে টাকা চুরির অভিযোগে তাকে ওই বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। সরকার পতনের পরও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, ঘটনার পর এলাকায় চরম আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত গোলাপকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: