চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮০টি পানের দাম ৫ টাকা, হতাশ চাষীরা
হিমশিম খাচ্ছেন সংসার পরিচালনায়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রিত পানের দাম খুব কম হওয়ায় পান চাষীদের মাথায় হাত। আর এতে হতাশ হয়েছেন অনেক পান চাষী। বর্তমান উর্দ্ধগতির বাজারে সংসার পরিচালনাতে তারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে এক খিলি পানের দামে এক পোণ পান বিক্রিকে চিহ্নিত করেছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন হাটে এক পোণ পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ টাকায়, যা এক খিলি পানের দামের সমান। বিগত ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পানের দামে এমন দরপতন কখনো হয়নি বলে জানান চাষীরা।
তারা বলছেন, এবার টানা চার-পাঁচ মাস বৃষ্টিতে পান উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাজারে চাহিদা কম। এতে কমে গেছে পানের দাম। আর দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ওঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সেই সাথে হাট-বাজারে পাইকারদের মর্জির ওপর পানের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পান চাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের যাদুপুর পানের হাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র এই পানের হাটে পানের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন পান ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা। যাদুপুর গ্রামে প্রতিদিন সকালে বসে এই পানের হাট। বছরে দুই ঈদের দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মাত্র ২ ঘণ্টা এই হাটে চলে পান বেচাকেনা। কিন্তু হঠাৎ পানের দাম কমে যাওয়ায় ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকা চাষিরা হয়েছেন হতাশ।
জানা যায়, শহরের গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর বাঁকে পশ্চিম পাড়ের শিমুলতলা ও যাদুপুর গ্রামে ছোট বড় মিলিয়ে দুই শতাধিক পানের বরজ রয়েছে। এখানে পান চাষির সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। মূলত: এই পানের বরজ ও চাষিদের ঘিরেই এখানে পানের হাট বসে। আর প্রতিদিন সকালে বসা এই হাটে পান কিনতে আসেন জেলার বিভিন্ন উপজেলার ও আশপাশের পাইকাররা। দুই ঘণ্টার জমজমাট কেনাবেচা শেষে পাইকাররা পান নিয়ে বিভিন্ন খুচরা বাজারে চলে যান।
যাদুপুর হাটে পান বিক্রি করতে আসা চাষিরা বলেন, যেখানে বাজারে এক খিলি পানের দাম ৫ টাকা, সেখানে পানের এই হাটে এক পোণ পান অর্থাৎ ৮০টা পানের দাম ৫ টাকা। এভাবে দাম কমে গেলে আমরা পান বিক্রি করে সংসার কিভাবে চালাবো তা ভাববার বিষয়।
গত ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পানের দামের এমন দরপতন কখনো হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করে পান বিক্রেতারা বলেন, গত বছর বড় পান ২ শত টাকা, মাঝারি পান ১ শত ৬০ টাকা এবং রাশি পান মানে ছোট পান ২৫ থেকে ৩০ টাকা পোণ বিক্রি করেছি। কিন্তু গত দুই তিন মাস থেকে পানের দাম এতোটাই কমে গেছে যে এ বছরে রাশি পান পাইকাররা ঠিক মতো নিতেই চাইছে না। বরং পানের দাম এখন পাইকারদের মর্জির ওপর হয়। পাইকারকে পোণ প্রতি ৭ শত টাকার দামের পান মাত্র ৬০ টাকায় দিতে হচ্ছে। এতে পানের বরজের খরচের সাথে সাথে নিজের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইয়াছিন আলী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম প্রধান এলাকা। এই জেলায় স্বল্প পরিসরে পান চাষ হয়। সাধারণত বর্ষাকালে গুল্ম জাতীয় গাছে পান পাতা ধরে বেশি। আর গ্রীষ্মকালে খরার সময় ধরে কম। এবার গ্রীষ্মের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্রের মাঝামাঝিতেও ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর তাই ৪-৫ মাসে এবার উৎপাদন বাড়লেও বাজারে চাহিদা কম, দাম কম। এতে পান চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে জেলার বাইরে যেখানে দাম ভালো সেখানে পান বাজারজাত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: