• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে অভিযোগের পাহাড়, ভারপ্রাপ্ত এমডি নিয়েও বিতর্ক

প্রকাশিত: ২১:২২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২১:২৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে অভিযোগের পাহাড়, ভারপ্রাপ্ত এমডি নিয়েও বিতর্ক

ভারপ্রাপ্ত এমডি নাজমুস সায়াদাত ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের লোগো

অনিয়ম, দুর্নীতি আর সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র। এস আলম গ্রুপকে দেয়া ঋণের তথ্য গোপন থেকে শুরু করে বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়া ব্যাংকে নিয়োগ দেয়ার অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক-এসআইবিএল। নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ এক নোটিশে ৫৭৯ জন কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত দিলেও এখনো শতভাগ এস আলম মুক্ত হতে পারেনি ব্যাংকটি। 

বিতর্কের কারণে আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলেও এখনকার ভারপ্রাপ্ত এমডি নাজমুস সায়াদাতের নিয়োগ নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। ব্যাংকার নিয়োগ নিয়েও সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না এসআইবিএলের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে এ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় দুই হাজার জনই চট্টগ্রামের বিশেষ একটি এলাকার। 

কোনো রাখঢাক না রেখে ২/৩ জন কর্মকর্তা জানান, এসআইবিএলে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রামের পটিয়ার প্রায় দু’ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারিকে নজিরবিহিনভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। যার একটি বড় অংশকে নিয়োগ দেয়া হয় কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা কোনো ইন্টারভিউ ছাড়াই। নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার দূরে থাক কারও কারও ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট যাচাই-বাচাইয়েরও প্রয়োজন মনে করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। 

অদৃশ্য ইশারায় নিয়োগ দেয়া এমন প্রায় ৫৭৯ শিক্ষানবিশ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করা হয় এস আলমের পলায়নের পর। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ২৯ অক্টোবর এক চিঠিতেই বাতিল করা হয় ৫৭৯ কর্মকর্তার নিয়োগ। এ নিয়ে ব্যাংকটির সামনে মাঝেমধ্যেই বিক্ষোভ করেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা। 

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ব্যাংকটিতে দায়িত্ব পালন করা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, চট্টগ্রামের বিশেষ একটি অঞ্চলের যেসব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ডোনেশন নেয়া হয়েছিল। যার সাথে ব্যাংকটির সে সময়কার শীর্ষ কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন। সে সময় যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তাদের একটি বড় অংশ এখনো ব্যাংকটিতে এস আলমের হয়ে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ শুধু নয়, ঋণ বিতরণেও বিস্তর অভিযোগ এসআইবিএল এর। অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের লোন পাইয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে কারও কারও বিরুদ্ধে। সে কারণে ঋণের বিপুল পরিমাণ অর্থ খেলাপি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং তার সমর্থিত ব্যক্তিবর্গকে দেয়া ঋণের প্রায় সকল ঋণই এখন খেলাপি। উল্টো এস আলম প্রভাবিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনে ব্যাংকটির বিশেষ অঞ্চলের কর্মকর্তারা এখনো সহযোগিতা করে আসছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। 

খেলাপি ঋণের তথ্য গোপনেও উস্তাদ এসআইবিএল। ব্যাংকটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময়ে খেলাপি ঋণ গোপন করেছিল সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআইবিএল সাত হাজার ৯২৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গোপন করেছে। এসআইবিএল এর ২০২৩ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ব্যাংকটির উদ্বৃত্তপত্রে দেখানো হয় এক হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে ১৫৩ কোটি টাকা রাখা হলেও আমানতকারী ও অংশীদারদের স্বার্থ রক্ষায় নয় হাজার ২৮১ কোটি টাকা জমা রাখার কথা ছিল। ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা এসআইবিএল কে খেলাপি ঋণ আড়ালের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

ব্যাংকটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকেও অভিযোগের আঙ্গুল। খোদ ব্যাংকটিতে থাকা অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের অভিযোগ, সম্পদ নিরীক্ষার জন্য আগের এমডি মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহকে সরিয়ে দেয়া হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। নতুন এমডি হিসেবে যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বেশকিছু অভিযোগ। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর রাতারাতি ডিএমডি বনে যাওয়া নাজমুস সায়াদাত-ই এখন ব্যাংকটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত এমডি। ব্যাংকটিতে এসইভিপি হিসেবে পুনঃনিয়োগের কিছুদিনের মধ্যে ডিএমডি হয়ে যান তিনি। সেই দায়িত্ব বেশিদিন না যেতেই গেলো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পান তিনি। 

বর্তমান এমডি’র দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও তার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তার সাথে কাজ করা একাধিক ব্যাংকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, নাজমুস সায়াদাত খুবই ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। ২০১৭ সালে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর ২০২০ সালে এসআইবিএল থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। সে সময় তার পদত্যাগ ঘিরেও রয়েছে নানা প্রশ্ন। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে থাকাকালীনও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছিল তদন্ত কমিটি। সে সময় আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ১১টি এবং মতিঝিল শাখার একটি বিনিয়োগ গ্রহীতার হিসাব নিরীক্ষা ও যাচাই করে শাখাটির প্রাক্তন ব্যবস্থাপক তথা এখনকার এসআইবিএল এর ভারপ্রাপ্ত এমডি’র সংশ্লিষ্টতা পায় তদন্ত কমিটি। বিতর্কিত সেই ব্যক্তিই এখন এসআইবিএল এর এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ ২৭/২৮ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের সুবাদে যশ-খ্যাতির পাশাপাশিও অর্থবিত্ত কামানোর অভিযোগও করেছেন তার সময়কার ব্যাংকাররা। 

ব্যাংকটির গ্রাহকসেবা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। শর্ত শিথিলসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের পরও এখনো সকল গ্রাহকদের জমানো অর্থ ফেরত দিতে পারছে না এসআইবিএল। আগের চেয়ে তারল্য বাড়লেও গ্রাহকদের বড় অংকের অর্থ তোলার ইস্যু এলেই কৌশলে তা পিছিয়ে দেন ব্যাংকটির কোনো কোনো শাখা। গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ রয়েছে পুরনো ঢাকার নবাবপুর শাখাসহ বেশক’টি শাখার ব্যাংকারদের বিরুদ্ধেও। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সৎ ও দক্ষ ব্যাংকারদের এসআইবিএলের শীর্ষপদে নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ ব্যাংকারদের। 

বিভি/এসএম/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2