• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

২০ টাকার জন্য জুলাই শহীদের ভ্যানচালক বাবাকে মারধর!

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ২৪ আগস্ট ২০২৫

ফন্ট সাইজ
২০ টাকার জন্য জুলাই শহীদের ভ্যানচালক বাবাকে মারধর!

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আরাফাত মুন্সির বাবা ভ্যানচালক স্বপন মুন্সিকে (৩৬) মারপিট করা হয়েছে। স্বপন মুন্সির মা বেগমের (৭০) একটি আহাজারি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শনিবার বিকেলে আপ করা হয়। ২৫ সেকেন্ডের এ ভিডিও মূহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্বপন মুন্সির মা আমরা ছাওয়াল স্বপন মুন্সি  বলে আহাজারি করছেন  তার বাড়ি বণগাঁয়। তার ছেলে ভ্যান চালায়। তার কাছে ৩০ টাহা পাত ওর কাছে , তারা ওরে মারছে। আমার ছওয়াল শ্যাস হয়ে গেছে। 

শনিবার দুপুর আড়াইটায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বড় বণগ্রামের মুন্সিবাড়ি ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।

আহত স্বপন মুন্সি ছোট বণগ্রামের সাত্তার মুন্সির ছেলে। কিশোর আরাফাত মুন্সি (১৪) জুলাই আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তারপর থেকে আরাফাতের বাবা স্বপন মুন্সি ও মা মায়া আক্তার ছোট বণগ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন।    

শনিবার রাতে এ ঘটনায় স্বপন মুন্সির স্ত্রী মায়া আক্তার বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় আ: ছামাদ শেখ (৫৫) , তার ছেলে জসিম শেখ (২৫), রাসেল শেখ (২২), রাজ শেখ (১৬) ও ভাই ইছাহাক শেখ (৬০)সহ ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে প্রধান আসামি আ. ছামাদ শেখকে গ্রেফতার করে। তাকে আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে জেলা কারগারে পাঠানো হয়েছে।  

আহত স্বপন মুন্সিকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্বপন মুন্সি অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বড় বণগ্রামের মুন্সিবাড়ি ব্রিজ থেকে ছামাদ ও তার ছেলে কাঠাল নিয়ে আমার ভ্যানে ওঠেন। বণগ্রাম বাজারে এসে নামেন। তারা আমাকে ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে ৩০ টাকা রাখতে বলে। আমার কাছে খুচরা টাকা ছিল না। তাই ২০ টাকা ফেরৎ দিতে পরিনি। শনিবার দুপুরে আমি ভ্যানে যাত্রী নিয়ে মুন্সিবাড়ি ব্রিজের পাশ দিয়ে বাটিকামারী যাচ্ছিলাম। তখন ছামাদ আমার ভ্যানের গতিরোধ করে পাওনা ২০ টাকা চেয়ে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাচ করে। বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ছামাদ ও তার ৩ ছেলে সহ ৫/৬ জন আমাকে বেদম মারপিট করে। এক পর্যায়ে তারা ইট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। স্থানীয়রা আমাকে ভ্যান সহ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

স্বপন মুন্সির বৃদ্ধ মা বেগম (৭০) বলেন, আমার ছালরে অনেক মারছে। সে মইরে যাত। তার অবস্থা খারাপ। আমি এডার বিচার চাই।

মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মর্তা ডা. রায়হান ইসলাম শোভন বলেন, আহত স্বপন মুন্সির শরীরে ২/৩ জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কোনটাই গুরুতর নয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুকসুদপুর থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলা দায়েরের পর প্রধান আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ছামাদকে আদালতের মাধ্যমে রোববার গোপালগঞ্জ জেলা কারগারে পাঠানো হয়েছে ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, শনিবার মুন্সি বাড়ি ব্রিজের কাছে স্বপনকে পেয়ে পাওনা ২০ টাকা চান ছামাদ। এ নিয়ে ২ জনের মধ্যে বিতন্ডার এক পর্যায়ে স্বপন ক্ষিপ্ত হয়ে ছামাদের গলা চেপে ধরেন। পরে ছামাদের ছেলে জসিম শেখ, রাসেল শেখ, রাজ শেখ এগিয়ে আনে। এ সময় তাদের মধ্যে মারমারি হয়।  
    
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কিশোর আরাফাত মুন্সী (১৪) নিহত হন। তিনি আশুলিয়ার বার্ড স্কুল এ্যান্ড কলেজের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা স্বপন মুন্সী পেশায় রিক্সা চালক এবং মা মায়া আক্তার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আরাফাত বাবা-মায়ের সঙ্গে আশুলিয়ায় বসবাস করত। আরাফাত মুন্সীর মরদেহ ছোটবণগ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। তারপর থেকে আরাফাতের মা-বাবা গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করছেন।  
আরাফাতকে ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সরকার প্রকাশিত গেজেটে তার ক্রমিক নম্বর—৭৫।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: