• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ভোলায় ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয় হলেও বিদ্যুতের আলো জ্বলে না ৭ মাস

ফয়সল বিন ইশলাম নয়ন

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ভোলায় ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয় হলেও বিদ্যুতের আলো জ্বলে না ৭ মাস

শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি যৌথ প্রকল্পে গত বছরের জুনে ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার ১৯টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলকে আনা হয় বিদ্যুতায়নের আওতায়। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৮টি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে ব্যয় হয় ৩৬৭ কোটি টাকা। কিন্তু ১২ দিনের মাথায় সমস্যা দেখা দেয় একটি ক্যাবলে। বিদ্যুতের আগমনে একটু আশার আলো ফুটলেও ফের অন্ধকারে ডুবে যায় ভোলার ৩ ইউনিয়নের মানুষ। গত সাত মাস ধরে বিদ্যুৎহীন মেঘনা মধ্যবর্তী ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার মাঝের চর, মদনপুর ও মেদুয়া ইউনিয়ন।

দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় হাজারো মানুষ। কবে নাগাদ মিলবে বিদ্যুৎ তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা আর বন্ধের উপক্রম বিভিন্ন ব্যাংক-এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে ওঠা নতুন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির তথ্য মতে, ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৭২ কিলোমিটার এলাকার ৭৩টি গ্রামকে দুটি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়। এ জন্য ৮টি সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ৩৪৪৫০টি গ্রাহক এই সুবিধার আওতায় এসেছে। এর মধ্যে ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ৭ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে লক্ষ্যপূরণের অংশ হিসেবে তড়িঘড়ি করে গত বছরের জুনে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় ৩টি ইউনিয়নে। কিন্তু সংযোগের ১২ দিন পরেই সাবমেরিন ক্যাবলে সমস্যা দেখা দেয়। ৩টি ক্যাবলের ১টিতে সমস্যা দেখা দেয় গত বছরের ১২ জুন। এভাবে পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয় গত বছরের ২৬ জুন। 

মদনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সকিনা বিবি। একটু শান্তির আশায় অন্যদের মতো ফ্যান, লাইট ও ফ্রিজ ক্রয় করেছেন বিদ্যুৎ আসার আনন্দে। কিছুদিন ভালোই চলছিল সব। কিন্তু গত বছরের ২৬ জুন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অন্ধকারে আছেন সকিনার মতো চরাঞ্চলের হাজারো পরিবার। 

সকিনার ভাষ্য মতে, ‘আগেই ভালো ছিলাম। যেমন ভাবেই হোক সোলার কিংবা তেল দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে চলেছে জীবন। সবকিছুরই একটা ধারাবাহিকতা ছিল। বিদ্যুৎ দিতে পারবে না, দীর্যদিন বন্ধ থাকবে; তাহলে দেওয়ারই দরকার কি ছিল?’ 

রাগে-দুঃখে বৃদ্ধা বলেন, ‘টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ যা আছে সব কিনেছি সমিতির কাছ থেকে লোন দিয়ে। বিদ্যুৎ না পেলে এখন মেঘনায় ফেলে দেওয়া ছাড়া কি করব এসব দিয়ে?’ গত ৮ মাস ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্ষোভের শেষ নেই তার মতো এমন হাজারো বাসিন্দার।  

থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন। এলাকায় বিদ্যুৎ আসার খবরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন নতুন করে বাঁচার। তা থমকে আছে গত ৭ মাস ধরে। বিদ্যুতের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পাটোয়ারী বাজারে। এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা দিলেও বিদ্যুৎ না থাকায় দোকান রয়েছে বন্ধ। একই অবস্থা ওই বাজারসহ আশপাশের অন্যসব বাজার ব্যবসায়ীদেরও। একই ধরনের ক্ষোভ রয়েছে গ্রাহকদেরও। 

ভোলার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলতাফ হোসেন জানান, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৩টি ইউনিয়নকে পুনরায় বিদ্যুতায়নে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এ জন্য ২ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে। 

এছাড়া জাহাজের নোঙর করায় সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই এলাকাকে ডেঞ্জার জোন ঘোষণা করে ক্যাবল পুনঃস্থাপন অথবা নতুন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে। এ জন্য কাজ চলছে। বিআইডব্লিউটিসির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি একটা উপায় বের করা সম্ভব হবে। 

তিনি আরও বলেন, ক্যাবল পুনঃস্থাপন সম্ভব না হলে সোলার গ্রিড করে হলেও বিদ্যুতায়ন করা হবে। তবে এ জন্য ২০২৩ সাল পুরো অপেক্ষা করতে হবে।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: