রাজশাহীর ডাবলুর ভাইরাল ভিডিও ইস্যু, অভিযোগ যাচ্ছে কেন্দ্রে

ফাইল ছবি
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বহুল বিতর্কিত অশ্লীল ভিডিও ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কর্মী থেকে দ্রুত বড় নেতা বনে যাওয়া ডাবলু সরকার দলীয়ভাবে কোনঠাসা থাকার পর দুই একদিনের মধ্যে রাজশাহী আওয়ামী লীগ থেকে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রে অভিযোগ উত্থাপন করা হবে বলেও সূত্র দাবী করছে।
এদিকে অনেকটা ঝড়ের গতিতে রাজশাহীর রাজনীতিতে উত্থান হয় ডাবলু সরকারের। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ মার্চ অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।
ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে ছোট করে রাজনৈতিক জীবনে জড়িয়ে থাকলেও ডাবলু সরকার একসময় ছিলেন বিআরটিসি বাসের টিকিট মাস্টার। বর্তমানে নগরীজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তার জমিজমা, টাওয়ার, মার্কেট, ভবনসহ বিপুল বিত্ত-বৈভব।
সম্প্রতি ডাবলুর অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গভীর শঙ্কায় পড়েছে। ভাব ও গতিতে ডাবলু নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করলেও দলীয় নেতাকর্মীরা ক্রমশ সরে যাচ্ছেন তার চারপাশ থেকে। অনেকটা একা হয়ে পড়ছেন তিনি।
জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ডাবলুর একটি অশ্লীল ও আপত্তিকর ভিডিও। এটি এডিট করা ও পরিকল্পিত দাবি করে ডাবলু সরকার ইতোমধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থেমে নেই। রাজনৈতিক বিরোধ সৃষ্টির আশঙ্কায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কথা না বললেও সাধারণ মানুষের মুখ বন্ধ করা যায়নি। নগরজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে ডাবলু সরকারের অশ্লীল ও আপত্তিকর ভিডিওর বিষয়টি।
অন্যদিকে, ঘটনার প্রথমদিকে রাজশাহীতে প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন নেতা ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ না খুললেও গেল দুই সপ্তাহ ধরে সচেতন রাজশাহীবাসীর ব্যানারে চলছে আন্দোলন কর্মসূচি।
আন্দোলনকারীদের দাবি, আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলুকে নৈতিক স্খলনের অপরাধে পদ ও দল থেকে অপসারণ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ রাজশাহী বারের আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদের নেতৃত্বে চলছে এই আন্দোলন। নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে প্রতিদিন মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে তারা। এতে অংশ নিচ্ছেন নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মহানগর পুলিশ প্রথমদিকে ডাবলুর বিরুদ্ধে আয়োজিত মানববন্ধনে আপত্তি জানালেও পরে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করছেন।
পরবর্তীতে আরো দুইটি কর্মসূচী পালন করে সচেতন রাজশাহীবাসী ও আওয়ামী পরিবার।
ইতোমধ্যে আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদ বিক্ষোভ আন্দোলনে বলেছেন, "ডাবলু সরকার মহানগর আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা। এই নেতার যে ভিডিও ফাঁস হয়েছে তা খুবই আপত্তিকর। ভিডিওটি যে নকল নয় সেটা ডাবলু সরকার প্রমাণ করতে পারেননি। আমরা দাবি করছি ভিডিওটি যদি প্রকৃত হয়; তাহলে ডাবলুর বিরুদ্ধে আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা ভিডিওতে যা দেখছি তা সঠিক হলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে তার থাকার কোনো অধিকার নেই। সচেতন রাজশাহীবাসী তার অপসারণ দাবি করছেন। আগামী ২২ মার্চ তার অপসারণ দাবিতে নগরীর বাটার মোড়ে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ হবে।"
ডাবলুর কারণে রাজশাহীতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও দাবি করেন আবু রায়হান মাসুদ। তিনি বলেন, ডাবলু সরকারের ওপর দল সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে জনমনে বিরুপ প্রভাব পড়বে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি সম্প্রতি রাজশাহীর মাটিতে ৫ বছর পর এসে জনমানুষকে জাগিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা একজন ব্যক্তির কারণে নষ্ট হতে পারে না। কাজেই কেন্দ্র সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।
এদিকে ভিডিও ফাঁস হওয়া ও তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর ডাবলু সরকার দিন দিন সঙ্গীহীন হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন কাজ ও তদবির উপলক্ষ্যে শত শত নেতাকর্মী রাতদিন ডাবলুকে ঘিরে রাখতেন। কিন্তু এখন ছোট হয়ে আসছে ডাবলুর রাজনৈতিক সীমানা। দলের অতি ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরাও এখন ডাবলু সরকারকে এড়িয়ে চলছেন। অন্যদিকে প্রশাসনের লোকেরাও ডাবলু সরকারকে এড়িয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন কৌশলে। তবে ডাবলু সরকার এখনো দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাবলু সরকার মিডিয়াতে কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাতেই সত্য-মিথ্যা পরিষ্কার হবে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: