• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একাধিকবার দুদকের তলব, তবুও হাজির হননি আলমগীর কবির ও রায়হান কবির

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
একাধিকবার দুদকের তলব, তবুও হাজির হননি আলমগীর কবির ও রায়হান কবির

আলমগীর কবির(বায়ে) ও রায়হান কবির

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পরশে থেকে যারা জিরো থেকে হিরো হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির। ব্যাংক, শেয়ার বাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালিন আলমগীর কবির ঋণ কেলেঙ্কারি ও শেয়ারবাজারে কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলের পুরো সময়েই তিনি ছিলেন সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এই সময়কালে তিনি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দাপট খাটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম উপেক্ষা করে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে আর্থিক সংকটে ফেলেছেন।

আলমগীর কবির আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালন ও শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন পালনে ব্যাংক থেকে অর্থ ডোনেশন দিতেন। ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা খরচ করে তিনি বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছেন হাসিনা পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে। নিজেকে হাসিনার আস্থাভাজন দাবি করে ২০ বছর দখল করে রেখেছিলেন সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ। আলমগীর কবির নিয়ম বহির্ভুতভাবে তার ছেলে রায়হান কবিরকেও বানিয়েছিলেন সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক।

অভিযোগ আছে, আলমগীর কবির নিজের প্রভাব খাটিয়ে পরিবার-ঘনিষ্ঠ ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, চলতি ঋণের সুদ মওকুফ করেছেন এবং ব্যাংকের সম্পদ ব্যবহারে সরাসরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্প ও ক্রয় কার্যক্রমেও তার একক নিয়ন্ত্রণ ছিল। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, যার বড় অংশ পাচার হয়ে গেছে বিদেশে—কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়। দেশে গুলশান, বসুন্ধরা, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং গাজীপুর ও কাঁচপুরে বিশাল পরিমাণ জমি রয়েছে তার মালিকানায়।

তার ছেলে রায়হান কবির ব্যাংকের পরিচালক থাকাকালে ‘বাপ-বেটা’ মিলে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বে লিজিং এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুল শেয়ার ক্রয় করেন। ব্যাংকের অর্থ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করেন এবং পরিচালকের পাশাপাশি উপদেষ্টা পদও গ্রহণ করেন। এমনকি তার নিজস্ব দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে মোটা অঙ্কের ঋণও অনুমোদন করিয়েছেন।

এদিকে, হাসিনার পতনের পর বেকায়দায় পড়েন আলমগীর কবির ও রায়হান কবির। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক পরিদর্শনে তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার তথ্য উঠে আসায় তারা দেশত্যাগে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক পরিদর্শনে বাংলাদেশ থেকে ১৯৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে রায়য়ান কবিরের বিরুদ্ধে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, পরস্পরের যোগসাজশে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঋণ জালিয়াতি, বিনিয়োগের আড়ালে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর, বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে আলমগীর কবির, তাঁর পুত্র রাইহান কবির এবং পুত্রবধূ নুসরাত নাহারসহ ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তা, ক্রেডিট কমিটি, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ, ট্রেজারি বিভাগ, সিআরএম বিভাগ, সিএফও এবং শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব অনিয়মে সহযোগিতা করেছেন। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের এসব তথ্য উত্থাপন করে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে জানাতে ইতোমধ্যে বর্তমান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।

আলমগীর কবির ও রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান শুরু হওয়ায় তারা পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি। এরই মধ্যে দুদক তাদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করলেও তারা হাজির হননি। বর্তমানে আলমগীর কবির ও তার ছেলে রায়হান কবিরের ব্যবহৃত মোবাইল প্রায়ই বন্ধ পাওয়া যায়। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে একাধিকবার ম্যাসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর মিলেনি।

ইতোমধ্যে আলমগীর কবির ও তার ছেলে রায়হান কবিরের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, বিদেশি নাগরিকত্ব গোপন, অর্থ পাচার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থাকায় গত ৪ আগস্ট তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপপরিচালক আজিজুল হক অভিযোগ তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনগুলো আদালতের কাছে উপস্থাপন করেন দুদক প্রসিকিউটর। পরে তা মঞ্জুর করা হয়।

আবেদনে বলা হয়, আলমগীর কবির ও রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে উক্ত ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা বলেন, আলমগীর কবির ও রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে আদালতের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন অপারেশনস) এর কড়া নির্দেশনা রয়েছে তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে। তাদের কোনো ভাবেই দেশত্যাগ করতে দেওয়া হবে না।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2