সমুদ্র দখল করে ভাড়া তুলে খাচ্ছেন নিঝুম দ্বীপের নেতারা (ভিডিও)
বন, খাল, নদী দখলের পর এবার পাওয়া গেল অভিনব কায়দায় সমুদ্র দখলের খবর। নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রে এই দখলদারিত্ব কায়েম করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের দখলকৃত স্থানে মাছ ধরতে হলে মোটা অংকের ভাড়া দিতে হয় জেলেদের। তবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা পালালেও এই দখলদারিত্ব হস্তান্তর করে গেছেন অন্যদের হাতে।
নিঝুম দ্বীপের তিনপাশে বঙ্গোপসাগর আর এক পাশে মেঘনা নদী। দ্বীপটিকে ঘিরে এত বিশাল জলাভূমি থাকার পরও মাছ ধরার জায়গা না পেয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছেন জেলে আব্দুল মান্নান। কিন্তু কেন? জানতে চাইলে তিনি বাংলাভিশনকে বলেন, সমুদ্রের মাছ ধরার জন্য খুঁটি গাড়ার (ফার) জায়গা পাচ্ছি না। সব জায়গা প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে বিক্রি করেছে বা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে দিয়েছে। মোটরসাইকেল চালক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী সবার হার (ফার) আছে শুধু প্রকৃত জেলেদেরই নাই। আমি নৌকা নিয়ে গিয়ে ৩০ হাজার টাকার তেল ফুরাইছি কিন্তু মাছ ধরার কোনো জায়গা খুঁজে পাইনি।
শুধু আব্দুল মান্নানই নয়, নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকার নদীর পাড়ে গিয়ে অসংখ্য জেলের এমন হতাশ অভিব্যক্তি পাওয়া যায়। যদিও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হন না কেউই। কারণ বললেই রয়েছে জীবনের ঝুঁকি।
বঙ্গোপসাগরে গজিয়ে ওঠা নিঝুম দ্বীপের মোট জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মৎস্যজীবী। এই দ্বীপের গোড়পত্তনের সঙ্গেও রয়েছে মৎস্যজীবীদের সম্পৃক্ততা। অথচ চারপাশে জলাভূমি থাকার পরও এখানে বেকার জীবন কাটছে জেলেদের। কারণ এখানকার সমুদ্রও দখল করেছেন স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। সমুদ্রে মাছ ধরতে হলে ওইসব প্রভাবশালীদের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিতে হয় জেলেদেরকে। মোটা অংকের ওই ভাড়া দিতে না পারলে সমুদ্রে নামা বারণ, তাই টাকা দিতে না পেরে বেকার সময় কাটছে অনেক জেলের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন বিভাগের মতে নিঝুম দ্বীপ একটি জাতীয় উদ্যান হলেও ২৫ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস থাকায় এটিকে ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার। বনভূমি ও ইউনিয়ন বিতর্কে এখানকার অধিকাংশ জনগণেরই নেই ভূমি অধিকার, নেই ব্যক্তিগত ভূমিও। একইসঙ্গে এই দ্বীপটিকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ও দ্বীপঘেরা সমুদ্র অঞ্চলকে মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া (এমপিএ) ঘোষণা করেছে সরকার। এই আইনকে কাজে লাগিয়েই প্রভাবশালীরা দ্বীপবাসীকে শোষণ করছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
তারা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৎকালীন সরকার দলীয় নেতারা এই পদ্ধতি চালু করলেও ক্ষমতার পালাবদলে এখন ভাড়া তুলছেন কয়েকজন বিএনপি নেতা। এদের কাছেই জিম্মি হয়ে আছে পুরো নিঝুম দ্বীপের জেলেরা।
বিষয়টি নিয়ে অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে হাতিয়ার সন্তান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলছেন, মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া আইনসহ বিভিন্ন আইন ও বিধিকে কাজে লাগিয়েই এভাবে অসহায় মানুষদের জিম্মি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। যার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসনের লোকজনও।
তিনি বলেন, একজন জেলের মাছ ধরার জায়গা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এমপি মোহাম্মদ আলীর লোকজন দখল করে নেয়। পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর সে তার জায়গায় মাছ ধরতে যেতে চাইলে বর্তমান নেতারা বাধা দেয়। এ বিষয়টি আমি ডিসি অফিসে জানিয়ে সমাধান চেয়েছিলাম। পরে দেখি সেই লোককে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ তিনি একদমই নিরীহ লোক। হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপে এমন অনেক নৈরাজ্য চলে যা নিয়ে আমি নিজেও কথা বলতে পারি না। সারাদেশকে বৈষম্যমুক্ত করতে চেয়েছিলাম অথচ নিজের এলাকাকেই ঠিক করতে পারলাম না। এটা আমার আফসোস।
তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলন, আমি আপনার মাধ্যমেই প্রথম শুনলাম। এর আগে এমন অভিযোগ কেউ আমার কাছে দেয়নি। আপনি যেহেতু জানিয়েছেন আমি কোস্টগার্ডকে দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: