• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নদে ডুবে গেছে দুই শিশু

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ৩ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নদে ডুবে গেছে দুই শিশু

শুক্রবার গভীর রাতে দালালের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল রহিজ উদ্দিন ও সামিনা খাতুন দম্পতি। তাদের সঙ্গে ছিল দুই শিশু সন্তান পারভিন খাতুন (৮) এবং সাকেবুর হাসান (৪)। এ সময় বিএসএফ ধাওয়া দিলে নদের পানিতে ডুবে যায় দুই শিশু। মা বাবা সাঁতরে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও এ প্রতিবেদন লেখা পযর্ন্ত দুই শিশুর সন্ধান পাওয়া যায় নি।

মা বাঁচাও ,মা বাঁচাও বলে আর্ত চিৎকার দিতে দিতে নীলকমল নদে ডুবে গেছে নিজের দুই শিশু সন্তান-এ দৃশ্যের কথা মনে হতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মা সামিনা খাতুন। তার বুক খালি করা রোদন যেন আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলেছে পশ্চিম শুখাতীর ৬ নং ওয়ার্ডের সরকারটারী গ্রামের।

জানা গেছে, শুক্রবার গভীর রাতে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সীমান্তবতি ধাপরারহাট এলাকার মানব পাচারকারী জায়দুল ও গেদার মাধ্যমে রহিজ উদ্দিন ও সামিনা খাতুন দুই সন্তানসহ ভারত থেকে দেশে ফিরছিলেন। তারা ভারতের হরিয়ানা-রাজস্থান সীমান্তের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ভাটায় কাজ করতেন।

ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে ফিরছিল। মানব পাচারকারীরা তাদের নীলকমল নদের তীরে পানিতে দাঁড় করিয়ে রাখে। এ সময় টহলে থাকা ভারতীয় বিএসএফ নদের পানিতে শব্দ শুনতে পেয়ে উচ্চস্বরে বাঁশি বাজায়। ভয় পেয়ে মা সামিনা বেগম গভীর পানিতে যেতে থাকলে খরস্রোতা নদে ডুবে যায় শিশু সন্তান পারভিন ও সাকেবুর। এ সময় বাবা রহিজ ও মা সামিনা চিৎকার শুরু করলে এপারের নাম না জানা মানব পাচারকারী তিনজন তাদের গালিগালাজ করতে থাকে। তাদের দ্রুত বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

নিখোঁজ  শিশুর দাদা জিয়া উদ্দিন জানান, প্রায় ১৬ বছরে আগে অভাবের তাড়নায়  অন্যদের সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করার জন্য দিল্লীতে যান রহিজ। ২০০৫ সালে ভারতের দিনহাটা থানার নয়ারহাট এলাকার সাজেদুল হকের মেয়ের সঙ্গে রহিজ উদ্দিনের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে তাদের কোলে জন্ম নেয় পারভিন ও সাকেবুল। ইদুল আযহা পালন করার জন্য ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে অবৈধ পথে বাড়ি ফেরার সময় ঘটে গেল এ নির্মম ঘটনা।

রহিজ উদ্দিনের বাড়ী নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম শুকাতী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত একাব্বর আলী । অবুঝ শিশুদেরকে হারিয়ে শোকাহত গোটা এলাকা। শনিবার বিকালে  নিখোঁজদের বাড়িতে গেলে হারানো শিশুদেরকে ফেরত চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রহিজ উদ্দিন ।

রহিজ উদ্দিন জানান, তার দুই সন্তান বাংলাদেশ দেখেনি। সেজন্য ঈদ করার জন্য প্রথমবার বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য ভারতের দালালদের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়েছে। তারা সীমান্তে কোনো এক বাড়িতে নিয়ে রাখে রাতে । সেখানে আরও ২০/২৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ছিল। গভীর  রাতে ৯৪৩ নং মেইন পিলারের পাশে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে পার করার চেষ্টা করেন। তারা কাটাতার পার করে  নদী পথে নিয়ে আসেন । সে জন্য নদীর তীরে তাদের রাখে। এ সময় ভারতের শেউটি ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর তাদের ধাওয়া করে। এ সময় দালালরা তড়িঘড়ি করে নদী পার হওয়ার জন্য বলে। তিনি জিনিসপত্র নিয়ে নদীর মাঝামাঝি চলে যান। এ সময় তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে নামেন। কিন্তু তারা কেউ সাঁতার জানে না। স্রোতের টানে রাতের অন্ধাকারে স্ত্রীর হাত থেকে দুই সন্তান নিখোঁজ হয়। এরপর পানিতে ডুবে অনেক খুঁজেও শিশুদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

শনিবার রাত ৮ টায় লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন জানান, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে দুইটি শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে খবর পেয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিএসএফকে জানানো হয়েছে।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: