’বাজেট দিন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তিস্তাপাড়ের মানুষকে রক্ষা করুন’
‘তিস্তা বাঁচাও, ভাঙন ঠেকাও, মানুষ বাঁচাও, রংপুর বিভাগের বৈষম্য দুর কর’- এই শ্লোগানে ‘তিস্তা কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে আজ শনিবার (১৪ মে) দিনব্যাপী লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ে তিস্তা ডিগ্রী কলেজ মাঠে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
কনভেনশনে পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ তিস্তাপাড়ে ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি করেন, ‘বাজেট দিন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তিস্তাপাড়ের মানুষকে রক্ষা করুন।’ কনভেনশনে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার ১৩টি উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী প্রায় ৩৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
’তিস্তা কনভেনশন’-এ ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো
১. তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার বিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ,
২. তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ-মাখাগুলোর সঙ্গে নদীর পূর্বের সংযোগ স্থাপন ও নৌ চলাচল পুনরায় চালু,
৩. ভূমিদস্যুদের হাত থেকে অবৈধভাবে দখলকৃত তিস্তাসহ তিস্তার শাখা-প্রশাখা দখলমুক্ত করা। নদীর বুকে ও তীরে গড়ে উঠা সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ,
৪. তিস্তা ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের স্বার্থসংরক্ষণ। নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীন, গৃহহীন ও মৎস্যজীবীসহ নদীভাঙনে উদ্বাস্তু মানুষের পুনর্বাসন,
৫. তিস্তা মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় ‘কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা’, ও
৬. মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তাপাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
’তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, ‘তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্যোগ ও দুর্দশা। উজান থেকে পানি আসলে তিস্তাপাড়ে দেখা দেয় বন্যা। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। তিস্তাপাড়ে সারাবছরই ভাঙন থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদী কোথাও এক কিলোমিটার, কোথাও তিন কিলোমিটার আবার কোথাও কোথাও ৮-১০ কিলোমিটার প্রশস্ত। নদীটি খনন করে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে প্রবাহিত না করায় এমনটি হয়েছে।
শফিয়ার রহমান আর বলেন, ‘তিস্তা নদীই হলো রংপুর অঞ্চলের দুঃখের ও দারিদ্রতার একমাত্র কারণ। প্রতিবছর বন্যা, খরা ও ভাঙনে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার ভূমিহীন নিঃস্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন। ‘সরকার তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ ঘুচাতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন না করলে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হোব।
সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ২০২০ সালে সরকার যখন তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলেছিলো তখন আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু এখন পযর্ন্ত এ পরিকল্পনার কোন বাস্তবরুপ দেখতে পারছি না তাই আমরা আশাহত হয়েছি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পের জন্য সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার কথাও জানিয়েছিলো। সরকার এ টাকা কোথায় পাবে, কিভাবে সংগ্রহ করবে সেটা আমরা জানতে চাই না, আমরা শুধু তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
তিনি বলেন, ‘সরকার যদি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে তাহলে নিশ্চয় নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করতে পারবে। আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য সরকার বাজেট ঘোষণা করবে এটা তিস্তাপাড়ের মানুষের দাবি।
হাক্কাননী বলেন, সরকার প্রয়োজনীয় বাজেট দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষের দু:খ ঘুচবে, রক্ষা পাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার আবাদি জমি, বাড়ি-ঘর ও স্থাপনা। সরকার এ ব্যাপারে বাজেট ঘোষণা না করলে আমরা তিস্তাপাড়ের মানুষকে নিয়ে রাজপথে নেমে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
তিস্তা কনভেনশনে সংগঠণটির লালমনিরহাট জেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক ড. শফিকুল ইসলাম কানুসহ বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ ও তিস্তাপাড়ে বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজন বক্তব্য রাখেন।
বিভি/এসডিআর/এজেড
মন্তব্য করুন: